প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাজেভাবে হারের পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণভাবে ঘুড়ে দাঁড়ালো পাকিস্তান। সোমবার টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ ম্যাচে ফেবারিট শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ১৪ রানে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। জবাবে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৩৪ রান করে ইংল্যান্ড।
নটিংহামে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগান পাকিস্তানের দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান। তারা দলকে ৮৫ বলে ৮২ রানের সূচনা এনে দেন। তবে ৪০ বলে ৩৬ রান করা জামানকে আউট করে ইংল্যান্ডকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলী। এরপর বেশি দূর যেতে পারেননি আরেক ওপেনার ইমামও। বক্তিগত ৪৪ রান করে মঈনের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি।
দলীয় ১১১ রানে দুই ওপেনারকে হারায় পাকিস্তান। এরপর ইংল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ। মারমুখী মেজাজে ব্যাট করার পাশাপাশি দলের স্কোর বড় করছিলেন তারা। দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে দলের স্কোর দু’শর কাছাকাছি নিয়ে যান। আর তখনই পাকিস্তান ব্যাটিং লাইন-আপে তৃতীয়বারের মত আঘাত হানেন মঈন। বিদায় করেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৩ রান করা বাবরকে। ভেঙে যায় হাফিজের সাথে ৭৬ বলে গড়ে ওঠা ৮৮ রানের জুটি।
বাবরকে হারানোর পর ক্রিজে হাফিজের সঙ্গী হন অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। এই জুটিও ইংল্যান্ডের বোলারদের বিপক্ষে মারমুখী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। এতে ৩ শতাধিক রানের পথ পেয়ে যায় পাকিস্তান। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট হন হাফিজ। ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উডের শিকার হবার আগে ৬২ বলে ৮৪ রান করেন হাফিজ। ইনিংসে ৮টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন এ অলরাউন্ডার।
দলীয় ২৭৯ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন হাফিজ। তখন ম্যাচের ৪৩ ওভার চলছিল। এরপর সরফরাজ ৫টি চারে ৪৪ বলে ৫৫ করে বিদায় নিলেও শেষদিকে হাসান আলি ৫ বলে ও শাদাব খান ৪ বলে ১০ রান করে করলে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রানের বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় পাকিস্তান।
ইংল্যান্ডের ক্রিস ওকস ও মঈন ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট শিকার করেছেন উড।
৩৪৯ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারেই ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। ওপেনার জেসন রয় ৮ রান তুলে ফিরে যান। ইনিংসের শুরুতেই বল হাতে নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই পাকিস্তানকে সাফল্য এনে দেন পাকিস্তানের লেগ-স্পিনার শাদাব খান।
শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও তিন নম্বরে নামা জো রুট। কিন্তু এই জুটি ৪৮ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি। ৩১ বলে ৩২ রান করা বেয়ারস্টোকে বিদায় দেন পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজ।
দলীয় ৬০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর বড় জুটির স্বপ্ন দেখছিল ইংল্যান্ড। কারণ বেয়ারস্টোর বিদায়ের পর ক্রিজে রুটের সঙ্গী হন অধিনায়ক ইয়োইন মরগান। কিন্তু মরগানের বড় ইনিংস খেলতে দেননি পাকিস্তানের স্পিনার হাফিজ। ৯ রান করা মরগানের উইকেট উপড়ে ফেলেন হাফিজ। এতে ৮৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। সেই চাপ আরও বেড়ে যায় পাঁচ নম্বরে নামা বেন স্টোকসও দ্রুত বিদায় নিলে। পাকিস্তানের আরেক স্পিনার শোয়েব মালিকের শিকার হয়ে ১৩ রানে থামেন স্টোকস।
দলীয় ১১৮ রানে স্টোকসের বিদায়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় পাকিস্তান। তবে সেখানেই হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না রুট ও উইকেটরক্ষক জশ বাটলার। পাকিস্তানের বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালান তারা। মারমুখী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন রুট-বাটলার। ফলে সময় গড়ানোর সাথে সাথে ম্যাচে ফিরে ইংল্যান্ড।
দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৩৯তম ওভারে আড়াইশ রানের কাছে পৌঁছে যায় স্বাগতিকরা। এর মধ্যে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম ও এবারের বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রুট। তিন অংকের পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি রুট। ৯৭ বলে সেঞ্চুরির স্বাদ নেয়া রুট থামেন ১০৭ রানে। তাকে শিকার করেন পাকিস্তানের স্পিনার শাদাব। ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ১০৪ বলে নিজের ইনিংসটি সাজান রুট। পঞ্চম উইকেটে রুট-বাটলার ইংল্যান্ডকে উপহার দেন ১০৫ বলে ১৩০ রান।
রুট ফিরে যাবার ইংল্যান্ডের আশা-ভরসার প্রতীক ছিলেন বাটলার। মঈনকে নিয়ে দলকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার কাজটিই করছিলেন বাটলার। এর মাঝে ৭৫তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরির স্বাদও নেন তিনি। কিন্তু সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পরের ডেলিভারিতে আউট হয়ে যান বাটলার। পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির হাতে শেষ হয় বাটলারের দুর্দান্ত ইনিংসটি। ৭৬ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৩ রান করেন বাটলার।
বাটলার যখন সাজঘরে ফিরেন তখন ৩৩ বলে জয়ের জন্য ৬১ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। হাতে ছিল ৪ উইকেট। এক পর্যায়ে জয়ের প্রয়োজন ৩ ওভারে ৩৮ রানে নামিয়ে আনেন মঈন ও ওকস।
কিন্তু ৪৮ওতম ওভারে শেষ দুই বলে মঈন-ওকসকে তুলে নিয়ে পাকিস্তানের জয়ের পথ নিশ্চিত করে ফেলেন পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। মঈন ১৯ ও ওকস ২১ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৩৪ রানের বেশি করতে না পারায় ম্যাচ হারে ইংল্যান্ড। পাকিস্তানের ওয়াহাব ৩টি, শাদাব-আমির ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৩৪৮/৮, ৫০ ওভার (হাফিজ ৮৪, বাবর ৬৩, সরফরাজ ৫৫, ইমাম ৪৪, মঈন ৩/৫০, ওকস ৩/৭১)।
ইংল্যান্ড : ৩৩৪/৯, ৫০ ওভার (রুট ১০৭, বাটলার ১০৩, বেয়ারস্টো ৩২, ওকস ২১, ওয়াহাব ৩/৮২, শাদাব ২/৬৩)।
ফল : পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মোহাম্মদ হাফিজ।