হঠাৎ করেই ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্বে থাকা তামিম ইকবাল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ চলাকালেই কান্না জড়িত কণ্ঠে বিদায়ের বার্তা জানিয়ে দিলেন তামিম।
২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তামিম। এরপর একই বছরের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অভিষেক হয়েছিল। আর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ডুনেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামেন তামিম।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিদায় বেলায় কান্না জড়িত কণ্ঠে তামিম বলেন, “বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য ক্রিকেট খেলেছি আমি। এই ১৬ বছরে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি-না, আমি নিশ্চিত নই।”
অবসর ঘোষণাকালে তামিম আরও বলেন, “সাধারণত এ রকম পরিস্থিতিতে বক্তব্য লিখে আনে মানুষজন। আমি আসলে ওরকমভাবে ওতটা প্রস্তুত নই। সারা জীবনই যখনই কোথাও আমি বক্তব্য দিয়েছি বা কিছু বলি কোন কিছু লিখে নিয়ে যাই না।”
তিনি বলেন, “আমি খুব বেশি বড় করবো না। ছোট রাখার চেষ্টা করবো। গতকাল (বুধবার, ৫ জুলাই) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এ মুহূর্তেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, “এটার পেছনে হঠাৎ করে কোন সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি। এটার ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে। যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এমন না যে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা নিয়ে আমি বেশ কয়েক দিন ধরে কথা বলছিলাম। এমনকি পরিবারের সাথেও কথা বলছি। আমার মনে হয়, সরে দাঁড়ানো ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের এটাই উপযুক্ত সময়।”
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তামিম বলেন, “আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে হবে, আমার মনে হয় এটা আপনাদের প্রাপ্য। আমি সব সময় একটা কথা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি নিশ্চিত নই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ১৬ বছর আমি তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি-না।”
তামিম বলেন, “আরও অনেককে ধন্যবাদ জানাতে হবে আমার। সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, তার নাম আকবর খান। তার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলে টুর্নামেন্ট খেলা। তার পরিবারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন, যার কাছে আমি ছোট বেলা থেকে অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ জানাই।”
এরপর দেশের হয়ে ৭০ টেস্টে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫১৩৪ রান করেন তামিম। যা টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তামিমের। ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ২৪১ ওয়ানডেতে ৮৩১৩ রান করেন তিনি। যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান।
ব্যাট হাতে ৭৮টি টি-টোয়েন্টিতে ১টি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৭৫৮ রান করেছেন তামিম। বাংলাদেশের পক্ষে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান। অধিনায়ক হিসেবে ১টি টেস্ট, ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। তার অধীনে একমাত্র টেস্টে হার এবং ওয়ানডেতে ২১টিতে জয়, ১৪টিতে হার ও ২টি পরিত্যক্ত হয়।