এশিয়া কাপে গ্রুপপর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নিয়েছিল ভারত। তবে নিজেদের সেই জয় বেশি দিন ধরে রাখতে পারলো না। চলমার এশিয়া কাপে সুপার ফোরের ম্যাচে এবার ভারতে হারিয়ে প্রতিশোধ নিলো পাকিস্তান। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নিয়েছে বাবর আজমের দল।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সুপার ফোরের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ভারত। দলের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে রান পাওয়া বিরাট কোহলি ৬০ রানের ইনিংস খেলেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারের ১ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ভারতীও বোলারদের দাপটে বোলিংয়ের মাঝেও ৭১ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান।
টস হেরে ব্যাট হাতে নেমেই প্রথম ওভারে ঝড় তোলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পাকিস্তানের পেসার নাসিম শাহর করা প্রথম ওভারেই চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ১১ রান এনে দেন তিনি।
প্রথম দুই ওভারে রোহিতের চার-ছক্কা অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন আরেক ওপেনার লোকেশ। তৃতীয় ওভারে জ্বলে ওঠে রাহুলের ব্যাট। নাসিমের করা ওভারের প্রথম ও শেষ বলে দু’টি ছক্কা মারেন রাহুল। ওই ওভার থেকে ১৪ রান পায় ভারত। এতে ৩ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৩৪ রান।
২৬ বলে দলীয় ৫০ রান স্পর্শ করে ভারত। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের প্রথম বলে রউফের শিকার হন ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৮ রান করা রোহিত। অধিনায়ককে হারিয়ে পাওয়ার-প্লেতে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৬২ রান ।
সপ্তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন রাহুল। ১টি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ বলে ২৮ রান করেন তিনি। ৬২ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ভারতের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন বিরাট কোহলি।
তৃতীয় উইকেটে সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে ২১ বলে ২৯ ও চতুর্থ উইকেটে ঋসভ পান্থকে নিয়ে ২৫ বলে ৩৫ রান তুলেন কোহলি। দুই জুুটিতে কোহলির অবদান ছিল ৩৪ রান। সূর্য ১৩ ও পান্থ ১৪ রান করে আউট হন।
গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে হারানোর নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া রানের খাতা খোলার আগেই হাসনাইনের শিকার হন। ১৫তম ওভারে দলীয় ১৩১ রানে আউট হন হার্দিক। তবে অন্যপ্রান্তে ব্যাট হাতে রান তোলায় হাল ছাড়েননি কোহলি।
১৮তম ওভারের শেষ বলে হাসানাইনের ডেলিভারিতে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি।
এ ইনিংসের সুবাদে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বোচ্চ হাফ-সেঞ্চুরির মালিক বনে যান বিরাট কোহলি। তার অধিনায়ক রোহিতকে পেছনে ফেলেন কোহলি। ৩১টি হাফ-সেঞ্চুরি আছে রোহিতের।
৩৬ বল হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৪টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন কোহলি। ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বলে দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হন ৪৪ বল খেলে ৬০ রান করা এ ডান-হাতি ব্যাটার। হাফ-সেঞ্চুরির পর কোন বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারেননি তিনি।
ইনিংসের শেষ দুই বলে দু’টি চারে ভারতের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৮১ রান এনে দেন রবি বিষ্ণোই। পাকিস্তানের শাদাব খান ৩১ রানে ২ উইকেট নেন।
১৮২ রানের জবাবে শুরুতে সাবধানী ছিল পাকিস্তান। প্রথম ৩ ওভারে ১৯ রান তোলেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজম। চতুর্থ ওভারে স্পিনার বিষ্ণোর বলে আউট হন ১৪ রান করা বাবর।
বাবর ফিরলে দ্বিতীয় উইকেটে ৩০ বলে ৪১ রান তুলেন রিজওয়ান ও ফখর জামান। ১৮ বলে ১৫ রান করে মিস্পনার যুজবেন্দ্রা চাহালের শিকার হন হন জামান।
দলীয় ৬৩ রানে জামানের বিদায়ে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে উইকেটে আসেন নাওয়াজ। ইনিংস শুরু করেই ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হন নাওয়াজ। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় পাকিস্তানের রান তোলার গতি বাড়িয়ে দেন তিনি। অপরপ্রান্তে ৩৭ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৫তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রিজওয়ান।
১৬তম ওভারে রিজওয়ান-নাওয়াজ জুটি ভেঙে ভারতকে খেলায় ফেরার পথ দেখান পেসার ভুবেনশ্বর। ২০ বলে ৪২ রান করা নাওয়াজকে শিকার করেন তিনি। পরের ওভারে রিজওয়ানকে আউট করে দারুণভাবে ভারতকে ম্যাচে ফেরান হার্ডিক। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ বলে ৭১ রান করেন রিজওয়ান।
রিজওয়ান যখন ফিরেন তখন জিততে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৯ বলে ৩৪ রান। ১৮তম ওভারে ৮ রান দেন বিষ্ণো। ওই ওভারে পাকিস্তানের আসিফ আলির সহজ ক্যাচ ফেলেন আর্শদীপ। এতে শেষ ২ ওভারে ২৬ রান দরকার পড়ে পাকিস্তানের।
শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভুবেনশ্বরের করা ১৯তম ওভারে ১৯ রান নেন আসিফ ও খুশদিল। আসিফ ১টি করে চার-ছক্কা মারেন। খুশদিলের ব্যাটে ছিল ১টি চার। ফলে শেষ ওভারে জিততে ৭ রান দরকার পড়ে পাকিস্তানের।
আর্শদীপের দ্বিতীয় বলে চার মারেন আসিফ। চতুর্থ বলে আউট হন আসিফ। শেষ ২ বলে ২ রান দরকার পড়ে। পঞ্চম বলে ২ রান নিয়ে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন ইফতেখার। আসিফ ৮ বলে ১৪ রান করেন। ১১ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন খুশদিল। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস