দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে পরাজিত হয়েছে টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলেও দ্বিতীয় ম্যাচটি ৮৬ রানে জিতেছিলো নিউজিল্যান্ড।
তিন ম্যাচ সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতছে নিউজিল্যান্ড। সর্বশেষ ২০০৮ সালে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল কিউইরা। এরপর টানা দু’টি সিরিজে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩৪.৩ ওভারে ১৭১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন শান্ত। জবাবে উইল ইয়ংয়ের ৭০ ও হেনরি নিকোলসের অনবদ্য ৫০ রানে টার্গেট স্পর্শ করে নিউজিল্যান্ড।
দ্বিতীয় ম্যাচের একাদশ থেকে চারটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। সর্বশেষ এশিয়া কাপে খেলা শান্ত ছাড়া মুশফিকুর রহিম, শরিফুল ইসলাম এবং অভিষেক হওয়া জাকির হাসানকে নিয়ে সাজানো হয় একাদশ।
ইনিংস শুরু করে তৃতীয় ওভারে দলীয় ৮ রানের মধ্যে বিদায় নেন জাকির ও তানজিদ হাসান তামিম। দ্বিতীয় ওভারে পেসার এডাম মিলনের বলে বোল্ড হন ১ রান করা জাকির। পরের ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানে আউট হন তানজিদ।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠার চেষ্টা করেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। ৩টি বাউন্ডারিতে ভালো শুরু করেন হৃদয়। কিন্তু ইনিংসটা বড় করতে পারেননি তিনি। মিলনের বলে উইল ইয়ংকে ক্যাচ দিয়ে ১৭ বলে ১৮ রান করে ফিরেন হৃদয়।
দলীয় ৩৫ রানে হৃদয় ফেরার পর ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। পাল্টা আক্রমণে দ্রুত রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন শান্ত। ১২তম ওভারের মধ্যে ৬টি চার মারেন তিনি। ১৩তম ওভারে ছক্কায় বলকে প্রথম সীমানা ছাড়া করেন মুশফিক। পরের ওভারে দ্বিতীয় ছক্কা আদায় করেন তিনি। ২টি ছক্কায় দারুন আত্মবিশ্বাসী মুশফিক ১৬তম ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন।
নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক পেসার লুকি ফার্গুসনের বলে বোল্ড হওয়া মুশফিক ২৫ বলে ২১ রান করেন। শান্তর সাথে ৫৯ বলে ৫৩ রান যোগ করেন তিনি। এরপর শান্তকে নিয়ে দলের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়াারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ৫৫ বল খেলা শান্ত। নিজের সর্বশেষ দুই ইনিংসে ৮৯ ও ১০৪ রান করেছিলেন তিনি।
২টি চারে উইকেট সেট হয়েও বেশি দূর যেতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। মিলনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ২৭ বলে ২১ রান করা অভিজ্ঞ এ ব্যাটার। এই ইনিংসের সুবাদে ৫ হাজার রান ক্লাবে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহর মতো ২টি চারে ইনিংস শুরু করে বোল্টের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ১৩ রানে আটকে যান মাহেদি হাসান। ১৫৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে উইকেটে ছিলেন শান্ত। কিন্তু সতীর্থদের বিদায়ে ৩২তম ওভারে খেই হারিয়ে ফেলে অফ-স্পিনার কোল ম্যাককোঞ্চির বলে রিভার্স করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন শান্ত। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১০টি চারে ৮৪ বলে ৭৬ রান করা শান্ত।
১৬৮ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে শান্তর আউটের পর বাকী ৩ উইকেটে মাত্র ৩ রান পেয়ে ৩৪ দশমিক ৩ ওভারে ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। এসময় হাসান মাহমুদ ১, নাসুম আহমেদ ৭ ও শরিফুল ইসলাম ১ রানে আউট হন। নিউজিল্যান্ডের মিলনে ৩৪ রানে ৪টি, বোল্ট-ম্যাককোঞ্চি ২টি করে এবং ফার্গুসন-রাচিন রবীন্দ্র ১টি করে উইকেট নেন।
১৭২ রানের টার্গেটে ভালো শুরু পায় নিউজিল্যান্ড। ৯ ওভারে ৪৮ রান তোলেন কিউই দলের দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও ইয়ং। ইনিংসের দশম ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার শরিফুল ইসলাম। শর্ট বলে ডিপ মিড উইকেটে নাসুমকে ক্যাচ দিয়ে শরিফুলের শিকার হন ৬টি চারে ২৮ রান করা অ্যালেন।
অ্যালেনের বিদায়ে উইকেটে এসে প্রথম বলেই অভিষিক্ত ডিন ফক্সক্রফটের উইকেট উপড়ে ফেলেন শরিফুল। অভিষেকেই গোল্ডেন ডাক পাওয়া পঞ্চম নিউজিল্যান্ড ব্যাটার এখন ফক্সক্রফট।
পরপর দুই বলে অ্যালেন ও ফক্সক্রফটকে শিকার করে হ্যাটট্টিকের সুযোগ তৈরি করেন শরিফুল। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি টাইগার পেসারে। ৪৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরান ইয়ং ও নিকোলস। ২০তম ওভারে পেসার খালেদ আহমেদের বলে লেগ বিফোর আউট হলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান নিকোলস।
২৪তম ওভারে দলের রান ১শ ও জুটিতে ৫০ পূর্ণ করেন ইয়ং ও নিকোলস। পরের ওভারে ওয়ানডেতে পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ইয়ং। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে ইয়ংকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন স্পিনার নাসুম। আউট হওয়ার আগে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮০ বলে ৭০ রান করেন ইয়ং। তৃতীয় উইকেটে ১১৮ বলে ৮১ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডের জয়ের পথ সহজ করেন তারা।
চতুর্থ উইকেটে ৩৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪১ রান তুলে ৯১ বল হাতে রেখে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন নিকোলস ও উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেল। ওয়ানডেতে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন নিকোলস। ৮৬ বল খেলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন নিকোলস। ১৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন ব্লান্ডেল। বাংলাদেশের শরিফুল ২টি ও নাসুম ১টি উইকেট নেন।