ত্রিদেশীয় সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে টিকে রইলো শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে প্রথম জয়ের মুখ দেখলো শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সিরিজের ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে টিকে থাকলো চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দল।
এ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানেই থাকলো শ্রীলঙ্কা। তবে রান রেটে এগিয়ে থাকায় লঙ্কানদের সমান ৪ পয়েন্ট নিয়েও টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফিরতি লিগের প্রথম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত টস ভাগ্যে জিতলেন ক্রেমার।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সলোমন মির। ১০ ওভারে ৪৪ রানের জুটি গড়েন তারা। শুরুটা ভালো হলেও খুব দ্রুতই বিপদে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ৪৪ থেকে ৫৬ রানে পৌঁছাতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে তারা। তিনটি উইকেটই নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার মিডিয়াম পেসার থিসারা পেরেরা। দুই ওপেনার মাসাকাদজা ২০, মির ২১ ও তিন নম্বরে নামা ক্রেইগ আরভিন ২ রান করে ফিরেন।
এরপর ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন গেল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় সিকান্দার রাজা। এবার তার ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। ৭৩ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া দায়িত্ব পান সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর ও ম্যালকম ওয়ালার। দায়িত্বটা যথাযথ পালনও করছিলেন তারা।
ধীরে ধীরে দলের স্কোর বড় করছিলেন টেইলর ও ওয়ালার। কিন্তু ২৪ রানে থাকা ওয়ালারকে বিদায় দিয়ে শ্রীলংকাকে দারুণ এক ব্রেক-থ্রু এনে দেন বাঁ-হাতি স্পিনার লক্ষন সান্দাকান। পঞ্চম উইকেটে টেইলরের সাথে ৬৬ রান করেন ওয়ালার।
ওয়ালার ফিরে যাবার পর জিম্বাবুয়ের একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে টিকে ছিলেন টেইলর। জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন টেইলর। ৬৩তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৩তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি টেইলর। ৬টি চারে ৮০ বলে নামের পাশে ৫৮ রান রেখে প্যাভিলিয়নে যান টেইলর।
টেইলরের আউটে লড়াকু সংগ্রহ পাবার পথ বন্ধ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের। তারপরও শেষ দিকে অধিনায়ক ক্রেমারের ৪২ বলে ৩৪ রানের পর ৬ ওভার বাকী থাকতেই ১৯৮ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে পেরেরা ৪টি ও ফার্ন্দান্দো ৩টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৯৯ রানের টার্গেটে দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। নামের পাশে ১৭ রান রেখে ডান-হাতি পেসার তেন্ডাই চাতারার শিকার হন উপুল থারাঙ্গা। এরপর ৭০ রানের জুটিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের দিকেই রাখেন আরেক ওপেনার কুশল পেরেরা ও কুশল মেন্ডিস। ম্যাচের লড়াই থেকে যখন পিছিয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে, এমন সময় দুর্দান্ত এক স্পেলে দলকে খেলায় ফেরান ডান-হাতি পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি। ১৪ রানের ব্যবধানে শ্রীলঙ্কার তিন ব্যাটসম্যানকে শিকার করেন তিনি।
কিছুটা মারমুখী মেজাজে হাফ-সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে ৪৯ রানে থেমে যান পেরেরা। তার ৫৭ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল। পেরেরাকে ফেরানোর কিছুক্ষণ পর মেন্ডিসকেও প্যাভিলিয়নমুখী করেন মুজারাবানি। ৪টি বাউন্ডারিতে ৪৪ বলে ৩৬ রান করেন মেন্ডিস। দলীয় ১০৩ রানে পেরেরা, ১১০ রানে মেন্ডিসকে শিকারের পর ১১৭ রানে নিরোশান ডিকবেলাকে বিদায় দেন মুজারাবানি। ৭ রান করেন ডিকবেলা।
হঠাৎই দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে পঞ্চম উইকেটে দেখেশুনে খেলা শুরু করেন অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল ও আসলে গুনারত্নে। এতে কোন উপকার হয়নি শ্রীলঙ্কার। উল্টো উইকেট পতনের তালিকায় নাম তুলে দলের চাপ আরও বাড়িয়ে দেন গুনারত্নে। ২১ বলে ৯ রান করে ফিরেন গুনারত্নে।
এরপর ৬১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৭ রানের জুটি গড়ে এবারের আসরে দলকে প্রথম জয়ের স্বাদ দেন চান্ডিমাল ও থিসারা পেরেরা। চান্ডিমাল ৩৮ ও পেরেরা ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। জিম্বাবুয়ের মুজারাবানি ৩টি উইকেট নেন।
আগামী ২৩ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিপক্ষে এবারের লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে জিম্বাবুয়ে। আর আগামী ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিপক্ষে লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে : ১৯৮/১০, ৪৪ ওভার (টেইলর ৫৮, ক্রেমার ৩৪, পেরেরা ৪/৩৩)।
শ্রীলঙ্কা : ২০২/৫, ৪৪.৫ ওভার (কুশল পেরেরা ৪৯, থিসারা পেরেরা ৩৯*, মুজারাবানি ৩/৫২)।
ফল : শ্রীলংকা ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : থিসারা পেরেরা(শ্রীলঙ্কা)।