কেমন ছিল ১৯৭৫-২০১৫ বিশ্বকাপগুলো

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
কেমন ছিল ১৯৭৫-২০১৫ বিশ্বকাপগুলো

আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হতে যাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। যা নিয়ে অনেক আগে থেকেই সমগ্র বিশ্বে শুরু হয় উন্মাদনা। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আইসিসি বিশ্বকাপ। হোক সেটা টি-২০ কিংবা ৫০ ওভার ভার্সনের বিশ্বকাপ। নিজেদের প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে সব সময়ই প্রস্তুত থাকে ভক্ত সমর্থকরা।

আইসিসি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারাটা একটা ক্রিকেটীয় দেশের জন্য সব সময়ই সম্মানের এবং স্বপ্নের মুহুর্ত। ক্রিকেট ইতিহাসে এ পর্যন্ত ১১টি দেশ আয়োজন করেছে এ সম্মানজনক ইভেন্ট।
শীর্ষ ক্রিকেটীয় জাতির মধ্যে ইংল্যান্ড এবং ভারত বেশ কয়েকবার করে আয়োজন করেছে বিশ্বকাপ। এ পর্যন্ত যে ১১টি দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে :

বাংলাদেশ (২০১১ আইসিসি বিশ্বকাপ)
তিন দেশ বাংলাদেশ, ভারত এবং শ্রীলংকা যৌথভাবে আয়োজন করে ২০১১ বিশ্বকাপ। আসরের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার মিরপুর শেরে-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এটা ছিল বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট। স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় নিজ মাঠে। বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় ভারত ও শ্রীলংকায়। বাংলাদেশে আয়োজিত ম্যাচগুলোর প্রধান দুই ভেন্যু ছিল মিরপুর শেরে-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। আসরের শিরোপা জিতেছিল আরেক স্বাগতিক ভারত। আয়োজক হিসেবে সমগ্র বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছিল বাংলাদেশ।

কেনিয়া ২০০৩
কেনিয়া এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য এখনো বিবেচিত হয়নি। ২০০৩ আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে যৌথ আয়োজক হিসেবে কেনিয়াকে বিবেচনা করা হয়। দেশটি যৌথ আয়োজক হলেও আসরের মাত্র দু’টি ম্যাচ নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল কেনিয়া দল। আট হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নাইরোবি জিমখানা ক্লাব ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ম্যাচ দ’ুটি। নিরাপত্তা সমস্যার কারণে নিউজিল্যান্ড মাঠে নামতে না পারায় নিজ মাটিতে অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচেই জয়ী হয়েছিল কেনিয়া দল। নিজ মাঠে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

জিম্বাবুয়ে (২০০৩)
বিশ্বকাপের আগে কয়েক বছর জিম্বাবুয়েতে ক্রিকেটের মান তরতর করে এগিয় গিয়েছিল। দেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তখনকার উঁচু মানের খেলোয়াড়কে কৃতিত্ব দিতে হবে। এ সব বিষয় বিবেচনা করে ২০০৩ বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ জিম্বাবুয়েতে দেয়া হয়েছিল। জিম্বাবুয়ে দলের তৎকালীন অধিনায়ক অপরাজিত ৭২ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন ।
২০০৩ আসরে জিম্বাবুয়ের দুই ভেন্যু হারারে ও বুলাওয়েতে কিনটি করে মোট ছয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ (আইসিসি বিশ্বকাপ ২০০৭)
একক দেশ হিসেবে ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেট উৎসবের নবম আসর অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে। আটটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল টুর্নামেন্টের ৫১টি ম্যাচ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এখন পর্যন্ত আইসিসি বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারেনি।
আসরের আটটি ভেন্যুর মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় স্টেডিয়াম ছিল কেনসিংটন ওভাল। এখানেই ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তবে হোম কন্ডিশনের কোন সুবিধা আদায় করে নিতে পারেনি ক্যারিবিয় দলটি। বৃষ্টির কারণে ফাইনাল ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয়। ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে শ্রীলংকাকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

শ্রীলংকা(১৯৯৬ ও ২০১১ বিশ্বকাপ)
এ পর্যন্ত ১৯৯৬ ও ২০১১ দুইবার যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলংকা। ভারত ও পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবার ১৯৯৬ বিশ্বকাপ আয়োজন করে তারা। তবে সেবার দেশটিতে মাত্র চারটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। তিনটি হয় কলম্বোতে, একটি ক্যান্ডিতে। ফাইনালে টুর্নামেন্ট ফেবারিট অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথম ও একবারই শিরোপা জিতেছিল শ্রীলংকা।
এরপর বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয়বার ২০১১ বিশ্বকাপ আয়োজন করে লংকানরা। রানার্স আপ হওয়ায় এ আসরটিও তাদের জন্য স্মরণীয়। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত লংকানদের ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ভারত।

পাকিস্তান (১৯৮৭ ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপ)
পাকিস্তান ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ আয়োজন করে। বিশ্ব ক্রিকেটে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ভারত ও পাকিস্তান। তবে নাটকীয়ভাবেদেশ দু’টি প্রথমবার যৌথভাবে ১৯৮৭ বিশ্বকাপ আয়োজন করে। আসরের ১০টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানে, বাকিগুলো ভারতে।
এরপর ভারত ও শ্রীলংকার সঙ্গে যৌথভাবে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ আয়োজন করে পাকিস্তান। লাহোরে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ায় ফেবারিট ছিল পাকিস্তান। তবে আগের আসরের চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারেনি তারা।

দক্ষিণ আফ্রিকা(২০০৩ আইসিসি বিশ্বকাপ)
২০০৩ সালে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের মূল আয়োজক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে কিছু ম্যাচ জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়াতে অনুষ্ঠিত হয়। জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত হয় ৬ ম্যাচ, কেনিয়াতে ২ ম্যাচ। তবে আসরের বড় অংশই অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে।
জোহানেসবার্গ ও ডারবানের ১২টি ভেন্যুকে বিশ্বকাপের জন্য নির্ধারন করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যকার টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় জোহানেসবার্গে। ১২৫ রানের বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

নিউজিল্যান্ড(১৯৯২ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ)
এ পর্যন্ত মোট দুই বার বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ড একটি দুর্ভাগাদেশ বিশেষ করে বিশ্বকাপের বেলায়। কেননা দুইবার আয়োজক হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করতে পারেনি দেশটি। ১৯৯২ সালে প্রথমবার এবং ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের আয়োজক হয় দেশটি। অবশ্য দুইবারই প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথ আয়োজক ছিল তারা।
২০১৫ আসরে প্রথমবার শিরোপার কাছাকাছি গিয়ে তা স্পর্শ করতে পারেনি তারা। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় যৌথ আয়োজক দেশটিকে। দুই আসরেই সেমিফাইনাল ও কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচগুলো দুই দেশ মিলিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তবে দুই আসরের ফাইনালই হয় অস্ট্রেলিয়াতে।

অস্ট্রেলিয়া(১৯৯২ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ)
বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দেশ অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত ১১ আসরের মধ্যে পাঁচবার শিরোপা জয় করেছে। এছাড়া পর পর তিনবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করা একমাত্র দলও অস্ট্রেলিয়া। এ পর্যন্ত ১৯৯২ ও ২০১৫ দুইবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে অস্ট্রেলিয়া।
দুইবার আয়োজক হয়ে হোম কন্ডিশনকে কাজে লাগিয়ে ২০১৫ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ ও ২০১৫ আসরে যথাক্রমে ২৫ ও ২৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় নিউজিল্যান্ডে।

#২# ভারত(১৯৮৭, ১৯৯৬ এবং ২০১১বিশ্বকাপ) :
১১টি বিশ্বকাপের মধ্যে এ পর্যন্ত তিন আসরের আয়োজক হয়েছে ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে ১৯৯৭ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ আয়োজন করে ভারত। পরের দুই আসর আয়োজন করে যথাক্রমে ১৯৯৬ ও ২০১১ সালে। অবশ্য এককভাবে নয় বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার সঙ্গে যৌথভাবে।
হোম কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করে ভারত।

#১# ইংল্যান্ড(১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯বিশ্বকাপ) :
এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১ বারের মধ্যে রেকর্ড সর্বাধিক চারটি আসরের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। ১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানজনক এ ইভেন্টের প্রথম আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড।

তবে স্বাগতিক হিসেবে সবচেয়ে দুর্ভাগা দেশ ইংল্যান্ড। কেননা এ পর্যন্ত চারবার আয়োজন করে একবারও শিরোপা জয় করতে পারেনি তারা। বিশ্বকাপের প্রথম তিন আসর-১৯৭৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩ পর পর আয়োজন করে ইংলিশরা। এরপর ১৯৯৯ সালে চতুর্থবার বিশ্বকাপ আয়োজন করে দেশটি। ঐ চার আসরের সব ফাইনাল ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে।



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

ইউনাইটেডের বিপক্ষে দলে ফিরছেন মেসি

ইউনাইটেডের বিপক্ষে দলে ফিরছেন মেসি

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দলে নেই তাসকিন, চমক রাহি-সৈকত

বাংলাদেশ বিশ্বকাপ দলে নেই তাসকিন, চমক রাহি-সৈকত

বিশ্বকাপে তাসকিনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললো বিসিবি

বিশ্বকাপে তাসকিনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললো বিসিবি

ওয়ানডে না খেলেও বিশ্বকাপে রাহি

ওয়ানডে না খেলেও বিশ্বকাপে রাহি