ভারত বনাম পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ মানে টানটান উত্তেজনার ম্যাচ। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুবাইয়ে এশিয়া কাপের এমন একটি ম্যাচে পরস্পরের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে উপ-মহাদেশের এ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল দু’টি।
আসন্ন এ ম্যাচকে সামনে রেখে ৫টি স্মরণীয় মুহূর্তের অতীত ঘটনা তুলে এনেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। যার সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৭ সালের জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। ওই ম্যাচে ভারতকে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছে পাকিস্তান।
কালো দিন
১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর পাকিস্তানের শিয়ালকোটে ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ওই দিনেই নয়াদিল্লিতে দুইজন দেহ রক্ষীর গুলিতে নিহত হন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। খবরটি যখন প্রচরিত হল তখন দিলিপ ভেংসরকারও রবি শাস্ত্রী মিলে ভারতীয় রানকে সমৃদ্ধ করছিলেন। তখনই পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি জিয়া উল হক ম্যাচটি বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। ভারতীয় দলের অধিনায়ক চেয়েছিলেন ম্যাচটি বন্ধ হয়ে যাক।
পরে ভেংসরকার ইন্ডিয়া টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘তখন আমাদের এমন কান্না পাচ্ছিল যে ম্যাচটিতে আর মনোসংযোগ ঘটাতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বাতিল করা হয়। ত্রিশ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এখনো ওই ঘটনাটি ভুলতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রীর একাদশ
১৯৮৫ সালের ২২ মার্চ ভারতের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ রানে ৬ উইকেট দখল করেছিলেন ইমরান খান। এটিই ছিল প্রতিবেশী দেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সেরা বোলিং ফিগার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওই ম্যাচে তিনি ১২৫ রানেই আটকে দেন ভারতকে । জবাবে পাকিস্তানের ব্যাটিং আটকে যায় মাত্র ৮৭ রানে। তবে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ঠিকই জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
তলোয়াড়ী ছক্কা
ম্যাচটির কথা কখনো ভুলতে পারবে না ভারত। ঘটনাটি যেমন ভারতীয়দের কাছে হতাশার, তেমনি মধুময় পাকিস্তান দলের জন্য। ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল শারজায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডেতে ম্যাচে জয়ের জন্য শেষ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। বলটি করতে এগিয়ে আসেন ভারতীয় বোলার চেতন শর্মা। তার ফুলটসের বলটি সোজা ছক্কা মেরে পাকিস্তানকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ‘রান মেশিন’ খ্যাত জাবেদ মিয়াঁদাদ। ওই ঘটনায় জাতীয় বীর-এ পরিণত হন মিয়াঁদাদ। উপহার হিসেবে পান একটি সোনার তলোয়াড়। আর দেশে ফিরে অপমান ও জনরোষের মুখে পড়েন ভারতীয় বোলার শর্মা।
অশ্রুসিক্ত টেন্ডুলকার
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত শচিন টেন্ডুলকারের হাঁকানো অনেক সেঞ্চুরি দলকে সফরতা এনে দিলেও ১৯৯৯ সালে চেন্নাইয়ে তার হাঁকানো সেঞ্চুরি কোন কাজেই আসেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই টেস্ট ম্যাচে জয়ের জন্য ২৭১ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাটিং করা ভারতের হয়ে টেন্ডুলকার দলকে বিজয়ের দিকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৩৬ রান করে দলকে এগিয়ে নেয়া শচিনকে এক পর্যায়ে সাজ ঘরে ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানি অব স্পিনার সাকলাইন মুস্তাক। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ১২ রানে হেরে যায় ভারত।
ওই ঘটনায় স্বাগতিক দর্শকরা দাঁড়িয়ে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানকে অভিবাদন জানায়। এতে ভেঙ্গে যায় টেন্ডুলকারের হৃদয়। বিষয়টি শচিনকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছিলেন যে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে তিনি আর ড্রেসিং রুম থেকে বের হননি।
মিসবাহর ত্রুটিপূর্ণ আঘাত
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোনানেসবার্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভালভাবেই নিজেদেও মানিয়ে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে ওই ম্যাচে মিসবাহ উল হকের ১৫৮ রানের আগ্রাসী ব্যাটিং তাদেরকে এনে দেয় স্মরণীয় এক জয়। তবে ম্যাচের শেষ ওভারে জোগিন্দির শর্মার একটি বলে প্যাডেল শট খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। বলটি উপরের দিকে উঠে যায় এবং আশ্রয় নেয় ভারতীয় ফিল্ডার শ্রীশান্তকুমারান শ্রীমান্তের হাতে। এতে মাহেন্দ্র সিং ধোনি এমন এক উল্লাসে ফেঠে পড়েছিলেন, যেন তিনি জীবনে কখনো মিসবাহকে আউট করার সুযোগ পাননি।