কেবল প্রতিদ্বন্দিতা নয়, এবারের আসরে বিশেষ কিছু অর্জন করতে চান এশিয়া কাপের শুরুতেই ঘোষনা দিয়েছিলেন আফগানিস্তানের অধিনায়ক আসগর আফগান।
টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারলেও দলটি এশিয়া কাপ দিয়ে আগেভাগেই সতর্ক করে দিয়েছে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহনকারী দলগুলোকে। গত মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে টাই করেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তান। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বিশ্ব র্যাংকিংয়ের দ্বিতীয়স্থানধারী দলের বিপক্ষে এমন একটি ম্যাচ উপহারের মাধ্যমে আফগানরা প্রমান করেছে তারা এগিয়ে আসছে।
এর আগে টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে শ্রীলংকাকে ৯১ রানে এবং বাংলাদেশকে ১৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোর-এ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে আফগানিস্তান। এই পর্বে তারা পাকিস্তানের কাছে মাত্র তিন উইকেট এবং বাংলাদেশের কাছে তিন রানে হেরে ফাইনালে উঠার সুযোগ হারায়। দুটি ম্যাচেই নিষ্পিত্তি হয়েছে শেষ ওভারে।
দলটির অধিনায়ক আসগর মনে করেন, তারা ইতোমধ্যে ২০১৯ বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করতে যাওয়া বড় দলগুলোকে সতর্ক বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। আগামী বছর ৩০ মে থেকে ১৪ জুলাই ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ।
দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে আসগর বলেন,‘দলের এমন পারফর্মেন্স আমরা গর্বিত। আমরা আমাদের মাথা উর্ধে তুলে রাখতে পেরেছি। আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহনকারী দল গুলোর প্রতি আমাদের সতর্ক বার্তা।
আফগানিস্তানের এই উত্থানের নেপথ্য রয়েছে একটি করুন কাহিনী। ১৯৭৮ সালে রাশিয়ার আগ্রাসনের শিকার হয়ে লাখ লাখ লোক দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের সীমান্ত বর্তী এলাকা পোশোয়ারের শারনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয় ।
আর সেই পাকিস্তানে অবস্থানকালেই ক্রিকেটের সংস্পর্শে আসে আফগান তরুনরা। সেখানে শিক্ষা নেয়া ক্রিকেট ২০০৯ সালে চালু হয় আফগানিস্তানে। এক বছর পর তারা প্রবেশ করে টি-২০ ক্রিকেটে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পায় আফগানিস্তান।
উজ্জল ভবিষ্যৎ:
চলতি বছরের শুরুর দিকে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্টিত জুনিয়র বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল আফগানিস্তান। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্টিত জুনিয়র এশিয়া কাপের শিরোপা জয় করে দলটি। যেখানে অংশ নিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মত শক্তিশালী দলগুলো। এর মাধ্যমে আফগানিস্তান তাদের উজ্ঝল ভবিষ্যতের জানান দিয়েছে।
আসগরের মতে বড় দলগুলোর বিপক্ষে জয়ের স্বপ্ন পূরনের আত্মবিশ্বাস তারা পেয়ে গেছেন। ২০১০ সালে ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জে টি-২০বিশ্বকাপে মাধ্যমে ক্রিকেটের বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া আসগর বলেন, ‘আমি শুধু চেস্টা করছি দলটিকে সবদিক থেকে বড় দলগুলোর সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে। আমরা বড় দলগুলোকে হারাতে চাই। আর এভাবেই আমরা উন্নতি করতে চাই। দিন শেষে আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন হচ্ছে জয়লাভ করা।’
ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টি-২০ লীগ আফগান ক্রিকেটারদের দক্ষতা প্রমানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তারা নতুন এক সুপার স্টার হিসেবে পেয়েছে লেগ স্পিনার রশিদ খানকে। যিনি ৪৪ ম্যাচ থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম ১০০ উইকেট শিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজ দেশে তিনি এখন রোল মডেল। এখন আফগানদের এক নম্বর খেলা হচ্ছে ক্রিকেট।
চলতি বছর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ উইকেট শিকার করেছেন রশিদ। আসগর বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য এই লীগ গুলো খুবই গুরুত্বপুর্ন। আমাদের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার বিভিন্ন লীগে খেলছে। এর মাধ্যমে ড্রেসিং রুমে তারা অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সংস্পর্শ পাচ্ছে। যা তাদের জন্য খুবই সহায়ক।’
চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্স কোচ হিসেবে যোগদানের পর আফগান দলের ব্যাটিং আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে।
আসগার বলেন,‘ অবশ্যই , আমরা ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছি। এশিয়া কাপের জন্য এটি ঠিক আছে। তবে বিশ্ব কাপের মত মেগা ইভেন্টের জন্য ব্যাটিংয়ের আরো উন্নতি ঘটাতে হবে।’
মঙ্গলবার অনুষ্টিত ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে বিশ্রামে পাঠানোর কারণে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক দলনেতা মহেন্দ্র সিং ধোনি। তিনিও মনে করেন আফগান দলের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ধোনি বলেন, ‘আমার মনে করি তাদের ক্রিকেটের দারুন উন্নতি হয়েছে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকে তাদের ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিকতা দেখলেই সেটি বুঝা যায়। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়।’