আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হচ্ছে দ্বাদশ আইসিসি বিশ্বকাপ। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর। ক্রিকেট বিশ্বের শীর্ষ দশটি দল লড়াই করবে সম্মানজনক একটি ট্রফির জন্য।
প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারদের জাতীয় বীর-এ পরিণত হওয়ার মঞ্চ এ বিশ্বকাপ। তেমনি অনেক উঠতি ক্রিকেটারের জন্যও নিজকে প্রমাণ করা এবং একটি উইকেট পেয়ে জাতীয় দলে জায়গা পোক্ত করার সুযোগ।
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে অনেক তরুণ তুর্কিই আছেন, যারা ক্রিকেট বিশ্বের সর্ব বৃহৎ এ মঞ্চে নিজের জাতিকে গর্বিত করেছে। বল হাতে একটা যাদুকরী স্পেল, একটা ম্যাচ জয়ী ইনিংস এবং পুরো বিশ্ব যেন তার হাতের মুঠোয়- অনেক তরুণ ক্রিকেটারই এমনটা আশা করবে।
তরুণ বা টিনএজ ক্রিকেটারদের বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে খুব বেশি নাম পাওয়া যাবে না। বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া দলগুলো নিয়ে আলোচনা করলে আমরা চার টিনএজ ক্রিকেটার আশা করতে পারি। যারা আসন্ন বিশ্বকাপে নিজ নিজ দলে জায়গা পেতে পারেন।
নাঈম হাসান (বাংলাদেশ)
সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলে ডাক পেয়েছেন ২০০০ সালের ২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করা নাঈম হাসান। এখনো চলছে যার টিনএজ। কিন্তু এমন কিছু করেছেন, যা এর আগে কেউ করতে পারেননি। অভিষেক টেস্টেই পাঁচ উইকেট শিকার করা সবচেয়ে কম বয়সী বোলার তিনি। এ পর্যন্ত তিনি মাত্র দুই টেস্টের ক্যারিয়ারে ১৩৩ রান হজম করে ২২ গড়ে ৬ উইকেট শিকার করেছেন।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও যথেষ্ট ভাল তিনি। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে তার পারফরমেন্স দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাল কিছু করতে সক্ষম। চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে সর্বশেষ বিপিএলে ১২ ম্যাচে ২৮০ রানে ৮ উইকেট শিকার করেন নাইম।
এছাড়া ১৭ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারে ৩৮৪ রানে এ স্পিনার শিকার করেছেন ১০ উইকেট। তবে সব কিছু থেকে আলাদা করে তার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে প্রতি ওভারের রান ইকোনোমি রেট সাত-এর নিচে। যা সংক্ষিপ্ত ভার্সনে অর্জন করা খুবই কঠিন।
যার ফলশ্রুতিতে তিনি নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ টেস্ট ও ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন। পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে পারেন তিনি।
শাহিন আফ্রিদি (পাকিস্তান)
২০০০ সালের ৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করা পাকিস্তানী এ পেসার ইতোমধ্যে দেশের হয়ে ১৯টি ম্যাচ খেলেছেন।
নাঈম হাসানের ন্যায় শাহিন আফ্রিদির বয়সও মাত্র ১৯ বছর। তবে দারুণ পারফরমেন্স , লম্বা এবং নির্ভিক বাঁ-হাতি এ পেসার ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই তরুণ বয়সেই দেশের হয়ে ১০ ওয়ানডে এবং ৯টি টি-২০ খেলেছেন তিনি। সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলেছেন এবং বেশ কিছু দিন যাবতই সেরা একাদশের সদস্য।
দলের সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দারুণ বোলিং করছেন আফ্রিদি। ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তান দলের সবচেয়ে সফল বোলার তিনি। ২৭ ওভার বোলিং করে পাঁচ এর নিচে ইকোনোমি রেটে ১৩০ রানে ৬ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। যে অবস্থায় আছেন এবং কোন প্রকার ইনজুরি কিংবা বাইরের কোন সমস্যা না হলে ২০১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে তার জায়গা নিশ্চিত বলেই মনে হয়।
মুজিব উর রহমান (আফগানিস্তান)
এ তালিকার সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড় আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান বিশ্বকাপের সময় ১৮ বছর পূর্ণ করবেন। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া টি-২০ বিগ ব্যাশ লীগের (বিবিএল) সর্বশেষ আসরে নিজের ঝলক দেখানো মুজিবের জন্ম ২০০১ সালের ২৮ মার্চ। বাঁ-হাতি পেসারের সঙ্গে যদি পাকিস্তানের একটা সখ্য থেকে থাকে তবে আফগানিস্তানের একই সখ্য রয়েছে স্পিনারদের সঙ্গে। খোস্ত-এ জন্ম গ্রহণকারী মুজিব বর্তমানে ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টি-২০ টুর্নামেন্টগুলোতে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে নিজকে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে(আইপিএল) কিংস একাদশ পাঞ্জাবের হয়ে সফল একটি মৌসুম শেষ করার পর এ বছর বিবিএল-এ ব্রিজবেন হিট-এ নিজের ঝলক দেখিয়েছেন। দলটির হয়ে খেলা ১০ ম্যাচের তিনটিতে তার ইকোনোমি রেট সাত এর উপড়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটেও বিস্ময়করভাবে প্রতি ওভারে তার ইকোনোমি রেট চার-এর নীচে এবং আফগানিস্তানের হয়ে খেলা ম্যাচগুলোতে ১৮ দশমিক ৮০ গড়ে ২৮ ম্যাচে ৫১ উইকেট শিকার করেছেন।
সুবম্যান গিল (ভারত)
অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চোখ ধাধানো পারফরমেন্সের পর ১৯৯৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করা সুবম্যান গিলকে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে দেখাটাই খুব স্বাভাবিক।
১৯ বছর বয়সী এ তরুণ তুর্কি এক বার নয় তিন বার নিজের পারফরমেন্সের ঝলক দেখিয়েছেন। অনুর্ধ -১৯ আইসিসি বিশ্বকাপের পর আইপিএলে কোলকাতা নাইটরাইডার্সে একটি অসাধারন মৌসুম শেষ করেছেন তিনি।
ভারতের ঘরোয়া রনজি ট্রফিতে স্বপ্নের একটি মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। ৯ ম্যাচে একশ’র বেশি গড়ে ৮০’র কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ৭২৮ রান করেছেন এ উঠতি তারকা। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে ভারতীয় দলে অভিষেক ঘটে গিলের। পারফরমেন্সে দিয়ে যেভাবে টিম ম্যানেজমেন্টের মন জয় করেছেন তাতে বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে পারেন তিনি।