ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ডাবল-সেঞ্চুরিতে ইন্দোরে সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে ব্যাকফুটে চলে গেছে সফরকারী বাংলাদেশ। আগাওয়ালের ২৪৩ রানের সুবাদে দ্বিতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান করেছে ভারত। ফলে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৩৪৩ রানে এগিয়ে টিম ইন্ডিয়া।
ইন্দোরের হলকার স্টেডিয়ামে প্রথম দিনই বাংলাদেশকে ১৫০ রানে অলআউট করে দেয় ভারত। এরপর নিজেদের ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ১ উইকেটে ৮৬ রান করেছিল টিম ইন্ডিয়া। ওপেনার রোহিত শর্মা ৬ রানে ফিরলেও আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৩৭ ও চেতেশ্বর পূজারা ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন।
দ্বিতীয় দিনের দশম ও ১১তম বলে বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদের বলে পরপর দু’টি বাউন্ডারি মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৩তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পূজারা। হাফ-সেঞ্চুরির পর পূজারাকে থামিয়ে দেন জায়েদ। অফ-স্টাম্প দিয়ে বের হয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুইয়ে চতুর্থ স্লিপে দ্বাদশ খেলোয়াড় সাইফ হাসানকে ক্যাচ দেন পূজারা। ৯টি চারে ৭২ বলে ৫৪ রান করেন পূজারা। আগারওয়ালের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৯১ রান যোগ করেছিলেন পূজারা।
এরপর ক্রিজে আসেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। পূজারাকে ফেরানোর পরের ওভারে কোহলির বিপক্ষে বল করার সুযোগ পান জায়েদ। নিজের প্রথম ডেলিভারিতেই কোহলিকে পরাস্ত করেন জায়েদ। ভারত অধিনায়কের বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি অন-ফিল্ড আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিতে ভুল করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মমিনুল হক। সেই রিভিউতেই আউট হন কোহলি। ফলে ২ বলে শূন্য হাতে সাজঘরে ফিরেন কোহলি।
১১৯ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলির বিদায়ে কিছুটা চাপ অনুভব করে ভারত। কিন্তু ভারতকে সেই চাপ থেকে মুক্ত করেন আগারওয়াল ও আজিঙ্কা রাহানে। বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিয়ে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। প্রথম সেশনে আর কোন উইকেট পড়তে দেননি আগারওয়াল-রাহানে। ফলে ঐ সেশনেই লিড নিয়ে ৩ উইকেটে ১৮৮ রান তুলে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় ভারত।
বিরতি থেকে ফিরে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ১৮৩ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ভারতের এ ডান-হাতি ওপেনার। অপরদিকে ব্যট হাতে বেশ স্বাচ্ছেন্দ্যে ছিলেন রাহানেও। দ্বিতীয় সেশনেও কোন উইকেট হারায়নি ভারত। ফলে ৩ উইকেটে ৩০৩ রান তুলে চা-বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
আবারও বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হন জায়েদ। সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা রাহানেকে নিজের চতুর্থ শিকার বানান জায়েদ। ডিপ পয়েন্টে তাইজুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ৮৬ রানে আউট হওয়া রাহানে ১৭২ বলের ইনিংসে ৯টি চার মারেন। আগারওয়ালের সাথে ১৯০ রানের বড় জুটি দলকে উপহার দেন রাহানে।
রাহানে ফিরে যাওয়ার পর আগারওয়ালকে দারুণ সঙ্গ দেন রবীন্দ্র জাদেজা। যথার্থ সঙ্গ পেয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন আগারওয়াল। শেষ পর্যন্ত ৯৯তম ওভারে বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে ছক্কা মেরে ডাবল-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন আগারওয়াল। গত মাসে নিজ মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের ডাবল-সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা ছিল ছিল তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিরও।
৩০৩ বলে ডাবল-সেঞ্চুরিতে পা দিয়ে নিজের ইনিংস বড় করতে থাকেন আগারওয়াল। প্রথমবারের মত আড়াইশ রানের দিকে ছুটছিলেন তিনি। তবে তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান মিরাজ। সুইপ করে মিড উইকেটে বাংলাদেশের সফল বোলার জায়েদকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আগারওয়াল।
২৮টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৩৩০ বলে ২৪৩ রান করেন আগারওয়াল। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটিই তার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। জাদেজার সাথেও পঞ্চম উইকেটে শতরানের জুটি গড়েন আগারওয়াল, ১২৩ রানের জুটি।
দলীয় ৪৫৪ রানে আগারওয়াল ফিরে যাওয়ার পর দিনের বাকি সময়ে ভারতের হাল ধরেন জাদেজা ও উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হওয়ার ১৯ বল আগে সাহাকে বিদায় দেন বাংলাদেশের আরেক পেসার এবাদত হোসেন। ১১ বলে ১২ রান করা সাহাকে বোল্ড করেন এবাদত।
এরপর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ক্রিজে যান উমেশ যাদব। ব্যাট হাতে স্ট্রাইকে গিয়ে ভয়ঙ্কর রূপ দেখান বোলার উমেশ। বাংলাদেশের দুই পেসার জায়েদ ও এবাদতকে তিনটি ছক্কা মারেন উমেশ। এছাড়াও ১টি চার ছিল তার উইলোতে। জায়েদকে ১টি করে চার-ছক্কা ও এবাদতকে ২টি ছক্কা মারেন উমেশ। শেষ পর্যন্ত জাদেজা-উমেশ অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেন।
জাদেজা ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৬০ রানে ও উমেশ ১০ বলে ২৫ রানে অপরাজিত আছেন। জাদেজা ৭৬ বলের ইনিংসে ৬টি চার ও ২টি ছক্কা হাকান। বাংলাদেশের জায়েদ ১০৮ রানে ৪, এবাদত-মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন।