শেষ হতে চললো ২০১৭ সাল। দারুন এক নাটকীয়তায় ২০১৭ সাল শুরু করেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্ট ম্যাচে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম রেকর্ড পার্টনারশীপ গড়ে টাইগার দলকে এনে দিয়েছিলেন নিজেদের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সাকিবের ২১৭ এবং মুশফিকের ১৫৯ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ দল।
যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেনি টাইগাররা। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৫৩৯ রান সংগ্রহ করা নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ম্যাচ জিতেছিল ১৬০ রানে। ক্রাইসচার্চে অনুষ্ঠিত পরের টেস্ট ম্যাচটি কিউইরা জিতেছিল ৯ উইকেটে।
২০১৭ সালে টাইগারদের আরও ইতিহাস
এ বছর আরেকটি ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে চট্টগ্রাম টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারায় টাইগাররা। ব্যাট হাতে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রানের পাশাপাশি বল হাতে ১৫৩ রানের বিপরীতে অসিদের ১০ উইকেট তুলে নেন এই বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত পরের টেস্টে অবশ্য নাথান লিঁওর ক্যারিয়ার সেরা ১৩/১৫৪ বোলিংয়ে ভর করে ৭ উইকেটে জয়লাভ করে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। এতে টেস্ট সিরিজটি ১-১ ম্যাচে ভাগাভাগি করে দল দুটি।
বছরের মধ্যভাগে কলোম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের মাধ্যমে ফের ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি শেষ হয় ১-১ ম্যাচের সমতা দিয়ে।
ভারতের সর্বজয়ের বছর
দ্বিতীয়বারের মত এক বছরে বিরাট কোহলির হাজার রানের সংগ্রহে বছরজুড়ে জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে ভারত। বাংলাদেশকে একমাত্র টেস্টের আতিথেয়তা দিতে গিয়ে ভারতের করা ৬ উইকেটে ৬৮৭ রানে কোহলির যোগান ছিল ২০৪ রান। ম্যাচটি ছয় উইকেটে জয়লাভ করে স্বাগতিক ভারত।
এরপর সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজটিও ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় ভারত। পুনেতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টটি অসিরা ৩৩৩ রানে জিতে নেয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় টেস্টে জয়ের ভালো সুযোগ পেয়েছিল অসিরা। তবে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ব্যাঙ্গালোরে দ্বিতীয় টেস্টের ২য় ইনিংসে অফ স্পিনার নাথান লিয়ানের (৮/৫০) দুর্দান্ত বোলিং তোপে পড়ে প্রথম ইনিংসে ভারতীয়দের করা ১৮৯ রানের জবাবে ১১২ রানেই অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ফলে ৭৫ রানে জয়লাভ করে ভারত।
রাঁচিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে অসি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের অপরাজিত ১৭৮ রানে ভর করে সফরকারীরা প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৫১ রান সংগ্রহ করলেও জবাবে চেতেশ্বর পুজারার ২০২ ঋদ্ধিমান সাহার ১১৭ রানের সুবাদে ৬০৩ রান সংগ্রহের মাধ্যমে অসিদেরকেই রানের বোঝা চাপিয়ে দেয় ভারত। শেষ পর্যন্ত ড্র হয় ম্যাচটি।
হিমালয় পাদদেশ ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ ও শেষ ম্যাচটি ছিল সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ। ওই ম্যাচে আজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারত জয় পায় আট উইকেটে। এরপর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রোহিত শর্মার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় করে ভারত।
বছরের মধ্যভাগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের মাধ্যমে ইউনিস খান ও মিসবাহ উল হককে আবেগময় বিদায় জানিয়েছে পাকিস্তান। এ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করা ইংল্যান্ড বিশাল ব্যবধানে নিজ দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আরেক সিরিজের প্রথম ম্যাচটি জয়লাভ করেছে ইনিংস ও ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে।
এজবাস্টনে ওই হারে ক্যারিবীয়দের আদৌ টেস্ট খেলার যোগ্যতা রয়েছে কিনা- এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন ক্রিকেট পন্ডিতরা। তবে হেডিংলিতে এসে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ জিতে নেয় ৫ উইকেটে। শেষ পর্যন্ত লর্ডসে এসে সিরিজ নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড।
এদিকে শ্রীলঙ্কা সফরে এসে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে জিম্বাবুয়ে ফের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
বছরের শেষভাগে এসে অর্থ আয়ের নেশায় মরিয়া হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা। এ সময় তারা পরপর পূর্ণাঙ্গ সিরিজে অংশ নেয় ভারতের সঙ্গে। যেখানে তিন ফর্মেটেরই ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রথম সিরিজটি ছিল নিজ দেশে এবং ফিরতি সিরিজ ভারতে। প্রথমে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা ভারতের কাছে যথাক্রমে ৩০৪ রান, এক ইনিংস ও ৫৩ রান এবং এক ইনিংস ও ১৭১ রানের ব্যবধানে হেরে হোয়াইট ওয়াশের লজ্জায় পড়ে।
এরপর তারা ওডিআই সিরিজেও হেরেছে ৫-০ ব্যবধানে। তবে ফিরতি সফরের টেস্ট সিরিজে বৃষ্টির সহায়াতা নিয়ে মাত্র ১-০ ব্যবধানে স্বাগতিক ভারতের কাছে হার মেনেছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে অবশ্য দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতেছে লংকান দলটি।