যোগদানের এক বছরের মধ্যেই জাতীয় দলের উন্নয়নের ধারায় বেশ ভূমিকা রেখেছেন টাইগার কোচ স্টিভ রোডস। সময়টা কম হলেও সাম্প্রতিক সময়ের ২৫টি ওয়ানডের মধ্যে ১৫টিতেই জয় পেয়েছে মাস্টার রোডসের দল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে সিরিজেও দেখা মিলেছে সাফল্য।
বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলকে বিধ্বস্ত করে জয় দিয়েই বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক সাফল্যের পর এমন আত্মবিশ্বাসী সূচনা বিশ্বকাপে অনেক দূরের স্বপ্ন দেখতেই পারে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। আর গোটা ক্রিকেট বিশ্বও সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাসও করে। কেননা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে টুর্নামেন্টের বিপজ্জনক দল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঠিক যে সময়টাই আর সব কোচ ছেড়ে যাচ্ছিল ম্যাশ-মুশিদের, সে সময়টাতেই বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে এসেছিলেন রোডস। সেই দুঃসময়ে এসেই হাল ধরেছেন তিনি। এরপর থেকে বাংলাদেশকে খুব কম সময়ের জন্যই হারের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে আরেকটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়েছে। গত বছরই তো ওঠেছে তিন-তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে; ওয়ানডেতে ঘরের মাঠের ত্রিদেশীয় সিরিজ, দুবাই-আবুধাবির এশিয়া কাপ এবং টি-২০ নিদাহাস ট্রফি। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে জিতেছে চ্যাম্পিয়নের মুকুট।
গত জুনের শেষের দিকে যে সময় রোডস বাংলাদেশের হাল ধরেন তখন দলে কিছুটা আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভয়াবহ পরাজয় এবং ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে হার এবং টি-২০ তে আফগানিস্তানের কাছে খারাপ পারফরমেন্স তাদের আত্মবিশ্বাসকে অনেকটাই নড়বড়ে করে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে গত নভেম্বরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-১ য়ে হারিয়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে।
এছাড়া বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গেও বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে রোডসের। এটাকে যথেষ্ট ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে রোডস বাংলাদেশ দলের জন্য আরও কিছু করতে পারেন। বিশেষ করে টেস্ট সিরিজ এবং টি-২০র ক্ষেত্রে। এ বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খুব একটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ।
রোডসের কিছু ইতিবাচক দিকও চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ড্রেসিং রুম বা অন্য ক্ষেত্রে কোথাও তার হস্তক্ষেপ করা উচিত বা কোথায় উচিত নয় তা তিনি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারেন। এটাও একজন কোচের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ দলের প্রধান খেলোয়াড় মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ ‘পঞ্চপান্ডব’র ধারাবাহিকতাই বাংলাদেশকে সাফল্যের মধ্যেই রেখেছে। তবে এ পাঁচজনের বাইরেও অন্যান্য খেলোয়াড়দের ম্যাচ জয়ের জন্য তৈরি করছেন রোডস। এর মধ্যে আছেন সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের মত খেলোয়াড়রা।
টাইগারদের বিষয়ে সম্পতি ক্রিকিইনফোকে রোডস বলেন, ‘প্রধান কোচ হিসেবে প্রশিক্ষণের সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে ক্রিকেটারদের মাঝে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। কিভাবে তারা সিদ্ধান্ত নেবে এবং নিজেরাই শিক্ষা নিয়ে নিজেদেরই তৈরি করবে। আর এ জন্যই তরুণ ক্রিকেটাররা এখন মাঠে ভালো পারফর্ম করছে। তাই সবাই আমাদের দলকে সমীহ করছে।’
পঞ্চপান্ডবের বাইরের যারা আছেন তাদের নিয়ে রোডস বলেন, ‘সৌম্য ভালো ছন্দে রয়েছে। লিটন ভালো ফর্মে আছে, যদিও এখনও খেলার সুযোগ পায়নি। সাব্বির রহমান নিউজিল্যান্ডে সেঞ্চুরি করেছে, মিরাজ শেষ দুই-তিন বছর ভালো বল করছে। মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনও ভালো পারফরমেন্স করছে। তাই বলাই যায় যে, আমাদের দলে পারফরমারদের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ছে।’
ক্রিকেট বিশ্বে বড়-বড় দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই করার সামর্থ্য বাংলাদেশের -এমনটাই মনে করেন টাইগার কোচ স্টিভ রোডস। রোডস বলেন, ‘আপনি যদি এ বিশ্বকাপের প্রতিযোগিতায় সবগুলো দলের দিকে তাকান দেখবেন কিছু বড় দলের বিপক্ষে লড়াই করেছি আমরা। তবে এটা ঠিক যে, সেই দলগুলোর গভীরতা ও মানের দিক থেকে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু ক্রিকেটার আছে যারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে নিজেদের উন্নতির জন্য। আমাদের সেই সক্ষমতাও রয়েছে। সাকিব দুর্দান্ত পারফরমেন্স করছে। আমরা ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সের সেই গভীরতায় পৌঁছানো চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আপনি বলতে পারেন তাদের অভিজ্ঞতা অনেক কম।’
চলমান বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর নিউজিল্যান্ডের সাথে দারুণ লড়াই করেও হেরে যায় টাইগাররা। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ের ছিটেফটাও দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর বৃষ্টির কারণে শ্রীলঙঙ্কার সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে রোডসের শিষ্যরা।