খেলোয়াড়দের হঠাৎ ধর্মঘট ও বোর্ড কর্মকর্তাদের কঠোর মনোভাবে কার্যত ৩ দনি অচলাবস্থা ছিল দেশের ক্রিকেট। তবে খেলোয়াড়দের ও বোর্ড কর্মকতাদের বৈঠকে সেই অচলাবস্থা কেটেছে। ব্যাট-বল হাতে মাঠেও ফিরেছে টাইগাররা।
ভাতর সফর সামনে রেখে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে টাইগারদের অনুশীলন। টাইগারদের এ অনুশীলনে যোগ দিয়েছে পুরো কোচিং স্টাফ। শুক্রবারই ঢাকায় এসে বিকেলে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরি। উপস্থিত ছিলেন টাইগারদের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো ও ব্যাটিং কোচও।
টাইগারদের সঙ্গে বাংলাদেশে প্রথম দিনের কোচিংয়ে যোগ দিলেও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি। কারণ, অসুস্থতার জন্য ভারত সফরের প্রস্তুতিতে শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন না সাকিব আল হাসান।
ধর্মঘটের পর প্রস্তুতি ক্যাম্পে প্রথম দিন সাকিবের অনুপস্থিতি নিয়ে বিসিবিতেই উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে এক প্রকার গুঞ্জন তৈরি হয়। পরে শেষ দিকে জানা যায়, অন্য কোন কারণ নয়, অসুস্থতার জন্যই সাকিব প্রস্তুতেতে যোগ দেননি।
এদিকে ধর্মঘটের মধ্যে দেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনের সাথে কোম্পানিটির ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিষয়ট আইন সিদ্ধ নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে বোর্ডে সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এমন কি এ বিষয়ে সাকিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দৈনিক কালের কণ্ঠের কাছে একান্ত সাক্ষাৎকারে নাজমুল হাসান পাপন এ তথ্য জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকালে শুধু সাকিবের বিষয়ে নয়, ক্রিকেটার ও বোর্ডের নানা বিষয় নিয়েও তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে গ্রামিণফোনের সাথে সাকিবের চুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, হ্যাঁ। এ চুক্তি কোনোভাবেই করতে পারে না। কেন পারে না, চুক্তিতে সব লেখা আছে। লিখিতভাবে ওদের বলে দেওয়া আছে। রবি আমাদের টাইটেল স্পন্সর হলো। গ্রামীণ বিডই করলো না। না করে এক-দুই কোটি দিয়ে খেলোয়াড়দের নিয়ে ফেললো। এতে শেষ পর্যন্ত কী হলো? তিন বছরে বোর্ডের ৯০ কোটি টাকা লস হলো। খেলোয়াড় লাভবান হলো। কিন্তু বোর্ডের তো ১২টা বেজে গেল।
তিনি বলেন, এটি তো হতে পারে না। তাই লিখিতভাবে ওদের (জাতীয় দলের খেলোযাড়) জানিয়ে রাখা আছে। এমনকি আমার জানা মতে, মন্ত্রণালয় থেকেও ওদের বলা আছে যে না জানিয়ে টেলকোর সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না। আমাদের সঙ্গে চুক্তি তো আছেই। তারপরও আমাদের না জানিয়ে কী করে চুক্তি করে? টাইমিংটা দেখুন। খেলা বন্ধ করে চুক্তি! এগুলো তো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ।
ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বোর্ড প্রধান বলেন, আমরা লিগ্যাল অ্যাকশনে যাচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করবো এখন। সেটি কম্পানির কাছেও দাবি করবো, দাবি করবো খেলোয়াড়ের কাছেও। আমরা কি ছেড়ে দেব নাকি? কালকে (বৃহস্পতিবার) শুনলাম প্রথম। আমি বলে দিয়েছি, গ্রামীণফোনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাও। বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ চাও। বলেছি, চিঠি পাঠাও সাকিবকেও। আমাদের ব্যাখ্যা চাই।
তিনি আরও বলেন, সে (সাকিব) আইন ভঙ্গ করে গেল কেন? এখন সে যদি দেখাতে পারে যে আইন ভঙ্গ করেনি, ওকে তো বলার সুযোগ দিতে হবে। আমাদের কাছে ব্যাপারটিকে মনে হয়েছে, ‘বোর্ডের কোনো নিয়ম-কানুন মানি না’, এ রকম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেবই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু পরে শুনি স্পিন উইকেটে খেলবে। আমি তখন বিদেশে। তাহলে বলুন এ ব্যর্থতার দায় কার? নিজেদের মাঠে আমরা অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে হারিয়েছি। আর কিনা হারলাম আফগানিস্তানের কাছে? আমি হলে আন্দোলন দূরের কথা, লজ্জায় মুখই দেখাতাম না।
মেহেদী হাসান মিরাজের মোবাইল নম্বর ডিলিট করার প্রসঙ্গে পাপন বলেন, একজনেরই করেছিলাম। সত্যি বললে ফোন শুধু মিরাজকেই করেছিলাম। অন্যদের করিনি, কারণ বোর্ডের অন্যরা ওদের ফোন করেই যাচ্ছিল। কিন্তু ওরা ধরছিল না। তাই আমিও আর চেষ্টা করিনি, করেছি শুধু মিরাজকেই। সবার সামনেই ওর ফোন নম্বার ডিলিট করার কথাও বলেছি। তবে এখন আবার ঢুকিয়েও নিয়েছি (হাসি...)।