ডানহাতি পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি আগ্রাসী ব্যাটিং এবং সংগ্রামী জীবন। বলছি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে প্রথমবারের মতো ডাক পাওয়া মারুফা আক্তারের কথা। যার জীবন গল্পের সাথে ভারতের হার্দিক পান্ডিয়ার সংগ্রামী জীবনের মিল রয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত ঢেলাপীর এলাকার দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা ক্রিকেট জীবনের আইডলও হার্দিক পান্ডিয়া।
বাবা বর্গা চাষী, মা গৃহিণী। পরিবারে যেন নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবে মারুফা আক্তার ধ্যানজ্ঞানে একটাই শুধু ক্রিকেট। মেয়ে হয়েও দরিদ্র বাবার হালচাষে সাহায্য করা মারুফা এখন জাতীয় দলের ক্রিকেটার। পড়ালেখার পাশাপাশি বাবাকে কৃষিকাজে সহায়তা করা মারুফা জীবনে সবচেয়ে পুরস্কার এটি।
মারুফাকে নিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সিলেট থেকে সম্প্রতি বিমানে ঢাকা আসলেও মারুফার এটাই প্রথম কোনো বিদেশে ভ্রমণ। দল শেষ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনেও অধিনায়ক নিগার সুলতানা হাজির হয়েছিলেন মারুফাকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানেই নিজের নানা অজানা কথা তুলে ধরেন তিনি।
জাতীয় দলের ডাক পাওয়ার বিষয়ে নিজের অনুভুতি কেমন ছিল, সংবাদ সম্মেলনে জানতে হলে সংক্ষিপ্ত উত্ততে মারুফা আক্তার বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, ভালো লাগছে। আমার এটা প্রথম জার্নি, প্রথম ট্যুর করবো। আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।”
সংবাদ সম্মেলনের প্রথমে কথা বলেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। তখন মারুফাকে নিয়ে অধিনায়ক জানান, মাঠে মারুফার কাছে যেমনটা চাওয়া হয় বল হাতে তিনি তেমনই করে থাকেন। এছাড়া বোলিংয়ের পাশপাশি দুর্দান্ত ফিল্ডিংও করেন মারুফা।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মারুফা উত্তর, “আমি ওই সময় কোনো টেনশনই নেই না তো, কোনো চাপ নেই না। আপু যা বলেন তাই করি.. (মুচকি হাসি)।”
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের যেকোনো অভিষেক হতে পারে পেসার মারুফা আক্তারের। তবে ঘরের মাঠে না হয়ে অভিষেক বিদেশের মাটিতে হলে কোনো আক্ষেপ নেই তার। বলেন, “কোনো আক্ষেপ নেই।”
অজ পাড়াগাঁয়ের একজন মেয়ের ক্রিকেট খেলা খুব সহজে মেনে নিতে পারেনি এলাকার মানুষ। তবে এখন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর সব পাল্টে গেছে। বরাবরের মতো পরিবার থেকে সাপোর্ট পাওয়া মারুফা এখন এলাকার মানুষজনের কাছ থেকে দোয়া পাচ্ছেন বলে জানান।
মারুফা বলেন, “তারা এখন অনেক খুশি হয়েছে যে, আমি এ পর্যন্ত আসতে পারছি। বাবা খুশি হয়েছে। বলে যে, আরও ভালো খেলতে হবে। এটাই শেষ না, সামনে আরও এগিয়ে যেতে হবে।”
সংগ্রামী জঅবন পারি দিয়ে জাতীয় দলের মতো জাগয়া আসার বিষয়ে মারুফা বলেন, “আমি ছোট থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করতাম। খেলাধুলা করতে করতে আরকি বিকেএসপিতে চান্স পেয়েছিলাম। ওখান থেকেই বিসিবির চোখে পড়ে.. ওখান থেকেই… (হাসি)।”
তিনি আরও বলেন, “কষ্ট করতে হয়েছে অনেক..। আমার বড় ভাই, প্রথমে যখন আমি বোলিং করতাম, তখন ও (বড় ভাই) মনে করতো যে ক্রিকেট আমি খেলতে পারবো। ওইভাবে খেলতে খেলতে.. ও আমাকে অনেক সাপোর্ট করতো.. ওর কারণে আমি আসতে পারছি। ও ক্রিকেটার না, তবে আমাকে শিখাইতো।”
বোলিং নিজের সুইং নিয়ে মারুফা জানান, “সুইং, এটা আমার ন্যাচারাল।”
দেশে করোনাকালিন সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে মারুফার পরিবারকে সাহায্য করা হয়েছিল। সেটিও মারুফা ক্রিকেটীয় জীবন পাল্টে গেছে বলে জানান তিনি। মারুফা বলেন, “ক্রিকেট বোর্ড আমাকে হেল্প করছে, তখন মনে হয়েছে আমি কিছু করতে পারবো দেশে জন্য। ওই জন্য নিজেকে আরও বেশি তৈরি করছি।”
ক্রিকেটে নিজের আইডল হিসেবে মারুফা আক্তার পছন্দ করেন ভারতের হার্ডিক পান্ডিয়াকে। তিনি মনে করেন, পান্ডিয়ার জীবনও তার মতো সংগ্রামের। আইডল নিয়ে জানতে চাইলে মারুফা বলেন, “ হার্ডিক পান্ডিয়া, ....আমার মতো তাই।”
মারুফার প্রথম বিমানভ্রমণ নিয়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা বলেন, “ও খুবই এক্সাইটেড ছিল, যখন সিলেট থেকে আমরা ঢাকায় আসলাম। ও আমার রুমমেট ছিল, আমার যে রুমটা ছিল সেখান থেকে বিমানবন্দর দেখা যায়, বিমানের নামা-উঠা। ও (মারুফা) আমাকে বলতেছে যে, আমি কি প্ল্যানে উঠবো?”
জ্যোতি আরও বলেন, “ও অনেক ছোট যেহেতু, সুতরাং ও অনেক বেশি এক্সাইটেড। ও এখনো বুঝতে পারছে না যে কী পেতে যাচ্ছে বা কী পেয়ে গেছে অলরেডি। তবে আমার কাছে মনে হয় যে, এটাই ওর জন্য ভালো, বুঝতে না পারাটা। কারণ, যখন বুঝে যাবে তখন হয়তো অনেক কিছু চিন্তা করবে। এখন ওর নিজের পারফরম্যান্সটা নিয়ে চিন্তা করা দরকার।”
দলের সব সিনিয়র ক্রিকেটাররাও খুব সাপোর্ট করে জানান মারুফা। বলেন, “আপুরা আমাকে অনেক সাপোর্ট করে, সব আপুরাই।”
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস