ইংল্যান্ডের শুরু হচ্ছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রতিবারই কিছু না কিছু ঘটনার জন্ম দেয় যা বিরল রেকর্ড বলেই প্রতিয়মান হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপের ৪৪ বছরের ইতিহাসে এমন প্রচুর রোমঞ্চকর ঘটনার জন্ম দিয়েছে।
বিশ্বকাপের ৪৪ বছরে নানা রোমঞ্চকর ঘটনার মধ্য থেকে সেরা পাঁচটি স্মরণীয় ঘটনা তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। চলুন দেখে নেয়া যাক এএফপির দৃষ্টিতে সেরা ৫টি স্মরণীয় মুহূর্ত-
১৯৭৫ : গিলমোরের অসাধারণ দিন
চির প্রতিদ্বন্দ্বি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালের আগেই আগ্রাসী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল টুর্নামেন্টের আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড। কারণ স্বাগতিক দলের দুই ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি ও জেফ থমসন এ সময় প্রতিপক্ষ দলগুলোর সামনে মূর্তিমান আতঙ্ক।
কিন্তু লড়াইয়ে নেমে দেখা গেল তাদের হম্বিতম্বিকে একেবারেই ম্লান করে দিয়ে গ্যারি গিলমোরের সুইং বলেই কুপোকাত হয়ে বসে আছে ইংল্যান্ড। মাত্র ৯৩ রানেই অলআউট! ২৩ বছর বয়সি গিলমোর ১৪ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ৬টি উইকেট।
এখানেই শেষ নয়। তখনও বাকি ছিল আসল নাটকীয়তা। জবাবে অস্ট্রেলিয়া আরও বড় ধরনের ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায়। ৩৯ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৬ উইকেট। এরপর গিলমোর ব্যাট হাতে নামার আগেই হেডিংলিতে নিজের হোম গ্রাউন্ডে ক্রিস ওল্ড তিন উইকেট নেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি অসিদের। ডগ ওয়াল্টার্সের সঙ্গে অপরাজিত ২৮ রানের জুটিতে গিলমোর অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
১৯৮৩ : কপিলের ‘অদৃশ্য’ শতক
ডানকান ফ্লেচারের অল রাউন্ড নৈপূণ্যে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়া জিম্বাবুয়ে পরের ম্যাচে ১৭ রানেই ৫ উইকেট শিকার করে ভারতের বিপক্ষে আরও একটি অঘটনের জন্ম দিতে যাচ্ছিল।
ওয়েলসের টাউনব্রিজ নেভিল গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাজিমাত করেন ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেব। ১৩৮ বলের মোকাবেরায় ১৭৫ রানের দানবীয় এক ইনিংস দিয়ে ভাসিয়ে দেন জিম্বাবুয়েকে। বিবিসি’র টেকনিশিয়ানরা এ সময় ধর্মঘটে থাকায় ম্যাচটি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা যায়নি। ফলে শুধুমাত্র স্টেডিয়ামের দর্শকরাই উপভোগ করতে পেরেছিলেন ম্যাচটি।
শেষ পর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৬৬ রান। যা অতিক্রম করাটা জিম্বাবুয়ের জন্য দুরূহ হয়ে ওঠে। ম্যাচে কাপিল দেবের সেঞ্চুরিটি ছিল প্রেরণাদায়ী এক দৃষ্টান্ত। কাপিলের ওই নেতৃত্বই এক সপ্তাহ পর চ্যাম্পিয়ন শিরোপা এনে দেয় ভারতকে।
১৯৯৯ : টাই ম্যাচ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়
বিশ্বকাপ ম্যাচের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে রোমঞ্চকর একটি ম্যাচ। এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত সেমি ফাইনালে প্রোটিয়া পেসার শন পোলকের ৩৬ রানে ৫ উইকেট শিকারের সুবাদে মাত্র ২১৩ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান জন্টি রোডস ও জক ক্যালিস দলকে লক্ষ্যপূরণের দিকে অনেকটাই এগিয়ে দেন। এমন এক ধারাবাহিকতায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ৯ রান। শেষ বলে তাদের প্রয়োজন এক রান। হাতে এক উইকেট।
এ সময় ব্যাটিংয়ে থাকা ল্যান্স ক্লুজনার বল মিড অফে পাঠিয়েই একমাত্র রানটি সংগ্রহের জন্য দৌঁড় শুরু করেন। কিন্তু অপরপ্রান্তে থাকা এ্যালান ডোনাল্ড ব্যাট ফেলে দৌঁড় শুরু করা ক্লুজনারের আহ্বান বুঝতে পারেননি। ফলে মার্ক ওয়াহ বলটি কুড়িয়ে এনে বোলার ড্যামিয়েন ফ্লেমিংয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। তার হাত ঘুরে উইকেটরক্ষক এডাম গিলক্রিস্ট উইকেট ভেঙ্গে দিয়ে ক্লুজনারকে রান আউট করেন। ফলে ম্যাচটি টাই হয়। কিন্তু নেট রান রেটে এগিয়ে থাকার কারণে ফাইনালের টিকিট পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
২০১১ : ইংল্যান্ডকে অভিভুত করেন ও’ব্রায়ান
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ ভালো একটি সংগ্রহ দাঁড় করেছিল ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করে আট উইকেটে ৩২৭ রান সংগ্রহ করেছিল ইংলিশরা। যেটি এর আগে নন টেস্ট প্লেয়িং কোন দেশ অন্তত বিশ্বকাপ আসরে অতিক্রম করতে পারেনি।
ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি স্মরণীয় করে তোলেন আইরিশ ব্যাটসম্যান কেভিন ও’ব্রায়ান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি পূরণের পাশাপাশি দলকে পাইয়ে দিয়েছেন স্মরণীয় এক জয়। ৫০ বলে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা হাকিয়ে ওই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। আর ১১১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসা আয়ারল্যান্ড শেষ পর্যন্ত তিন উইকেটে জয় করে ম্যাচটি।
২০১৫ : দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয় ভাঙ্গে ‘ওল্ড বয়’
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বৃষ্টি-বিঘ্নিত কার্টেল ওভারের সেমি ফাইনালে ফাফ ডুপ্লেসিস ও এবিডি ভিলিয়ার্সের জোড়া অর্ধশতকে ভর করে ৫ উইকেটে ২৮১ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণ করা গ্রান্ট ইলিয়টের অলরাউন্ড প্রদর্শনী দেখে কালোটুপিধারীরা। ২০০১ সালে নিউজিল্যান্ডে আসা ইলিয়ট এই এক ইনিংস দিয়েই স্মরনীয় হয়ে ওঠেন।
ম্যাচের শেষভাগে জয়ের জন্য ৫ রানের প্রয়োজন হয় কিউইদের। হাতে ছিল দুই বল। স্মরণীয় এক ছক্কা হাঁকিয়ে এর সমাধান এনে দেন ইলিয়ট। ফাস্ট বোলার ডেল স্টেইনের বলটি মিড-অনের উপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন তিনি। এটি ছিল ৮৪ রানে অপরাজিত থাকা কিউই ব্যাটসম্যানের ম্যাচজয়ী শট।
যে জয়ের ফলে আগের ছয় আসেরর সেমি ফাইনাল খেলা নিউজিল্যান্ড প্রথমবারের মত ফাইনাল খেলার সুযোগ লাভ করে। অপরদিকে আরও একবার ক্ষত হৃদয় নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় ‘চোকার’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা।