ঘুরে ফিরে আবার সেই একি পথে হাঁটা। ৪ জন নতুনকে বাদ দিয়ে আবার পুরণোদের ফিরিয়ে আনা। নবীনদের বাদ দিয়ে শ্রীলঙ্কার তিন জাতি টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফিতে আবার ঘুরে ফিরে সেই প্রতিষ্ঠিত ও পরিণত পারফরমারদের উপরই আস্থা।
সবার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, সত্যিই তো। সাকিব ও তামিম ইকবালের মত শীর্ষ তারকাদের বিকল্প হিসেবে অভিজ্ঞ পারফরমারদের না নিয়ে নতুনদের নেয়ার দরকার কি ছিল ?
হ্যাঁ, এটা নির্জলা সত্য যে- কেউই তেমন ফর্মে ছিলেন না। তারপরও প্রতিষ্ঠিত, পুরনো, প্রমাণিত আর অভিজ্ঞ পারফরমার বলে কথা। যে কোন দল বা শিবির খুব বেশি বিপাকে না পড়লে সচরাচর নতুনদের ওপর আস্থা রাখে না। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কেন যেন হঠাৎ করেই সেই সনাতন পথ থেকে সরে আসা।
তামিম ইকবাল আর সাকিব আল হাসানের বিকল্প হিসেবে ইমরুল কায়েস, নাসির হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজের মত পরিচিত মুখ বাদ দিয়ে হঠাৎ এক ঝাঁক নতুনের দিকে ঝুঁকে পড়া। বাঁহাতি ড্যাশিং ওপেনার তামিমের বদলে জাকির হাসান আর ‘টু ইন ওয়ান’ সাকিবের বিকল্প ভেবে নেয়া হলো আফিফ হোসেন ধ্রুকে।
আফিফ ব্যাট করেন বাঁহাতে। আর বোলিং করেন ডান হাতে অফব্রেক। একদম অনভিজ্ঞ । শ্রীলঙ্কার মত প্রতিষ্ঠিত দলের সাথে খেলার জন্য যতটা পরিপক্কতা দরকার, তা হয়নি। তারপরও বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিবের বিকল্প হিসেবে আফিফের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে তত বেশি প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ, তরুণ আফিফ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্ব যুব ক্রিকেটে ব্যাট ও বল হাতে নজর কাড়া নৈপূণ্য দেখিয়েই দলে এসেছিলেন। ভাবা হচ্ছিলো, অলরাউন্ডার সাকিবের অভাবটা কিছুটা হলেও পূরন করতে পারবেন এ যুবা।
কিন্তু জাকিরের অন্তর্ভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রথম কথা হলো, হাত খুলে খেলতে পারলেও জাকির মূলতঃ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ঘরের ক্রিকেটেও ওপেন করেন না। তাকে দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইনিংসের সূচনা করানো তাই সমালোচনার খোরাক হয়েছিল। একই ভাবে অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বদলে প্রায় একই ক্যাটাগরির নাসিরকে বাইরে রেখে নাঈম ও মেহেদিকে নেয়ার যৌক্তিকতাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বলার অপেক্ষা রাখেনা, এই চার তরুণের একজনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। চরম ব্যর্থ হয়েছেন। তবে একটা কথাও আছে। তাহলো জাকির, আফিফ, নাঈম ও মেহেদির কেউ দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। আফিফ ও জাকির প্রথম ম্যাচের পরই বাদ পড়েন। আর মেহেদিকে শেষ ম্যাচে নেয়া হয়। আরেক অফস্পিনার নাঈম তো কোনো ম্যাচ খেলারই সুযোগ পাননি।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য তিন জাতি আসরে এই চার জনের কারো জায়গা হয়নি। এই যে তরুণদের হঠাৎ নেয়া, আর এক ম্যাচ পর ছুঁড়ে ফেলে দেয়া- তা নিয়েও রাজ্যের কথা-বার্তা । আজ দল ঘোষণার পর এসব নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও।
নতুনদের নেয়া ও বাদ দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক কথার ভীড়ে প্রধান নির্বাচক দুটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন। যার মাঝে আছে পরিষ্কার ইঙ্গিত। তাহলো জাকির, আফিফ, নাঈম, মেহেদির মত নবীন ক্রিকেটারদের এখন আবার দলের বাইরে ঠেলে দেয়া হলেও তারা সবাই ভবিষ্যত চিন্তা ও পরিকল্পনায় আছেন।
জাকির ও আফিফের বাদ পড়া নিয়ে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ব্যাখ্যা, ‘আমরা তামিমের বিকল্প হিসেবে জাকিরকে নিয়েছিলাম। তামিম ইকবাল ফেরায় জাকির বাদ পড়েছে। আফিফকে নিয়েছিলাম সাকিবের বদলে। যেহেতু সাকিব ফিরেছে ,তাই আফিফ নেই।’
আর কারো নাম আলাদা করে উল্লেখ না করলেও দুই অফস্পিনার নাঈম ও মেহেদিকে দলে নেয়ার ব্যাখ্যাটিও আকারে ইঙ্গিতে দিয়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘কিছু খেলোয়াড় বিপিএলে ঘরের মাঠে ভালো খেলেছে। সেই হিসেবে তাদেরকে দেখেছি।’
নান্নুর শেষ কথা শুনে মনে হলো, তারা ২০২০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন। এজন্যই এক ঝাঁক তরুণকে এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়া। পরেও আবার তারা সুযোগ পাবেন, এমন ইঙ্গিত প্রধান নির্বাচকের কথায়, ‘২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আমাদের একটা ভিশন আছে। আমরা তাই ওদেরকে পুলভুক্ত করেছি এবং ওদেরকে টাইম টু টাইম দলের জন্য গড়ে তুলবো।’
জাকির-আফিফরা বাদ পড়ার হতাশা ভুলে আপাতত প্রধান নির্বাচকের এই কথা থেকে প্রেরণা খুঁজে নিতে পারেন।