তীরে এসে তরী ডোবার ইতিহাস টিম বাংলাদেশের পুরোনো। তবে ডোবা তরীকে টেনে ডাঙ্গায় তোলার কারিগর হলেন টাইগার অলরাউন্ডার মেহেদী মিরাজ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দীর্ঘদিনের শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে টাইগার ভক্তদের ঐতিহাসিক এক জয় উপহার দিয়েছেন মিরাজ। যা শুধু জয় নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের শঙ্কাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চলার এক বার্তাও।
মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে মিরাজ যাদুতে শ্বাসরুদ্ধকর জয় পেয়েছে লাল-সবুজরা। ম্যাচের শুরুতে মিরাজ ঘূর্ণিতে ভেঙে যায় সফরকারীদের ওপেনিং জুটি। এরপর বাকি কাজটা করেন সাকিব আল হাসান এবং ইবাদত হোসেন। শক্তিশালী ভারতীয় দলকে ১৮৬ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
ভারতে স্বল্প রানে আটকালেও ১৮৭ রান তাড়া করতে নেমে একে একে সাজঘরে ফিরতে থাকেন টাইগার ব্যাটাররা। সহজ ম্যাচটা ধীরে ধীরে কঠিন সমীকরণে পৌঁছাতে থাকে। স্কোর বোর্ড ১২৮ রান হওয়ার পরেই চরম ধাক্কা খায় লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। মাত্র আট রানের ব্যবধানেই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহসহ সাজঘরে ফিরেন পাঁচ ব্যাটার।
টাইগার শিবিরে একের পর এক আউটে জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিল ভক্তরা। কারণ, জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫১ রান বিপরীতে হাতে ছিল মাত্র এক উইকেট। উইকেটে ছিলেন দুই বন্ধু মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
জয়ের জন্য এমন কঠিন সময়ে আশা ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে গ্যালারি ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন দর্শকরা। তবে যে দর্শকেরা আশা নিয়ে বসে ছিলেন তাদের নিরাশ করেননি মেহেদি মিরাজ। জয়ের তরীকে টেনে নিজেদের ফেভারে এনে ক্রিকেট প্রেমিদের উপহার দেন ঐতিহাসিক এক জয়। ম্যাচ শেষে মিরাজ জানান, বিশ্বাস ছিল পারবো।
শেষ ইউকেটে ৫১ রান তুলে, ড্যারেন স্যামি-ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের সাথে মিরাজ যুক্ত করেন নিজের নাম। এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের বিপক্ষে কিমার রোজকে নিয়ে শেষ ইউকেটে ৫১ রান করেছিলেন ক্যারেবীয় অলরাউন্ডার ড্যারেন স্যামি। আর ১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রিচার্ড স্নেলকে নিয়ে ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স করেছিলেন সমান সংখ্যক রান।
মিরাজের এমন কীর্তি অবশ্য নতুন নয়। অতীতেও টিমের প্রয়োজনে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন মেহেদী মিরাজ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো টিম বাংলাদেশ সেমি-ফাইনালের স্বাদ পেয়েছিল এই মিরাজের অধিনায়কত্বেই।
এছাড়া ক্যারিয়ারের অভিষেক টেস্টেই ১৯ ইউকেট নিয়ে টাইগারদের মধ্যে টেস্টে এক সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়ার খেতাব জেতেন তিনি। একই সাথে অভিষেক সিরিজেই ম্যাচ সেরা হয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি, রহিত শর্মা, অজান্তা মেন্ডিসদের পাশে নাম লেখান মিরাজ।
সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে এমন জয় ছাড়াও চলতি বছরেই দেশের মাটিতে ওডিআই ফরমেটে আফগানদের বিপক্ষে রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৮ রানেই ৫ ইউকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও জয়ের দিকে টেনে তোলার কারিগর ছিলেন মিরাজ। আফিফকে নিয়ে দুর্দান্ত এক ইনিংস রচনা করে ম্যাচ সেরার খেতাব অর্জন করেন তিনি।
শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরেও মিরাজের কীর্তির জুড়ি নেই। ক্যারিবিয়দের দেশে ওয়েস্ট ইন্ডিসের বিপক্ষে স্পিন জাদু দেখিয়ে ওডিআই সিরিজ জেতার অন্যতম কারিগর ছিলেন ২৫ বছর বয়সী এ টাইগার অলরাউন্ডার। এছাড়া গত বছরের (২০২১) শুরুতেই বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম টেস্টে ১০০ উইকেটের শিকারের মালিক হন মিরাজ।
২০২১ সালে হোম অব ক্রিকেটে (মিরপুর) শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দারুণ খেলে টাইগার। টার্গেট তাড়া করতে নামলে শুরুতেই লঙ্কান দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান মিরাজ। এরপর বল হাতে চমক দেখিয়ে আরও দুই ইউকেট নিয়ে লাল-সবুজদের জয় নিশ্চিত করেন মিরাজ।
অনেকদিন থেকেই ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জণ রয়েছে যে, ওয়ানডে ফরমেটে সাকিবের পরেই দেশের অন্যতম অলরাউন্ডার হতে যাচ্ছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। হয়তো সেটাও খুব দূরে নয়। তাই তো ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর খোদ সাকিবই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেহেদী মিরাজকে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এমটিআর/আরএস