ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের খবর যারা রাখেন, শুধু তারাই জানেন সেখানে এখন কী চলছে। ঐতিহ্যবাহী একটা প্রতিষ্ঠান নানা কলঙ্কে কলঙ্কিত। এর মধ্যে প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে উঠেছে যৌন হেনস্তার অভিযোগ। ঠিক এমন সময় সাবেক অধিনায়ক এবং ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির এক চিঠিতে আলোচনার ঝড় উঠেছে সেদেশের বোর্ড পাড়ায়।
বোর্ডের কাছে লেখা চিঠিতে সৌরভ জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসনিক প্যানেল (সিওএ) যেভাবে বোর্ড চালাচ্ছে তাতে তিনি দেশের ক্রিকেট নিয়ে ‘গভীর দুশ্চিন্তা’ এবং ‘আতঙ্কে’র ভেতর আছেন।
সৌরভ এও জানিয়েছেন, অনীল কুম্বলের পরিবর্তে রবি শাস্ত্রীকে কোচ করার সময় তাকে অপদস্থ হতে হয়েছিল। কোচ হিসেবে তারা নির্বাচন করেন একজনকে আর প্রশাসনিক প্যানেল থেকে নাম ঘোষণা করা হয় আরেকজনের!
ভারতীয় বোর্ড বর্তমানে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা চালাচ্ছে না। কয়েক বছর আগে শ্রীনির সময় আদালত বোর্ড কর্তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেন। তখন প্রশাসনিক প্যানেল করে দেয়া হয়। তারাই এখন সর্বেসর্বা। সৌরভ এতদিন সরাসরি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। এই প্রথম চিঠির মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন।
সৌরভের সেই চিঠি
প্রিয় সুধীবৃন্ধ,
ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসন কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েই আমি চিঠিটা লিখছি। দেশের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে খেলেছি আমি। আমাদের জীবন জেতা-হারা ঘিরে থাকত। বোর্ডের ভাবমূর্তি আমাদের কাছে অসম্ভব গুরুত্বের ছিল। এখনও আমরা উঠে সবার আগে দেখি, আমাদের দল কী করছে। দেশের ক্রিকেট কী করছে…।
কিন্তু গভীর দুশ্চিন্তার সঙ্গে (হ্যাঁ, আমি দুশ্চিন্তা শব্দটাই ব্যবহার করছি) বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, গত কয়েক বছর ধরে যা চলছে তাতে ক্রিকেটবিশ্বে ভারতীয় ক্রিকেটের যে কর্তৃত্বের জায়গাটা ছিল, তা অনেক নেমে গিয়েছে।
আমি জানি না যৌন হেনস্তা নিয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো কতটা সত্যি। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডকে এই বিতর্ক খুব দুঃখজনক দশায় নামিয়ে দিয়েছে। খুব দীনহীন দেখিয়েছে বোর্ডকে। বিশেষ করে ব্যাপারটাকে সামলাতে গিয়ে যেভাবে তারা নাজেহাল হয়েছে। সিওএ প্রথমে চার সদস্যের কমিটি ছিল। এখন সেটা দুইয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার সেই দুজন সদস্যের মধ্যেও মতবিরোধ।
শুধু তাই নয়। ক্রিকেট মৌসুমের মাঝে ক্রিকেটের নিয়মকানুন পাল্টে যাচ্ছে। যা জীবনে কেউ কখনও শোনেনি। বিভিন্ন কমিটিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, চূড়ান্ত অসম্মানজনকভাবে তা পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কোচ নির্বাচনে আমার ব্যক্তিগত যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা এক কথায় শকিং। সেটা নিয়ে যত কম বলা যায়, তত ভালো।
ভারতীয় ক্রিকেটের এই বিশাল অনুরাগীসংখ্যা একদিনে তৈরি হয়নি। অসাধারণ সব ক্রিকেটারদের সঙ্গে দুর্দান্ত সব প্রশাসকের কঠিন পরিশ্রমের কারণে হয়েছে। যাদের সম্মিলিত চেষ্টা মাঠে হাজার হাজার লোক এনেছে। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট বড় বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আশা করি, লোকজন সেটা বুঝছে…।’