একি দেখালো আফগানিস্তান! এ যেন আফগানিস্তান বনাম ভারতের খেলা নয়, খেলা হলো ভারত- পাকিস্তানের! সুপার ফোরের নিজেদের শেষ ম্যাচে ধোনির ভারতে (আজকের ম্যাচে ধোনি অধিনায়ক ছিলেন) ঘামিয়ে ছাড়লো আফগানরা। শেষ পর্যন্ত কেউ জিততে পারেনি। ম্যাচটি টাই হয়েছে।
একেই বলে ক্রিকেটীয় নাটকীয়তা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই বলে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১ রান। ব্যাট হাতে ক্রিজে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। বোলার রশিদ খানের ওভারের পঞ্চম বল পুল করতে গিয়ে টাইমিং ঠিক করতে না পারায় মিড উইকেটে ক্যাচে ধরা পড়েন। নজিবুল্লাহ জাদরান যখন ক্যাচটি তালুবন্দী করেন তখন ম্যাচ শেষ। রান ২৫২, অর্থাৎ সমানে সমান।
ফাইনাল নিশ্চিত করা ভারত আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাঁচটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজিয়েছিল ভারত। এশিয়া কাপে নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার পরিবর্তে অধিনায়ক ছিলেন ধোনি।
আফগানিস্তানের ১৫৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভারতের শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ৭ রানের। হাতে ছিল মাত্র একটি উইকেট। রশিদ খানের দ্বিতীয় বলটি বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে লক্ষ্যটা কমিয়ে ফেলেন ভারত। পরের বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে দিলেন মোহাম্মদ খলিলকে। তিনিও একটি সিঙ্গেল নিয়ে নিলেন। আবারও স্ট্রাইকে জাদেজা। এবার তো জয় নিশ্চিত। আর ঠেকানোর সাধ্য কার? কিন্তু রশিদের গুগলিতে বিভ্রান্ত ঠিকই হলেন জাদেজা। ক্যাচটা তুলে দিলেন। জিততে পারলো না ভারত। আফগানরা জিততে না পারলেও বুঝিয়ে দিলো, সত্যিই তারা হেলাফেলার পাত্র নয়।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৫২ রান করেছে আফগানিস্তান। শেহজাদ ১১৬ বলে ১২৪ রান করেন।
ব্যাট হাতে নেমেই ভারতীয় বোলারদের উপর মারমুখী হয়ে উঠেন আফগানিস্তানের ডান-হাতি ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ। রান তোলার কাজটা একাই করেছেন তিনি। আরেক ওপেনার জাভেদ আহমাদি ছিলেন দর্শক। ফলে ইনিংসের ৫০তম বলেই অর্ধশতক স্পর্শ করে আফগানিস্তান। এর মধ্যে শেহজাদেরই রান ছিলো ৪৫।
নবম ওভারে জীবন পেয়েই নিজের হাফ-সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন শেহজাদ। ৩৭ বলে অর্ধশতকে পা দিয়েও ক্ষান্ত হননি শেহজাদ। আহমাদিকে নিয়ে দলের রানের চাকা একাই ঘুড়িয়েছেন তিনি। তবে দলীয় ৬৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। আহামাদিকে ৫ রানের থামিয়ে দেন ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা।
আফগানিস্তানের প্রথম উইকেট তুলে নিয়ে খেলায় ফেরার পথ পায় ভারত। দলীয় ৮১ ও ৮২ রানে ৩টি উইকেট হারায় তারা। রহমত শাহকে ৩ রানে জাদেজা, হাসমতউল্লাহ শাহিদি ও অধিনায়ক আসগর আফগানকে শূণ্য রানে বিদায় দেন কুলদীপ।
৮২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া আফগানিস্তানকে সামনের এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন শেহজাদ। সাথে সঙ্গী হিসেবে পান গুলবাদিন নাইবকে। নাইব ধীরলয়ে থাকলেও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির দোড় গোড়ায় পৌঁছে যান শেহজাদ ।
২৯তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শেহজাদ। এ সময় দলের স্কোর ১৩১ দাঁড়ায়। যার মধ্যে ১০৩ রানই অবদান শেহজাদের। তার সেঞ্চুরি পাওয়া ওভারেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন নাইব। শেহজাদের সাথে পঞ্চম উইকেটে ৫০ রান যোগ করা নাইব ব্যক্তিগত ১৫ রানে চাহারের শিকারে পরিনত হন।
এরপর ক্রিজে শেহজাদের সাথে জুটি বাধের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। এই দু’জন ৫৫ বলে ৪৮ রান যোগ করেন তারা। সেঞ্চুরিয়ান শেহজাদকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে জুটি ভাঙ্গে যাদব । ১১টি চার ও ৭টি ছক্কায় ১২৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসের পথে শেহজাদ বল খেলেছেন ১১৬টি।
শেহজাদ যখন ফিরেন তখন আফগানিস্তানের স্কোর ছিলো ৩৭ দশমিক ৫ বলে ৬ উইকেটে ১৮০ রান। শেষ দিকে দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে দলকে লড়াকু স্কোর এনে দেন নবী। ১২তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৬ বলে ৬৪ রান করেন নবী। এছাড়া নাজিবুল্লাহ জাদরান ২০ বলে ২০, রশিদ খান ১৯ বলে ১২ ও আফতাব ৬ বলে ২ রান যোগ করেন। ভারতের জাদেজা ৩টি ও কুলদীপ ২টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ৫০ ওভারে ২৫২/৮ (শাহজাদ ১২৪, গুলবদিন ১৫, নবী ৬৪, নাজিবউল্লাহ ২০, রশিদ ১২*; খলিল ১/৪৫, চাহার ১/৩৭, জাদেজা ৩/৪৬, কুলদীপ ২/৩৮, কেদার ১/২৭)
ভারত : ওভারে ৪৯.৫ ওভারে ২৫২ (রাহুল ৬০, রাইডু ৫৭, কার্তিক ৪৪, কেদার ১৯; আফতাব ২/৫৩, মুজিব ০/৪৩, গুলবদিন ০/৪১, নবী ২/৪০, রশিদ, আহমাদি ১/১৯)
ফল : ম্যাচ টাই
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : মোহাম্মদ শাহজাদ।