ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আয়োজন বিশ্বকাপ। ক্রিকেট খেলা সব খেলোয়াড়েরই আজীবন স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলার। কারো স্বপ্ন পুরোন হলেও অনেকের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। আবার অনেকে সুযোগ পেলে পারফরমেন্সের মাধ্যমে গড়েন ইতিহাস, বনে যান বীর।
এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি বিশ্বকাপে বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান ইতিহাস গড়েছেন। দেশের তথা ক্রিকেট বিশ্বের নায়কে পরিণত হয়েছেন ব্যাটিং ঝলকানিতে। তেমনি বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বিশ্বকাপের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা। ১৯৯২-২০০৭ পর্যন্ত মোট পাঁচটি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছেন এ কিংবদন্তী। এ সময়ে ৩৪ ম্যাচে দুই সেঞ্চুরি এবং সাত হাফ সেঞ্চুরিসহ ৪২ দশমিক ৭৪ গড়ে মোট ১২২৫ রান করেছেন ক্রিকেটের এ বরপুত্র।
মূলত সম্মহোনিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন লারা। অফ-অন সব সাইডেই বল টোতে পারদর্শী ছিলন তিনি। তাছাড়া মিড উইকেট দিয়ে তার পুল শট খেলার দক্ষতায় এমনকি সেরা বোলাররাও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলত।
রেকর্ড : ম্যাচ ৩৪: ইনিংস ৩৩: রান ১২২৫: গড় ৪২.৭৪: শতক-২: অর্ধ শতক: ৭
অ্যাডাম গিলক্রিস (অস্ট্রেলিয়া)
বিশ্বকাপ খেলা এ যাবতকালের খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা উইকেরক্ষক ব্যাটসম্যানদের একজন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। বাঁ-হাতি ড্যাশিং এ তারকা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে ৩১টি ম্যাচ খেলে ১০৮৫ রান করেছেন। ৩৬ দশমিক ১৬ গড়ে তার স্ট্রাইক রেট ৯৮ দশমিক ০১।
অস্ট্রেলিয়া দলে টপ অর্ডারে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান গিলক্রিস্ট নিজের স্ট্রোক দ্বারা বিশ্বের সেরা বোলারদের তুলোধুনা করতেন। ২০০৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ১৪৯ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেন। মূলত তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে লঙ্কান বোলিং আক্রমণ এক কথায় উড়ে যায় এবং অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে হ্যাটট্রিক করে।
রেকর্ড: ম্যাচ : ৩১, ইনিংস : ৩১, রান : ১০৮৫, গড় : ৩৬.১৬, সেঞ্চুরি : ১, অর্ধশতক ৮।
কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা)
বিশ্বকাপ খেলা সুন্দর ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। তার ব্যাটিং দেখা মানে মানেই আনন্দ। অফ সাইড দিয়ে তার কভার ড্রাইভ এবং মিড উইকেট দিয়ে তার ফ্লিক দেখার আনন্দই যেন ভিন্ন রকম।
বিশ্বকাপের এক আসরে চারটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র খেলোয়াড় সাঙ্গাকারা। কিংবদন্তী এ ব্যাটসম্যান লঙ্কান দলের হয়ে বিশ্বকাপে ৩৫ ম্যাচে ৫৬ দশমিক ৭৪ গড়ে মোট ১৫৩২ রান করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি সেঞ্চুরি এবং সাতটি হাফ সেঞ্চুরি।
রেকর্ড : ম্যাচ : ৩৭, ইনিংস : ৩৫, রান : ১৫৩২, গড় : ৫৬.৭৪, সেঞ্চুরি : ৫, অর্ধশতক : ৭
রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)
বিশ্বকাপের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক আইকনিক রিকি পন্টিং। বিশ্বকাপের পাঁচ আসরে ৪৬ ম্যাচ খেলে তার রান সংখ্যা ১৭৪৩। ৪৫ দশমিক ৮৬ গড়ে এ সময়ে তিনি সেঞ্চুরি করেছেন ৫টি, হাফ সেঞ্চুরি ৬টি।
২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল পন্টিংয়ের অপরাজিত ১৪০ রানের ইনিংসটি। ক্যারিসমেটিক এ ব্যাটসম্যানের নৈপুণ্যেই ভারতকে ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে হারাতে সক্ষম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া ২০০৭ আসরে অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ক্ষেত্রেও বড় অবদান ছিল তার। এ আসরে তিনি মোট ৫৩৯ রান করেন।
রেকর্ড : ম্যাচ : ৪৬, ইনিংস : ৪২, রান : ১৭৪৩, গড় : ৪৫.৮৬, শতক : ৫, অর্ধশতক : ৬
শচিন টেন্ডুলকার (ভারত)
বিশ্বকাপে ব্যাটিং রেকর্ডের সবগুলোই রয়েছে শচিন টেন্ডুলকারের দখলে। খেলাটিতে সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়াসহ অর্জনের কারণে ‘গড অব ক্রিকেট’ খ্যাত টেন্ডুলকারের কোন সূচনা দরকার নেই।
সবচেয়ে বেশি ৬টি বিশ্বকাপ খেলার তালিকায় পাকিস্তানের জাভেদ মিঁয়াদাদের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন টেন্ডুলকার। ‘লিটল মাস্টার’ খ্যাত এ তারকা বিশ্বকাপে ৪৫ ম্যাচে ৫৬ দশমিক ৯৫ গড়ে মোট রান করেছেন ২২৭৮। যার মধ্যে রয়েছে রেকর্ড ছয়টি সেঞ্চুরি এবং ১৫টি হাফ সেঞ্চুরি।
২০০৩ বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেন্ডুলকারের ৯৮ রানের ইনিংসটি সর্বকালের সেরা একটি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। একইভাবে বয়সকে তুচ্ছ করে ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ১২০ রানের ইনিংসটি ক্রিকেট ভক্তদের মনে থাকবে অনন্তকাল।
রেকর্ড : ম্যাচ : ৪৫, ইনিংস : ৪৪, রান : ২২৭৮, গড় : ৫৬.৯৫, সেঞ্চুরি : ৬, অর্ধশতক : ১৫