কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে ভারতের। অন্যদিকে আফসোসে পুড়ছে আয়ারল্যান্ড। দুই দল মিলে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে ডাবলিনের মাঠে। ৪৪৬ রানের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাত্র ৪ জানে জিতে বড় বাঁচা বেঁচে গেছে ভারত। একই সাথে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশও করেছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) ডাবলিনের দ্যা ভিলেজে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও আয়ারল্যান্ড। টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে তৃতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত। দলীয় ১৩ রানে ব্যক্তিগত পাঁচ রান করে ফিরে যান ঈশান কিষান।
এরপরের ভারতীয় ইনিংসের গল্পটা শুধুই দীপক হুদা ও সঞ্জু স্যামসনের। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ভারতের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫৪ রান। এরপরই আচমকা রানের গতি কমতে থাকে। ৩৩ রানে জীবন পাওয়া হুদা হাফ সেঞ্চুরি করে মাত্র ২৭ বলে। এরপরই ঝড়ের শুরু, যা চলেছে ইনিংসে শেষ পর্যন্ত।
এক পর্যায়ে হুদার সঙ্গী সঞ্জু স্যামসন স্ট্রাইকই পাচ্ছিলেন না। স্রেফ তাকে দর্শক বানিয়ে আইরিশদের বোলারদের উপর টর্নেডো চালান হুদা। মাঝেমধ্যে পাওয়া স্ট্রাইকে স্যামসনও কাল ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন। হুদাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া স্যামসন হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৩১ বলে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন মরগান
দেশের বাইরে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির পর আরও ভয়ানক হয়ে ওঠেন স্যামসন। ডেলানিকে টানা দুই ছক্কা ও মার্ককে দারুণ ফ্লিকে বলকে উড়িয়ে বাইরে পাঠিয়ে রানের গতি আরও বাড়িয়ে দেন। ১৬.২ ওভারে মার্কের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ভাঙে হুদার সঙ্গে তার ৮৭ বল স্থায়ী ১৭৬ রানের জুটি। টি-টোয়েন্টিতে এটাই যে কোনো উইকেটে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি।
স্যামসন ফেরার পর নিয়মিত উইকেট হারায় ভারত। কিন্তু আরেক প্রান্তে ঝড় চালিয়ে যাওয়া হুদা ৫৫ বলে তুলে নেন প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। ৫৭ বলের ইনিংস গড়া ৬ ছক্কা ও ৯ চারে শেষ পর্যন্ত আউট হন ১০৪ রানে। ২০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় সাত উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান।
রানের পাহাড় টপকাতে নেমে আয়ারল্যান্ডের দরকার ছিল ঝড়ো পাওয়ার প্লে। পল স্টারলিং এবং অ্যান্ড্রু ব্যালবির্নির ব্যাটে ঠিক সেরকম শুরুই পেয়েছিল আইরিশরা। দুজনের ব্যাটে রীতিমতো রান বন্যা শুরু হয়েছিল ডাবলিনের মাঠে।
প্রথম ওভারে ভুবেনশ্বরকে তিন চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান তোলেন স্টার্লিং। মাত্র চার ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ রান জমা হয় স্কোরকার্ডে। পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে ভারতের স্বস্তির ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার রবি বিষ্ণয়। ৫.৪ ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন স্টার্লিংকে। আউট হওয়ার আগে স্টার্লিংয়ের সংগ্রহ ছিল মাত্র ১৯ বলে ৪০ রান, যেখানে ছিল তিনটা ছয় ও পাঁচটা চার। স্টার্লিংয়ের আউটে ভাঙে মাত্র ৩৫ বলে ৭২ রানের ওপেনিং জুটি।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে এসে শূন্য রানেই ফিরে যান গ্যারেথ ডিলেনি। সরাসরি থ্রোতে রান আউট করে ডিলেনিকে ফিরিয়ের দেন ভারতীয় অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। পরপর দুই উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্তে শুরু থেকেই দারুণ ব্যাটিং করছিলেন বালবার্নি। সপ্তম ওভারে ভারতীয় পেসার উমরানকে মালিককে প্রথম চার মারার আগেই মেরেছেন চার ছক্কা।
ব্যাট হাতে ভারতীয় বোলারদের উপর টর্নেডো শুরু করেছিলেন আইরিশ অধিনায়ক বালবার্নি। তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ৯ ওভারেই আয়ারল্যান্ডের স্কোরকার্ডে জমা হয় তিন অঙ্কের রান। ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা বালবার্নির ইনিংসে ছিল ৭টি ছক্কা ও তিনটি চার। ১১তম ওভারে ৬০ রানে তাকে ফিরিয়ে ভারতী শিবিরে স্বস্তি এনে দেন পেসার হার্শেল প্যাটেল।
এরপর আগের ম্যাচের আইরিশ নায়ক হ্যারি টেক্টর কিছুটা ঝড় ওঠালেও ফিরে যান দ্রুতই। তাকে আউট করে ২১ বল স্থায়ী ৪৭ রানের জুটি ভাঙেন ভুবনেশ্বর। এরপরই আইরিশদের আশা শেষ হয়ে যায়। তবে চমক হিসেবে হাজির হন জর্জ ডকরেল।
শেষ বল পর্যন্ত আইরিশদের ম্যাচে রেখেছিলেন তিনি। ভাগ্য ভালো হলে প্রথমবার ভারত বধের নায়ক হতে পারতেন। ছয় মেরে রানের খাতা খোলা ডকরেল ব্যাট হাতে এদিন যেন খুনে মেজাজে ছিলেন। শেষ চার ওভারে আইরিশদের দরকার ছিল ৫২ রান। ১৭তম ওভারে ১৪ রান নিয়ে তিন ওভারে ৩৮ রানের সমীকরণ বানান ডকরেল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা সম্ভব, মত সাকিবের
তৃতীয় ওভারে মাত্র সাত রান নিয়ে ম্যাচ নিজেদের জন্য কঠিন কঠিন করে ফেলে আয়ারল্যান্ড। তবে ১৯তম ওভারে ১৪ রান তুলে কিছুটা হলেও সম্ভাবনা তৈরি করেন দুই আইরিশ ব্যাটার। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৭ রান।
ইনিংসের শেষ ওভার করতে আসেন দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা ভারতীয় পেসার উমরান মালিক। উমরানের করা ‘নো’ বল ও দুই বাউন্ডারিতে অ্যাডায়ার তোলেন ৯ রান। শেষ তিন বলে প্রয়োজন আট রান।
দারুণ বোলিং করে শেষ তিন বলে মাত্র তিন দেন উমরান মালিক। ফলে মাত্র চার রানের ব্যবধানে হেরে যায় আয়ারল্যান্ড। ব্যাট হাতে মাত্র ১৬ বলে তিন চার ও তিন ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ডকরেল। দুই ম্যাচেই ব্যাট হাতে রান বন্যা বইয়ে দেওয়া দীপিক হুদা জিতেছেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ ও সিরিজ সেরার পুরষ্কার।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি