শত বছরেরও বেশি সময় পর আবারও অলিম্পিকে ফিরলো ক্রিকেট। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এ খেলাটি ২০২৮ লস এ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক গেমসে পাঁচটি নতুন ইভেন্টের মধ্যে অন্যতম একটি ইভেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ক্রিকেট এলএ ২৮’এ এই অন্তর্ভূক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আইওসি সভাপতি থমাস বাখ মুম্বাইয়ে কার্যনির্বাহী বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে বলেছেন বোর্ড কর্তারা এলএ আয়োজকদের প্রস্তাবিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে নতুন আরো চার ইভেন্ট বেসবল/সফটবল, ফ্ল্যাগ ফুটবল, স্কোয়াশ ও ল্যাক্রসের সাথে অনুমোদন দিয়েছেন।
যদিও চূড়ান্ত ভাবে অলিম্পিকে জায়গা পেতে হলে আরও একটি বাঁধা পেরুতে হবে ক্রিকেটকে। সোমবার আইওসির সেশনে সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদন মিলবে।
অলিম্পিক প্রধান বলেছেন, “আইওসির জন্য নতুন এ্যাথলেট ও নতুন সমর্থক গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই দারুণ আনন্দের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ক্রমাগত জনপ্রিয়তা আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৮ সালে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের স্বাগত জানাতে আমরা উন্মুখ হয়ে আছি।”
লস এ্যাঞ্জেলস আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে পুরুষ ও নারী উভয় বিভাগে ছয় দলের ক্রিকেট ইভেন্টের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। স্বাগতিক দেশ হিসেবে এর মধ্যে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও কয়টি দল এখানে অংশ নিবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। অথবা বাছাই প্রক্রিয়া কি হবে সেটা অনিশ্চিত। সোমবারের আগ পর্যন্ত কোন কিছুই নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছেনা।
সর্বশেষ ১৯০০ প্যারিস অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভূক্ত ছিল। ওই আসরে ফ্রান্সকে পরাজিত করে স্বর্ণ জয় করেছিল ব্রিটেন। অলিম্পিক মুভমেন্টের অংশ হিসেবে ও সারা পৃথিবীতে ক্রিকেটের ক্রমাগত জনপ্রিয়তায় আবারো অলিম্পিক ইভেন্ট হিসেবে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে আইওসি।
আর্থিক দিকটি বিবেচনা করেও অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভূক্তি সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইতোমধ্যেই দক্ষিন এশিয়ান অঞ্চলে দারুন লোভনীয় এই ক্রীড়ায় পরিনত হয়েছে ক্রিকেট। বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানী সমর্থকদের মাঠে উপস্থিতি পুরো ক্রিকেট বিশ্বের আলোড়ন তুলেছে।
তবে সব ছাপিয়ে ক্রিকেটের এই মুহূর্তে সংক্ষিপ্ত ভার্সনই সর্বাধিক জনপ্রিয়। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আকর্ষণতো বিশ্ব জুড়েই ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব তারকারাই আইপিএলএ অংশ নিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে আর্থিক ভাবেও দীর্ঘদিন ধরে লাভবান হয়ে আসছে ভারত। সম্প্রচার ও বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতা থেকেই তাদের মূল আয় হয়ে থাকে।
বাখ মনে করেন অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভূক্ত হলে এটা কার্যত ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাপিয়ে সারা বিশ্বের এগিয়ে যাবে। আইসিসি সদস্য দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য দেশও এর প্রতি আকৃষ্ট হবে।
এ সম্পর্কে বাখ বলেছেন, “এটা অনেকটাই উইন-উইন সিচুয়েশন। এর মাধ্যমে ক্রিকেট সনাতনী পরিবেশের বাইরে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবার সুযোগ পাবে।”
একই সাথে বাখ আরও বলেছেন, ১৯৯৬ আটালান্টা গেমসের পর প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রস্তাবিত নতুন ইভেন্টগুলো বেশ মানিয়ে নিতে পারবে, “প্রস্তাবিত পাঁচটি ক্রীড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সংষ্কৃতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার পথে আছে। এর মাধ্যমে এলএ ২৮ একটি আইকনিক গেমসে পরিণত হবে। নতুন এ ইভেন্ট এলএ ২৮’এ ভিন্ন এক মাত্রা দিবে।”