বুধবার (১২ জুন) টনটনে বিশ্বকাপের ১৭তম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান। এই ম্যাচের মাধ্যমে পুরনো মাঠে নতুন করে ফিরে আসাটা স্মরণীয় করে রাখতে চান পাকিস্তানী পেসার মোহাম্মদ আমির। দক্ষিণাঞ্চলীয় কাউন্টি শহর সামারসেটের বিপক্ষে এসেক্সের হয়ে তিন বছর আগে এই মাঠেই ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরেছিলেন আমির।
২০১০ সালের লর্ডস টেস্টে নতুন বলের সঙ্গী মোহাম্মদ আসিফ সহ ম্যাচ ফিক্সিং এর ঘটনায় পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ও জেল খাটার আগে বাঁ-হাতি পেসার ছিলেন ক্যারিয়ারে ফর্মের তুঙ্গে। ঐ সময় পাকিস্তানী অধিানয়ক সালমান বাটের নির্দেশেই আসিফ ও আমির বিতর্কিত ঐ ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। ২০১০ মৌসুমে দুর্দান্ত গতি ও সুইং বোলিংয়েল মাধ্যমে হেডিংলির নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে প্রথম দিনে আমির ২০ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।
আমিরের বিধ্বংসী বোলিংয়ে অস্টেলিয়ার ইনিংস মাত্র ৮৮ রানে গুড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নতুনভাবে ফিরে এসে আবারো আমির ছয় বছর আগের সেই পারফরমেন্স দেখিয়েছিলেন। টনটনে সামারসেটের বিপক্ষে তিনি প্রথম ম্যাচেই ৩৬ রানে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এর মধ্যে একটি উইকেট ছিল ইংল্যান্ডের সাবেক ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিকের। তিনটি উইকেটই পেয়েছিলেন দুর্দান্ত সুইংয়ের মাধ্যমে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাম্প্রতিক ওয়ানডে সিরিজের আগে ১৪ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে আমিরের অংশগ্রহণই অনিশ্চয়তায় পড়েছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টির কারনে পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া প্রথম ম্যাচে আমির বোলিং করেননি। শেষ চার ম্যাচে খেলতে পারেননি চিকেন পক্সের কারনে। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ইংল্যান্ড ৪-০ ব্যবধানে পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করেছিল। যে কারনে বিশ্বকাপের প্রাথমিক দল থেকেও বাদ পড়েন তারকা এই পেসার। যদিও শেষ পর্যন্ত ১৫ জনের চূড়ান্ত বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন ২৭ বছর বয়সী আমির।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পরাজয় দিয়ে বিশ্বকাপের মিশন শুরু করে পাকিস্তান। ঐ ম্যাচের মাধ্যমে বিশ্বকাপে অভিষেক হয় আমিরের। ট্রেন্ট ব্রীজের ম্যাচটিতে ক্যারিবীয় বোলিং তোপে মাত্র ১০৫ রানে অল আউট হবার পর পাকিস্তানী বোলারদের সামনে কার্যত ম্যাচে লড়াই করার কিছুই ছিলনা। তারপরেও ২৬ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে আমির প্রমান করেছেন তাকে দলে নিয়ে নির্বাচকরা খুব একটা ভুল করেননি।
এরপর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নটিংহ্যামে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ৬৭ রানে আমির ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন। ম্যাচটিতে ফেবারিট ইংল্যান্ডকে ১৪ রানে পরাজিত করে দারুনভাবে লড়াইয়ে ফিরে এসেছে পাকিস্তান। যদিও ব্রিস্টলে বৃষ্টির কারনে শ্রীলংকার বিপক্ষে তৃতীয় ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় হতাশ হতে হয় পাকিস্তানকে।
কাল অবশ্য পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিতে যে কঠির পরীক্ষার মুখে পাকিস্তানকে পড়তে হবে তা সহজেই অনুমেয়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত ১৪ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে মেলবোর্নের ঐ জয়ে অভিজ্ঞ অল রাউন্ডার মোহাম্মদ হাফিজের অনবদ্য ৭২ রান সহযোগিতা করেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে দলীয় ৩৪৮ রান সংগ্রহে হাফিজের ৮৪ রান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমরা খুব একটা বেশী ম্যাচ জিততে পারিনি। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও আমাদের খুব বেশী ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ছিলনা। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে আমরা হারাতে সক্ষম হয়েছি। ঐ ম্যাচটি আমাদের ইতিবাচক অনেক কিছুই দিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা যেভাবে খেলেছি সেই ধরনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই কাল মাঠে নামবো।’
আগের ম্যাচে ভারতের কাছে ৩৬ রানের পরাজয়ে কিছুটা হলেও অস্ট্রেলিয়া আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে। আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের পর এটাই অসিদের এবারের বিশ্বকাপে প্রথম পরাজয়। আর সেই সুযোগটাই নিতে চান সরফরাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি অস্ট্রেলিয়া ফিরে আসার চেষ্টা করবে। বিশেষ করে স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার দলে ফিরে আসার তাদের শক্তি নি:সন্দেহে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সব প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা করি। কালকের ম্যাচের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।’
এদিকে অস্ট্রেলিয়া আশা করছে ওয়ার্নার তার বিধ্বংসী ভূমিকায় ফিরে এসে দলকে সহযোগিতা করবে। ভারত ও আফগানদের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন এই হার্ড হিটিং ওপেনার। ভারতের বিপক্ষে ৮৪ বলে ওয়ার্নার ৫৬ রান সংগ্রহ করেছেন, এর মধ্যে ৪৮টি ছিল ডট বল।
যদিও এই ধরনের ব্যাটিং ওয়ার্নারের স্বাভাবিক খেলার সাথে মোটেই মানানসই নয়। ওয়ার্নারের ওপেনিং জুটি ও অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ অবশ্য ওয়ার্নারের পক্ষেই কথা বলেছেন। তার মতে, স্মিথ ও ওয়ার্নার বল টেম্পারিং ঘটনায় নিষিদ্ধ থাকার দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন। সবকিছুর সাথে নতুনভাবে মানিয়ে নিতে তাদের কিছুটা সময় লাগবে। ওয়ার্নার বিশ্বমানের খেলোয়াড়, দ্রুতই সে নিজেকে স্বরুপে ফিরিয়ে আনবে বলে আশাবাদী ফিঞ্চ।