আইপিএল ইতিহাসের সাতজন টাইগার ক্রিকেটার

মুহাম্মাদ তাওহীদুর রহমান মুহাম্মাদ তাওহীদুর রহমান প্রকাশিত: ১১:২৮ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
আইপিএল ইতিহাসের সাতজন টাইগার ক্রিকেটার

ক্রিকেট বিশ্বের সব থেকে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। কোটি কোটি টাকা ছড়াছড়ি হয় এই টুর্নামেন্টে। তাইতো অনেক ক্রিকেটারদের স্বপ্ন থাকে আইপিএল খেলা। বিশ্বের নামীদামী তারকা খেলোয়াড়দের মধ্যে বাংলাদেশেরও সাত জন ক্রিকেটার আইপিএল-এ দল পেয়েছে।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, আইপিএল ইতিহাসের সাতজন টাইগার ক্রিকেটার কে

 

১. আব্দুর রাজ্জাক (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর)

২০০৮ সালে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। আসরের প্রথম নিলামে, প্রথম টাইগার হিসাবে দল পান স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। অকশনে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (বর্তমান মূল্য প্রায় ৫২ লাখ টাকা) দিয়ে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর কিনেছিল টাইগার স্পিনারকে।

আইপিএলের প্রথম আসরে আব্দুর রাজ্জাকের কেবল একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়। শেন ওয়ার্নের দল রাজস্থান রয়েলস-এর বিপক্ষে খেলতে নামেন তিনি। যেখানে দুই ওভার বল করেন। আর কোন উইকেট না পেয়ে, খরচ করেন ২৯ রান। এরপর আর কোন ম্যাচে খেলতে দেখা যায়নি টাইগার এই স্পিনারকে।

 

২. মোহাম্মাদ আশরাফুল (মুম্বাই ইন্ডিয়ানস)

আইপিএল-এর দ্বিতীয় আসরে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস দলে জায়গা পান মোহাম্মাদ আশরাফুল। তার ভিত্তিমূল্য ছিল ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার। এই দাম দিয়ে শচীন টেন্ডুলকারের দলে খেলার সুযোগ হয় তার।

যদিও আইপিএলে আশরাফুলের অভিষেক হওয়ার ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। তবে পরের ম্যাচে দিল্লী ডেয়ারডেভিলস এর বিপক্ষে টপ অর্ডারে খেলার সুযোগ পান তিনি। ব্যাট হাতে ১০ বল খেলে ক্যাচ তুলে দেন উইকেট রক্ষকের কাছে। দিনেশ কার্তিকের সফল কিপিংয়ে মাত্র ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন টাইগার এই ব্যাটার। এরপর আর কোন ম্যাচে খেলতে দেখা যায়নি আশরাফুলকে।

 

৩. মাশরাফি বিন মর্তুজা (কলকাতা নাইট রাইডার্স)

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় মৌসুমে আরও এক টাইগার ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ হয়। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মাশরাফিকে নিয়ে রীতিমতো টানাটানি করে কয়েকটি দল। তবে সবাইকে তাক লাগিয়ে ৬ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করে নড়াইল এক্সপ্রেসকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স।

আশরাফুলের মতো ম্যাশের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়। আর পরের ম্যাচে সুযোগ পেয়েও কেকেআর সমর্থকদের আশা জাগাতে পারেননি তিনি। ৫৮ রান খরচ করেন, মাত্র চার ওভার করে। এমন হতাশা জনক বোলিংয়ের পর তাকে আর কেকেআরের জার্সিতে মূল একাদশে দেখা যায়নি।

 

৪. সাকিব আল হাসান (কলকাতা নাইট রাইডার্স, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ)

আইপিএল-এ মাশরাফি-আশরাফুলদের সাথে নিলামে থাকলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোর নজর কাড়তে ব্যর্থ ছিল সাকিব। তাইতো শুরুর কয়েকটি সিজনে টাইগার অলরাউন্ডার ছিল সবার আড়ালে। তবে ২০১১ সালে তার প্রতি নজর যায় শাহরুখের দলের। ১ কোটি ৯৫ লাখ রুপি দিয়ে সাকিবকে কিনে কলকাতা নাইট রাইডার্স।

সেবার দারুণ ফর্মে ছিল টাইগার অলরাউন্ডার। ৭ ম্যাচে নিয়েছিল ১১ উইকেট। যেখানে বোলিং ইকোনমি ছিল মাত্র ৬.৮৬। তবে বোলিংয়ের মতো ব্যাট হাতে কতটা সার্থক ছিলেন না তিনি। ১৩১.৮১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে সংগ্রহ করেছিলেন ২৯ রান।

প্রথম বারের দারুণ ফর্মের পর টানা সাত সিজন শাহরুখের দলে থাকেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে খেলতে যাওয়ায় কোন ম্যাচ খেলা হয়নি সাকিবের। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বল হাতে তার অর্জন, ৪৩ ম্যাচে ৪৩ উইকেট। যেখানে তার বোলিং ইকোনমি ছিল প্রায় ৭.১৬।

২০১৭ এর আইপিএল আসরে কলকাতার হয়ে সাকিব খেলেছেন কেবল একটি ম্যাচ। এর পরের মৌসুমে সাকিবের নতুন ঠিকানা হয় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। অরেঞ্জ আর্মির জার্সিতে পরপর দুই বছর খেলার সুযোগ হয় তার। ২০১৮ ও ২০১৯ আইপিএল আসরে হায়দ্রাবাদের হয়ে ২০ ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। ৮.১৬ বোলিং ইকোনমিতে তার ঝুলিতে জুড়েন ১৬টি উইকেট।

এরপর আবারও ২০২১, ২০২৩ আইপিএল মৌসুমে নাইট রাইডার্স শিবিরে ক্যামব্যাক হয় সাকিবের। আইপিএল-এ এখন পর্যন্ত তিনি  খেলতে নেমেছেন মোট ৭১ বার। ১২৪.৪৯ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭৯৩ রান। এছাড়া ৭.৪৪ ইকোনমিতে বল করে উইকেট পেয়েছেন ৬৩টি।

 

৫. তামিম ইকবাল (পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া)

২০১২ সালের আইপিএল অকশন দল পান তামিম ইকবাল। প্রথম দফায় ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় দফায় টাইগার ওপেনারকে কিনে নেয় পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া।

২০১২-১৩ মৌসুমে বাংলাদেশের থেকে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মুর্তজা, আব্দুর রাজ্জাক, ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেন, জহুরুল ইসলাম ও নাসির হোসেন ছাড়াও নিলামে ডাকা হয় তাকে ।

তবে তামিম ছাড়া অন্যরা অবিক্রীত থাকে। যদিও দল পেয়েও আইপিএল-এ একটিও ম্যাচ খেলা সুযোগ হয়নি  টাইগার এই ওপেনারের। 

 

৬. মোস্তাফিজুর রহমান ( সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, রাজস্থান রয়্যালস, দিল্লি ক্যাপিটালস)

২০১৬ সালে আইপিএল-এ দল পেয়ে বাজিমাত করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১.৪ কোটি রুপিতে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ দলে নেওয়া হয় তাকে। এরপর ৬.৯০ ইকোনমিতে বল করেন ৬১ ওভার। ১৬ ম্যাচে তার উইকেট দাড়ায় ১৭টি। আসরের চ্যাম্পিয়নও হয় ফিজের দল। টুর্নামেন্টের ইমার্জিং খেলোয়াড়ের খেতাব পান তিনি।

পরের সিজনেও টম মুডির দলে খেলেন মোস্তাফিজ। তবে ২০১৭ আসরে মাত্র একটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পান। হায়দ্রাবাদ দলে অন্যান্য বোলার থাকার কারণে মোস্তাফিজকে ছেড়ে দেয় তারা। সেই সুযোগে ২০১৮ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এর জার্সিতে খেলতে নামেন তিনি।

এরপর আইপিএল-এর আড়ালে পড়লেও ২০২১ সালে রাজস্থান র‍য়্যালস হয় মোস্তাফিজের নতুন ঠিকানা। তবে এখানে স্থায়ী হতে পারেননি তিনি। গত সিজনে দিল্লি ক্যাপিটালস দলের অন্যতম পেস বোলারের দায়িত্ব পালন করেন ফিজ। আর তাই এবারের আসরেও রিশব পান্তের দলে রাখা হয় মোস্তাফিজকে।

 

৭. লিটন দাস (কলকাতা নাইট রাইডার্স)

আইপিএল-এর ১৬ তম আসরে সপ্তম টাইগার ক্রিকেটার হিসাবে দল পেলেন লিটন দাস। কোচির মিনি নিলামের প্রথম দফায় তাকে নিয়ে আগ্রহ না দেখালেও দ্বিতীয় দফায় ভিত্তি মূল্যেই তাকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স।

সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন লিটন দাস। অ্যাডিলেইড ওভালে সেই ম্যাচে ওপেনিং করতে নেমে ব্যাট হাতে রীতিমতো ঝড় তুলেন তিনি। মাত্র ২১ বলেই তুলে নেন অর্ধশতক রান। তার এই ঝড়ো ইনিংস ও  দুর্দান্ত ফর্মের কথা মাথায় রেখেই আইপিএল-এ টাইগারদের নতুন মুখ এখন লিটন।

 

স্পোর্টসমেইল২৪/এমটিআর



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

আবারও কলকাতায় সাকিব আল হাসান

আবারও কলকাতায় সাকিব আল হাসান

আইপিএলে দল পেলেন লিটন দাস

আইপিএলে দল পেলেন লিটন দাস

রেকর্ড মূল্যে পাঞ্জাব কিংসে স্যাম কারান

রেকর্ড মূল্যে পাঞ্জাব কিংসে স্যাম কারান

বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ দ্রুত গতির ফুটবলার যারা

বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ দ্রুত গতির ফুটবলার যারা