কলম্বোর সন্ত্রাসী হামলার আগেই জুলাইয়ে বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফর ঠিক করে রেখেছিল বিসিবি। এখন পর্যন্ত পূর্বের সূচিই বহাল রেখেছে। দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে কোনো সমস্যা দেখা না দিলে বিশ্বকাপ শেষ করে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ খেলতে শ্রীলঙ্কায় যেতে পারেন মাশরাফিরা।
অবশ্য এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারেই আমলে নেবে বোর্ড। প্রয়োজনে শ্রীলঙ্কায় নিরাপত্তা প্রতিনিধি দলও পাঠাবে দেশের ক্রিকেটের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিসিবি সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'এখনও যথেষ্ট সময় আছে আমাদের হাতে। এর মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওই দেশের সর্বশেষ অবস্থা গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।'
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তিন ম্যাচের এই সিরিজটা এফটিপিতে ছিল ডিসেম্বরের শেষদিকে। ওই সময়ে বিপিএল টি২০ টুর্নামেন্ট করার পরিকল্পনা রেখেছে বিসিবি। যে কারণে সিরিজ এগিয়ে জুলাইয়ে আনা হয়েছে। সফরের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়েছে ২০ জুলাই। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিরিজটা পিছিয়ে একটু এদিক-ওদিক করা হতে পারে।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ওপরের সারির দল। গৃহযুদ্ধের সময়ও ১৯৯৬-এর বিশ্বকাপের সহআয়োজক ছিল দেশটি। যদিও নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া ওই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ খেলেনি। অবশ্য বাংলাদেশ বরাবরই লংকায় খেলতে গেছে। কোনো সিরিজই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পেছানো অথবা বাতিল করেনি। তবে গৃহযুদ্ধ-উত্তর শ্রীলঙ্কায় সব দেশই খেলতে গেছে।
২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক ছিল তারা। ২০১২ সালের টি২০ বিশ্বকাপের একক আয়োজক ছিল মাহেলা-সাঙ্গাকারাদের দেশ। সেখানে হঠাৎ করেই ইস্টার সানডের দিনে (২১ এপ্রিল) ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা নতুন করে শ্রীলংকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন শংকার মুখে ঠেলে দিয়েছে। হামলার পরপরই পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সফর স্থগিত করে শ্রীলংকার ক্রিকেট বোর্ড।
দুটি চার দিনের ও তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলতে ৩০ এপ্রিল কলম্বো পৌঁছানোর কথা ছিল পাকিস্তান যুব দলের। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে খোদ শ্রীলংকান ক্রিকেট দলই বিশ্বকাপের প্রস্তুতিও সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছিল। ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডও চোখ রাখছে শ্রীলংকার ওপর। আগামী বছর দুই টেস্টের সিরিজের আগে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
তবে শ্রীলংকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনতে দেশটির যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে বেশি দিন নাও লাগতে পারে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে কলম্বোতে।
এদিক থেকে আশার আলো দেখাচ্ছে বিসিবিকে। খুব খারাপ কিছু না হলে দুই দেশের ক্রিকেটের সফর বিনিময় অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ দুই বছর আগে হলি আর্টিসেন হামলার পর বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় ছিল ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলো।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিপক্ষীয় সফর বাতিল করেছিল। এমনকি যুব বিশ্বকাপেও নিরাপত্তার অজুহাতে দল পাঠায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তখন লংকান বোর্ড ঠিকই বাংলাদেশের পাশে ছিল। আর বাংলাদেশ তো সব সময়ই প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে এসেছে।
যে সময় পাকিস্তানে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উন্নত দেশগুলো খেলতে যেতে চায়নি বাংলাদেশ দল তখনও খেলতে গেছে দেশটিতে। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে ও এক ম্যাচ টি২০ খেলে এসেছেন মাশরাফিরা। যে কারণে এক মাসের ব্যবধানে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে পেরেছিল পাকিস্তান। ওই এশিয়া কাপে ভারতের দলও খেলেছে। আর শ্রীলংকার চূড়ান্ত খারাপ সময় ২০০৭ সালেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে গিয়েছিলেন আশরাফুলরা। দ্বিপক্ষীয় এই সম্পর্ক অটুট রাখতে বিসিবি এবারও হয়তো শ্রীলংকার পাশেই থাকবে।