সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের। স্লগ ওভারে ব্যাটসম্যানরা তাকে বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছে এবং অন্তত ডেথ ওভারে তার পরফরমেন্স দল ও সতীর্থ বোলারদের ওপর প্রভাব ফেলছে মনে করেন হাবিবুল বাশার সুমন।
মোস্তাফিজ নিয়মিত উইকেট পেলেও তার বোলিংয়ে তীক্ষ্মতার অভাব রয়েছে। ফলে রান ছুটে যাচ্ছে। বাশারের মতে মোস্তাফিজের গোপন অস্ত্র ‘কাটার’ ও ‘ইয়র্কার’ আগেই বুঝে যাচ্ছে ব্যাটসম্যানরা। এছাড়া মোস্তাফিজ ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করার মত ভিন্ন কোন চেষ্টাও করছেন না। যা বাংলাদেশ দলের জন্য ‘উদ্বেগের’ কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের হাবিবুল বাশার বলেন, ‘আগে তার (মোস্তাফিজুর) এমন কিছু ইয়র্কার ছিল যা দেখে হকচকিয়ে যেত ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু তার ওই দক্ষতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। তিনি এখনও বেশ ভালোভাবেই স্লোয়ার ব্যবহার করছেন, পেসও বেড়েছে, কিন্তু ইয়র্কার মিস করছেন। ব্যাটসম্যানরা তাকে আগেই পড়ে ফেলছেন, আর এটিই আমার উদ্বেগের কারণ। ব্যাটসম্যানরা আগেই তাকে বেশ ভালোভাবে অনুমান করছে এবং বুঝতে পারছে তিনি এখন কী করতে যাচ্ছেন।’
চলমান বঙ্গবন্ধু বিপিএলে রংপুর রেঞ্জার্সের হয়ে প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে মোস্তাফিজের বোলিং ফিগার ছিল ৪-৩৭-২। তার মধ্যে প্রথম দুই ওভারে ছয় রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। তবে এরপর তাকে দুর্দান্তভাবে পিটিয়েছেন কুমিল্লার অধিনায়ক দাসুন শানাকা।
দাসুন শানাকার ৩১ রানের মধ্যে মোস্তাফিজের শেষ ওভার থেকে চারটি ছক্কাসহ নিয়েছেন ২৫ রান। যা মধ্যে একটি হয়ে যেতে পারে বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ছক্কা। ইনিংসের শেষ ২ ওভার থেকে ৫১ রান সংগ্রহ করে রংপুরের বিপক্ষে নিজের দলকে ১০৫ রানের বিশাল জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন শানাকা।
প্রথম ম্যাচে রংপুরের ওই বড় পরাজয়ের নেপথ্যে বড় ভূমিকা রেখেছে মোস্তাফিজুরের শেষ ওভারটি। যা গোটা দলের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সিমিত ওভার ম্যাচের অন্যতম অস্ত্র ইয়র্কার মারতে এ সময় ব্যর্থ হন মোস্তাফিজ। মূলত ইয়র্কার দিয়েই ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যানদের কাবু করতে হয়।
বাশার বলেন, ‘আমার মনে হয় নিজের বোলিং নিয়ে মোস্তাফিজের নতুন করে ভাবা উচিত। বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে এটিই তার সেরা সময় আমি মনে করছি। কারণ ব্যাটসম্যানরা তাকে সহজেই বুঝে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, একজন বোলারকে যখন ব্যাটসম্যানরা আগেই বুঝে ফেলতে পারে, তখন ঐ বোলারকে ভালো করতে ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে। আমরা যদি গতকালের (বুধবার) ম্যাচের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব প্রথম দুই ওভারে তিনি খুবই ভালো বল করেছে। কিন্তু পরের দুই ওভার বল করার সময় ব্যাটসম্যানরা তাকে আগেই বুঝে ফেলে। ভিন্ন কোন পন্থা বের করতে ব্যর্থ হয়েছে মোস্তাফিজ। সে একই ধারায় বল করে গেছেন আর শানাকা একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
হাবিবুল বাশারের মতে মোস্তাফিজুর যদি এ ধারায় রান দিতে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের জন্য তার উইকেট সংগ্রহের দক্ষতা কোন কাজে আসবে না। তিনি বলেন, ‘তিনি (মোস্তাফিজ) এখনো উইকেট পাচ্ছেন। কোন কোন ম্যাচে ৫ উইকেটও শিকার করছেন। গত এক বছরে তিনিই বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী। তবে সেগুলো বেশ ব্যয়বহুল। বিশেষ করে ডেথ ওভারে।’
হাবিবুল বাশার আরও বলেন, ‘মোস্তাফিজকে বাংলাদেশ দলের একজন স্পেশাল বোলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু তিনি যদি এ ধারায় রান দিতে থাকেন, তাহলে সেটি অন্যদের চাপে ফেলে দেবে। তার কাছ থেকে রান বেশি পাচ্ছে ব্যাটসম্যানরা। যে কারণে উইকেট নেওয়ার পরও দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
সবশেষে বাশার বলেন, ‘আমিও অন্যদের মত বিশ্বাস করতে চাই, মোস্তাফিজ দেশের জন্য একজন স্পেশাল বোলার। কিন্তু এখন আবার তাকে সেটি প্রমাণ করে দেখাতে হবে।’