বিশ্বকাপের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেদের পুনরায় প্রমাণ করতে চাইবেন স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ক্ষুধার্ত স্মিথ-ওয়ার্নারকে নিয়ে শনিবার (১ জুন) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির দায়ে উভয় তারকাই এক বছর নিষিদ্ধ ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পথেই তারা ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) টুর্নামেন্টর সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ছিলেন ওয়ার্নার। গত সপ্তাহে অনুশীলন ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন স্মিথ।
গত বছর খুবই খারাপ গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। তবে তবে অ্যারন ফিঞ্চের নেতৃত্বাধীন দলটি সঠিক সময়েই ফর্মে ফিরেছে এবং ৫০ ওভারের এ টুর্নামেন্টে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত মার্চে ভারত সফরে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও পাঁচ ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ৩-২ ব্যবধানে জয়ী হওয়া দলটি স্মিথ ও ওয়ার্নারকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে ইংলিশ সমর্থকরা তাদেরকে খুব সহজে ছাড় দেবে না বলে মনে হচ্ছে। একটি অনুশীলন ম্যাচে তারা স্মিথকে দুয়ো ধ্বনি দিয়েছে এবং ‘প্রতারক’ বলে সম্বোধন করেছে।
এদিকে এবারের আসরে স্মিথ ও ওয়ার্নার বড় ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছেন অস্ট্রেলিযার সাবেক পেসার ব্রেট লি। তবে ইংলিশ দর্শকদের বাজে মন্তব্য বা বৈরি আচরণ গায়ে না মাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অস্ট্রেলিযার হয়ে ২০০৩ বিশ্বকাপ জয় করা লি বলেছেন, ‘আমি মনে করি না তাদের প্রমাণ করার কিছু আছে। তাদের কেবলমাত্র পুনরায় অস্ট্রেলিযার হয়ে ফিরতে পারায় খুশি থাকতে হবে। অস্ট্রেলিযা ক্রিকেট দল তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আমি মনে করি জয়ের একটা সুযোগ তারা পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের বার্মি আর্মি আছে, আপনারা কেভিন পিটারসেনের মতো সজ্জন খেলোয়াড় পেয়েছেন। তারা স্লেজিং করবে। তবে আপনাকে ঠান্ডা থাকতে হবে।’
প্যাট কামিন্স এবং মিচেল স্টার্কের নেতৃত্বাধীন জেসন বেহরেনডর্ফ, নাথান কালটার নাইল ও কেন রিচার্ডসনকে নিয়ে একটি শক্তিশালী পেস আক্রমণ বিভাগ রয়েছে অস্ট্রেলিয়া দলে। দুই স্পিনার এডাম জাম্পা ও নাথান লিঁয়র বোলিং আক্রমণে আছে ভিন্নতা। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিযার বিপক্ষে অনুশীলন ম্যাচেই তার প্রমাণ রেখেছেন স্পিনাররা।
কেবলমাত্র দ্বিতীয়বার ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ খেলতে নামা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্রিস্টলে অপ্রতিরোধ্য ফেবারিট হিসেবে শুরু করবে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন অসিরা। পক্ষান্তরে ক্রিকেটের কুলিন অঙ্গণে হারানোর কিছু নেই উন্নিতির শিখরে থাকা আফগানিস্তানের।
টুর্নামেন্ট শুরুর মাত্র দুই মাস আগে অধিনায়কত্বে পরিবর্তন এনেছে দুর্বল আফগানিস্তান। অভিজ্ঞ আসগর আফগানকে সরিয়ে তার জায়গায় কম পরিচিত গুলবাদিন নাইবকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয়েছে। দলের অনেক সিনিয়র সদস্যই যা ভালো চোখে দেখেননি। তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখন তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই।
দলের প্রধান নির্বাচক দৌলত খান আহমাদজাই বলেছেন, ‘গুলবাদিন জানিয়েছে বিশ্বকাপে আসগরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে। তারা এখন একটি সম্মিলিত শক্তি। পরিবর্তন হতে পারে, যেমন শ্রীলঙ্কা তাদের অধিনায়কত্বে পরিবর্তন এনেছে।’
দলের আশা আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে উঠবেন এক দিনের ক্রিকেটে আইসিসি বোলিং র্যাংকিংয়ের তৃতীয় ও টি-২০ র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা তারকা স্পিনার রশিদ খান। ভিন্ন ধর্মী বোলিং দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর সক্ষমতা আছে রশিদের।
বিশ্বকাপের একটি অনুশীলন ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানো আফগানিস্তানের নজর অনেক উঁচুতে।
আহমদজাই আরও বলেন, ‘২০১৫ বিশ্বকাপে রশিদ ছিল না। সুতরাং এবার তাদের লক্ষ্য সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া। আমাদের যে টিম কম্বিনেশন তাতে অবশ্যই কিছু দলের বিপক্ষে আপসেট ঘটাবো। কোন কোন দলকে হারাব আমরা তা চিহ্নিত করেছি। তবে অবশ্যই দলগুলোর নাম আমি বলব না।’
টুর্নামেন্টের তৃতীয় ও দিনের দ্বিতীয় এ ম্যাচে ব্রিস্টলে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা শুরু হবে।
আফগানিস্তান দল
গুলবাদিন নাইব (অধিনায়ক), মোহাম্মদ শাহজাদ, নুর আলী জাদরান, হযরতউল্লাহ জাজাই, রহমত শাহ, আসগর আফগান, হাশমত উল্লাহ শাহিদি, নজিবুল্লাহ জাদরান, সামিউল্লাহ, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, দৌলত জাদরান, আফতাব আলম, হামিদ হাসান, মুজিক উর রহমান।
অস্ট্রেলিয়া দল
অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাজা, স্টিভ স্মিথ, শন মার্শ, এ্যালেক্স কেরি. মার্কাস স্টয়নিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল স্টার্ক, কেন রিচার্ডসন, প্যাট কামিন্স, জেসন বেহরেনডর্ফ, নাথান কালটার নাইল, এডাম জাম্পা, নাথান লিঁয়।