বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সবধরনের ক্রিকেট থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তবে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির দুর্নীতিবিরোধী তিনটি অভিযোগের বিষয়ে ভুল স্বীকার করায় এক বছর পর মাঠে ফিরতে পারবেন সাকিব।
আইসিসির দুর্নীতি বিষয়ক শুনানিতে বাংলাদেশ দলের টেস্ট ও টি-২০ অধিনায়ক সবগুলো অভিযোগ স্বীকার ও শাস্তি মেনে নিয়েছেন। একই সঙ্গে শিগগিরই আবার ফিরে আসার আশা প্রকাশ করেছেন সাকিব আল হাসান।
এদিকে যেকারণে অর্থাৎ ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা না জানানোর অপরাধে এ শাস্তি পেতে হয়েছে সেই প্রস্তাব এসেছিল ভারতের জুয়াড়িদের কাছ থেকে। সাকিব ওই প্রস্তাবে রাজি না হলেও আইসিসি বা বিসিবিকে জানাননি সাকিব।
এক বা দুইবার প্রস্তাব পেয়েছিলেন তা নয়, ৬ মাসের মধ্যে তিনবার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তিনবারই ভারতের জুয়াড়ি প্রস্তাব দিয়েছিল।
নভেম্বর ২০১৭
আইসিসির দেওয়া তথ্যমতে, দুই বছর আগে (২০১৭) বিপিএল চলার সময় প্রথমবার ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগরওয়াল (জুয়াড়ি হিসেবে কুখ্যাত) সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সে সময় ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব।
আইসিসি বলছে, সেইবার আগরওয়ালকে সাকিবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এই ক্রিকেটারেরই পরিচিত একজন। সেই ‘অজ্ঞাতনামা’ লোককে আগরওয়াল অনুরোধ করেছিলেন ‘বিপিএলের কিছু খেলোয়াড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে’। সাকিবের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বেশ কিছু বার্তা বিনিময় হয়েছিল আগরওয়ালের, সেখানে তিনি দেখা করতেও চেয়েছিলেন সাকিবের সঙ্গে।
জানুয়ারি ২০১৮
শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করছিল বিসিবি। ২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে হারায় বাংলাদেশ, ম্যাচসেরা হন সাকিব। আগরওয়াল সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এরপর বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
বার্তায় তিনি লেখেন, “আমরা কি এখন ‘কাজ’ করব? নাকি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব।” এখানে ‘কাজ’ অর্থে সাকিবের কাছ থেকে ভেতরের কিছু তথ্য চাওয়ার কথা আগরওয়াল চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে আইসিসি।
তবে সাকিব আকসুতে এ বিষয়ে কখনো রিপোর্ট করেননি বা সংশ্লিষ্ট কোন কর্তৃপক্ষকেও জানাননি তিনি।
তারদিন চারদিন পর আগরওয়াল সাকিবকে আরও একটি বার্তা পাঠান। যেটাতে আরেকটু বেশি ইঙ্গিত রয়েছে। বলা হয়, ‘ব্রো, এই সিরিজের জন্য কিছু হবে নাকি?’ এ ঘটনাও সাকিব আকসু বা কাউকে জানাননি।
এপ্রিল ২০১৮
২৬ এপ্রিল, ২০১৮। বিপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ঘরের মাঠে একটা ম্যাচ খেলছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের সাথে। আগরওয়াল ম্যাচের দিন সাকিবকে একটা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। ওই আলাপেই সাকিব বলেছিলেন, আগরওয়ালের সাথে তিনি দেখা করতে চান।
আইসিসির বার্তায় বলা হয়, ‘সে দিন আগরওয়াল সাকিবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কোন একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় সেই ম্যাচে খেলবেন কি না। আবারও ভেতরের কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। আগরওয়াল বিটকয়েন, ডলার অ্যাকাউন্ট নিয়ে কথা বলেছিলেন এবং সাকিবের কাছে ডলার অ্যাকাউন্টের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন।’ ওই আলাপের সময়ই সাকিব বলেছিলেন, ‘প্রথমে’ তার সাথে দেখা করতে চান।
সাকিব পরে আকসুর কাছে স্বীকার করেছেন, সে দিনের আরও বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা তিনি মুছে দিয়েছেন। সাকিবের মনে তখনই একটা চিন্তা দানা বাঁধতে থাকে। কিন্তু তখনও সাকিব কাউকে এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। আইসিসি তাদের বার্তায় বলেছে, ‘তখনই সাকিবের সন্দেহ হয়েছিল আগরওয়াল লোকটা একজন বুকি হতে পারে।’
ওই ঘটনার পর চলতি বছরের (২০১৯) ২৩ জানুয়ারি ও ২৭ আগস্ট সাকিবের সাথে দুইবার দেখা করেছিলেন আকসুর প্রতিনিধিরা। সাকিব তখন আগের সব অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন।
সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর তথ্য গোপন করার অপরাধে সাকিব আল হাসানকে নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে হলো। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ২০২০ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে আবারও ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান।