ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসে আগামী ৩০ মে শুরু হওয়া বিশ্বকাপে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশটি দল অংশগ্রহণ করবে এবং প্রতিটি দলেরই অনেক কিছু নির্ভর করবে তাদের অধিনায়কদের উপর।
দশ অধিনায়কের মধ্যে মাশরাফি বিন মর্তুজা, ইয়োইন মরগান এবং জেসন হোল্ডার গত বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অন্য সাত জন প্রথমবার বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অর্থাৎ অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে।
আফগানিস্তান : গুলবাদিন নাইব
কেবলমাত্র অধিনায়ক হিসেবেই বিশ্বকাপে গুলবাদিন নাইবের অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে তেমনটা নয়, আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচেও তিনি প্রথমবার দলের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। তিন ফর্মেটে তিনজনকে দায়িত্ব দেয়ার নীতি গ্রহণ করায় মাত্র কয়েক দিন আগেই নাইবকে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক নির্বাচন করে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। আসগর আফগানকে সরিয়ে ৫০ ওভার ফর্মেটে অধিনায়ক নির্বাচিত হন নাইব। কোন অতীত অভিজ্ঞতা ছাড়া তিনি কিভাবে দায়িত্ব পালন করেন সেটাই দেখার বিষয়। দলের একজন সদস্য হিসেবে আফগানদের হয়ে এ পর্যন্ত ৫২ ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ৮০৭ রান ও বল হাতে ৪০ উইকেট ঝুলিতে রয়েছে নাইবের।
অস্ট্রেলিয়া : এ্যারন ফিঞ্চ
ভারতের বিপক্ষে তিনটি এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচটিসহ এ্যারন ফিঞ্চের অধীনে সর্বশেষ আটটি ওয়ানডে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
২০১৮ সালের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে অধিনায়ক নির্বাচিত হন ফিঞ্চ।এরপর তার অধীনে ১৮টি ওয়ানডে খেলে ১০টি জয়ী হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ জয়ের হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ছাড়া সব জয়ই এসেছে এ বছর। গত মার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ ছাড়া অধিনায়ক হিসেবে বেশিরভাগ সময়ই ব্যাট হাতে ধুকেছেন ফিঞ্চ। পাকিস্তানকে পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ করা সিরিজে দুই করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি।
বাংলাদেশ : মাশরাফি
দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্যদের একজন মাশরাফি বিন মর্তুজা বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বার টাইগারদের নেতৃত্ব দেবেন। তার নেতৃত্বেই ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল প্রথমবার কোয়ার্টারফাইনালে ওঠে । আম্পয়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে এ’ গ্রুপে শেষ আটে ভারতের কাছে পরাজিত হওয়ার আগে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে পরাজিত করে টাইগাররা। বিশ্বকাপে প্রথমবার নক আউট পর্বে ওঠার পথে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে হারায় মাশরাফির দল। এ যাবতকালে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। তার নেতৃত্বে ৭৩ ম্যাচের মধ্যে ৪৩টি ওয়ানডেতে জয় পায় বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ড : ইয়োইন মরগান
নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপের গ্রুপ থেকেই লজ্জাস্করভাবে বিদায় নেয়ার পর এক দিনের ক্রিকেটে ইয়োইন মরগানের নেতৃত্বে দারুণভাবে ঘুড়ে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড দল। ইংলিশদের শক্তিশালী দলে পরিনত করতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন মরগান। তার নেতৃত্বেই ইংল্যান্ড বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দল। নিজ মাঠে এবারের আসরে অন্যতম ফেবারিট তারা এবং প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপায় চোখ তাদের। মরগানের নেতৃত্বগুনে নি:সন্দেহে এবারের বিশ্বকাপে সবেেচয় শক্তিশালী দল ইংল্যান্ড। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়ার পর মরগানের নেতৃত্বে ৭৬ ওয়ানডের মধ্যে ৫০ ম্যাচে জয় পেয়েছে ইংলিশরা।
ভারত : বিরাট কোহলি
টিম ইন্ডিয়ার মেরুদন্ড বিরাট কোহলি। ইয়োইন মরগানের ন্যায় বিরাট কোহলিও আসন্ন বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট একটি দলের অধিনায়ক। দিনকে দিন কোহলির নেতৃত্ব গুনের উন্নতি হচ্ছে এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ জয় নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করছে। কোহলির নেতৃত্বে ৬৮ ম্যাচের মধ্যে ৪৯ ওয়ানডে জিতেছে ভারত।
একটি বিশ্ব ইভেন্টে দলের নেতৃত্ব দেয়ার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে কোহলির। তার নেতৃত্বে ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল খেলে ভারত। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে যদিও চিরপ্রতিদ্বন্দি পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া। বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিেেসব এবার তার অভিষেক হতে যাচ্ছে এবং স্পট লাইটে থাকা শীর্ষ খেলোয়াড়ওে একজন হবেন তিনি।
নিউজিল্যনাড : কেন উইলিয়ামসন
প্রথমবার বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেয়া সাত অধিনায়কের একজন কেন উইলিয়ামসন। প্রথমবার ফাইনালে উঠে ২০১৫ বিশ্বকাপ রানার্স-আপ দলের সদস্য ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বর্তমান অধিনায়ক। নিজকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী এ্যাপ্রোচের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা নিউজিল্যান্ডের তৎকালীন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ছায়াতলে বেড়ে উঠেছেন উইলিয়ামসন।
ধৈর্য্যশীল এবং একজন পরিপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিনত হওয়া এ তারকা ব্যাটিং ও অধিনায়কত্ব উভয় ক্ষেত্রেই মেধার পরিচয় দিচ্ছেন। দলের সবেেচয় সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে নিউজিল্যান্ডের আশা ভরসার প্রতীক হবেন উইলিয়ামসন। একইভাবে অধিনায়ক হিসেবেও সফল তিনি। তার অধীনে কিউইদের জয়ের হার ৫৩ শতাংশ ৯৭।
পাকিস্তান : সরফরাজ আহমেদ
সরফরাজের নেতৃত্বেই ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স শিরোপা জয় করে পাকিস্তান। তাই আসন্ন বিশ্বকাপেও দলকে একই ধরনের সাফল্য এনে দিতে চাইবেন তিনি।
সরফরাজের অধীনে পাকিস্তান দলের জয়ের হার ৬১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৩৫ ওয়ানডের মধ্যে ২১টিতে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। অধিনায়ক, একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং উইকেটরক্ষ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করবেন সরফরাজ।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ফাফ ডু প্লেসিস
সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের তালিকায় সহজেই স্থান রয়েছে তার। অধিনায়ক হিসেবে অসাধারন সাফল্য রয়েছে ফাফ ডু প্লেসিসের। তার অধীনে ৩০ ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার অধীনে প্রোটিয়াদের জয়ের হার ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৮ সালের শুরু থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র একটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পরাজিত হয়েছে। পক্ষান্তরে জিতেছে পাঁচটি। একজন মিডল অর্ডার স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান ডু প্লেসিসের ওয়ানডে ব্যাটিং গড় ৪৬ দশমিক ৫৪ । য তাকে টপ অর্ডারে অনন্য সম্পদে পরিনত করেছে। লোয়ার মিডল অর্ডারেও ব্যবহারে কার্যকর তিনি।
শ্রীলঙ্কা : দিমুথ করুনারত্নে
নিরোশান ডিকবেলা, দিনেশ চান্ডিমাল, উপুল থারাঙ্গা এবং আকিলা ধনঞ্জয়াসহ বেশ কিছু নিয়মিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন খেলোয়াড়কে ছাড়া বিশ্বকাপ খেলতে হবে শ্রীলংকাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপের মার্চে শেষ ওয়ানডে খেলা দিমুথ করুনারতেœকে আসন্ন আসরের অধিনায়ক নির্বাচন করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি এ বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয়ে শ্রীলংকা দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শ্রীলংকা দলের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ে দলের নেতৃত্ব দিলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনো অধিনায়ক হিসেবে তার অভিষেক হয়নি। একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে তার কিছু কৌশল আছে এবং কিভাবে রান করতে হয় সেটা তিনি জানেন। তবে মাত্র ১৬ গড়ে ১৭ ম্যাচে তার রান সংখ্যা ১৯০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : জেসন হোল্ডার
লর্ডসে জুলাই মাসে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান জেসন হোল্ডার। ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বে ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ প্রথম দুই বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দলটির বর্তমান অধিনায়ক হোল্ডার তার অগ্রজের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন। ক্যারিবীয় কিংবদন্তীর সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বিষয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছেন হোল্ডার এবং দলের সর্বেশেষ বিশ্বকাপ জয় করা ভেন্যুতেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চান।
এবারের আসরে সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়ক হতে হতে যাচ্ছেন ২৭ বছর বয়সী হোল্ডার। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশ্রনে গড়া দল দল নিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোই তার লক্ষ্য। যদিও ২০১৪ সালের পর দ্বিপাক্ষিক কোন ওয়ানডে সিরিজ জিতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সম্প্রতি নিজ মাঠে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ড্র করেছে এবং এখান থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করবে তারা।