স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে চলমান তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম টি-২০ ম্যাচে ৪৩ বলে অপরাজিত ৬০ রানে ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। তার ইনিংসের ওপর ভর করেই টি-২০ ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
ভারতের বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ভার্সনে বাংলাদেশ দলের প্রথম জয় নিশ্চিত হওয়ার পর মুশফিক জানান, তিন বছর আগে ব্যাঙ্গালোরের মত ভুল না করার প্রস্তুতি ছিল তার মধ্যে। তিন বছর আগে ব্যাঙ্গালোরের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি।
২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে জয়ের পথে থাকার পরও শেষ মুহূর্তের ভুলে ভারতের কাছে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এ সময় জয়ের জন্য তিন বল থেকে মাত্র ২ রানের প্রয়োজন ছিল টাইগারদের। তবে ক্রিজে থাকা দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ পরপর দুই বলে আউট হয়ে গেলে জয় থেকে বঞ্চিত হয় টাইগাররা।
পরপর দুই উইকেট পতনের পর শেষ বলে মোস্তাফিজুর রহমান অহেতুক দৌঁড়ে গিয়ে রান আউট না হলে ম্যাচটি টাই হতো। তবে ওই ম্যাচ হারের পুরো দায় এসে পড়েছিল দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর ঘারে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচটির ইতি টানতে চেয়েছিলেন। যেখানে এক রান করে নিলেই যথেষ্ঠ ছিল।
শেষ পর্যন্ত সেই ভারতের মাটিতেই তাদের হারিয়ে দুঃখ দূর করলেন বাংলাদেশ দলের সেই দুই ব্যাটসম্যান। ‘ব্যাঙ্গালোরের ভুত’ তাড়িয়ে মুশফিকই ভারতের বিপক্ষে জয় এনে দিলেন টাইগারদের। বাংলাদেশ দলের সাবেক এ অধিনায়ক বলেছেন, ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই তিনি আপন হাতে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, মানুষই ভুল সংশোধন করে। আপনি আপনার ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়ে থাকেন। এটি জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ওই ঘটনার পর আমি টি-২০ ও ওয়ানডে ম্যাচেও দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। যা আমাকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। অতীতের ওই ঘটনার মুখোমুখি হওয়ার কারণে এখন আমরা জানি এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কী করতে হবে।
মুশফিক বলেন, ২০ ওভারের ম্যাচ খেলতে মাঠে নামার আগে আমরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি। কী করতে হবে সেটি সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে নিয়েছিলাম। কয়েক বছর পর আমি আর রিয়াদ মিলেই ম্যাচের সফল সমাপ্তি ঘটিয়েছি। এর অনুভুতি সত্যিই অসাধারণ।
একই কন্ডিশনে যদি অতীতে অন্তত ১০-১৫ ওভার খেলার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে যে কোন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটতে পারে। এর আগেও আমি শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ম্যাচ জিতিয়েছি। তাই সেটিও আমাকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছে - যোগ করেন মুশফিক।
ভারতের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচের জয়ে বাংলাদেশের জয়ে মুশফিকুর রহিম মূল ভূমিকা পালন করলেও অন্য খেলোয়াড়দের ভূমিকাও কম ছিল না। বিশেষ করে তরুণরা দলীয় জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছে। মুশফিকও তাদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য দারুণ মুহূর্ত। এর আগে আমরা কখনো ভারতের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচে জয়লাভ করতে পারিনি। আমরা আমাদের কয়েকজন শীর্ষ খেলোয়াড়দের মিস করছি। তবে তরুণরা যেভাবে একতাবদ্ধ হয়ে এ উইকেটে বল করেছে সেটি অসাধারণ ব্যাপার। বিশেষ করে ভারতের মত দলের বিপক্ষে।
মুশফিক বলেন, এ উইকেটে ব্যাট করা বিশষে করে নতুন বলের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করা সহজ ছিল না। শেষভাগেও ব্যাট করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, কারণ ভারতের বেশ কিছু মানসম্পন্ন স্পিনার রয়েছে। সুতরাং বিষয়টি খুব একটা সহজ ছিল না। তবে ছেলেরা তাদের মেধার পরিচয় দিয়েছে। আমরা চাপমুক্ত হয়ে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছি।
৩৯ রান সংগ্রহ করা সৌম্য সরকারের সঙ্গে নিজের পার্টনারশীপটি ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল জানিয়ে মুশফিক বলেন, ইনিংসের মধ্যভাগে যখন আমি ও সৌম্য ক্রিজে ছিলাম তখন আমি ভেবেই নিয়েছিলাম দুইজনের একজন অন্তত ১৯ ওভার পর্যন্ত টিকে থাকলে পারলে জয় পাওয়া সম্ভব। আমাদের প্রয়োজন ছিল শুধুমাত্র একটি ১৬-২০ রানের ওভার। সেখানে যদি একজন সেট ব্যাটসম্যান থাকে তাহলে সেটি সম্ভব। সুতরাং সেখানে আমার পরিবর্তে সৌম্য থাকলেও এমনটিই ঘটতো।