সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু করলো বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩ রানে জয় তুলে নিয়েছে টাইগার ক্রিকেটাররা। এ জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
রোববার (২৩ মে) সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস জিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। দলে পক্ষে ওপেনার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের বোলিং তোপে ১১ বল বাকি থাকতেই ২২৪ রানে গুটিয়ে যায় সফররত শ্রীলঙ্কা। বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ১০ ওভার বল করে ৩০ দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শ্রীলঙ্কা শিবিরে করোনার থাবায় প্রথম ওয়ানডে মাঠে গড়ানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়েই নিয়ে শুরু হয় ম্যাচ। টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর লিটন দাসকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন তামিম। তবে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি টাইগারদের।
দ্বিতীয় ওভারেই লিটনকে হারানোর ধাক্কা সইতে হয় বাংলাদেশকে। ৩ বল খেলে শ্রীলঙ্কার পেসার দুসমন্ত চামিরার বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হন লিটন। এরপর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন তামিম। চামিরার করা দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলেন সাকিব।
তামিমের সাথে উইকেটে সেট হতে সাবলীল ঢঙে ব্যাট করছিলেন সাকিব। রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন অধিনায়ক তামিম। এতে ১০ ওভার শেষে স্কোর বোর্ডে ৪০ রান পায় বাংলাদেশ। তবে ১৩তম ওভারে নিজের উইকেটটি বিলিয়ে দেন সাকিব। লঙ্কান স্পিনার দানুস্কা গুনাতিলকাকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং-অনে ক্যাচ দেয়া সাকিব ৩৪ বলে ২টি চারে ১৫ রান করেন। তামিমের সাথে ৬৪ বলে ৩৮ রান যোগ করেন তিনি।
৪৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। দু’জনে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেছিলেন। দলের স্কোরও বাড়ছিলো তামিম-মুশফিকের ব্যাটে। ২২তম ওভারে ২১৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫১তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। ৬৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়ার পরের ওভারেই বিদায়ের ঘণ্টা বাজে তামিমের।
শ্রীলঙ্কার অফ-স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ডেলিভারির লাইন মিস করে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়ে তামিম। নন-স্ট্রাইকে থাকা আম্পায়ারের দেয়া আউটের সিদ্বান্তকে ভুল প্রমাণ করতে রিভিউ নেন তামিম। তবে রিভিউও বাঁচাতে পারেননি তামিমকে।
তামিমের বিদায়ে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। প্রথম বলেই ডি সিলভাকে উইকেট উপহার দেন মিঠুন। প্যাডেল সুইপ করতে দিয়ে লেগ বিফোর হন তিনি। তামিমের মত রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মিঠুন। ফলে পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পাশাপাশি দু’টি রিভিউও হারায় টাইগাররা।
২৩ ওভারে ৯৯ রানের ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই চাপ দূর করতে বড় জুটির প্রয়োজন ছিল। এ অবস্থায় ক্রিজে মুশফিক, সাথে পেয়ে যান বহু ম্যাচে এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সাবধানে খেলতে থাকেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ৪৩তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২শ স্পর্শ করে। আর ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ জুটি ভাঙেন শ্রীলঙ্কার বাঁ-হাতি স্পিনার লক্ষণ সান্দাকান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হওয়া মুশফিক করেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৭ বলে ৮৪ রান। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সাথে ১২২ বলে ১০৯ রান যোগ করেন। জুটিতে মুশফিক ৫৬ বলে ৫৭ ও মাহমুদউল্লাহ ৬৬ বলে ৪৭ রান করেছিলেন।
মুশফিকের আউট হওয়ার পরের ওভারে ৭০ বলে ১৯৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদউল্লাহ। হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার লক্ষ্য ছিল মাহমুদউল্লাহর। তবে সেটি হতে দেননি ডি সিলভা। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহর উইকেট উপড়ে ফেলেন তিনি। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৬ বলে ৫৪ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহ যখন আউট হন তখন বাংলাদেশের রান ২৩০। ইনিংসের বল বাকি ছিল ১৭টি। শেষদিকে আফিফ হোসেনের ২২ বলে ৩টি চারে অপরাজিত ২৭ রান এবং মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের ৯ বলে ২টি চারে অপরাজিত ১৩ রানের সুবাদে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ডি সিলভা ৪৫ রানে ৩ উইকেট নেন।
২৫৮ রানের টার্গেটে ভালো শুরু করেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দানুশকা গুনাতিলকা ও অধিনায়ক কুশল পেরেরা। প্রথম ২৯ বলে ৩০ রান তোলেন তারা। বড় জুটি হওয়ার আভাস দেওয়া গুনাতিলকা ও পেরেরার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে নিজের বলে নিজেই গুনাতিলকার ক্যাচ নেন মিরাজ। ১৯ বলে ৫টি চারে ২১ রান করেন তিনি।
কুশল মেন্ডিসকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন পেরেরা। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই মেন্ডিসের উইকেট তুলে নেন সাকিব। পেরেরার বিদায়ের পর জ্বলে উঠেন মিরাজ। ৮ রানের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। পেরেরা ৩০, ধনঞ্জয় ডি সিলভা ৯ ও আসান বান্দারা ৩ রান করে ফিরেন। ১০২ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনে, ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
এ অবস্থায় উইকেটে গিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন ডি সিলভা। আট নম্বরে নেমে মাত্র ৩১ বলে ১৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন হাসারাঙ্গা। সপ্তম উইকেটে হাসারাঙ্গার সাথে ৪০ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন দাসুন শানাকা। সেখানে তার অবদান ছিল ১৭ বলে ১১ রান। আর বাংলাদেশের পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের প্রথম শিকারের আগে ২৫ বলে ১৪ রান করেন শানাকা।
অষ্টম উইকেটে ইসুরু উদানাকে নিয়ে বড় জুটি গড়ে দলকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ছিল হাসারাঙ্গার। বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার ছিল হাসারাঙ্গার-উদানার। তবে মারমুখী মেজাজে থাকা হাসারাঙ্গাকে ৪৪তম ওভারে থামান সাইফউদ্দিন। ৬০ বলে ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৭৪ রান করেন তিনি। পরের ওভারে উদানাকে ২১ রানে আউট করেন মোস্তাফিজ।
শ্রীলঙ্কার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে দুশমন্থ চামিরাকে ৫ রানে থামিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২২৪ রানে আটকে দেন মোস্তাফিজ। বাংলাদেশের মিরাজ ৪টি ও মোস্তাফিজ ৩টি উইকেট নেন।
ম্যাচ সেরা হয়েছেন ব্যাট হাতে ৮৪ রান করা মুশফিকুর রহিম। এছাড়া মোস্ট ভ্যালুয়েবল খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছে বল হাতে ৪ উইকেট শিকার করা মেহেদী হাসান মিরাজ।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]