আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইয়ান মরগানের অভিষেকটা আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে। তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে ইংলিশদের জার্সিটা। এই কথাটা শুনে অনেকেই হয়তো হকচকিয়ে যাবেন। কিন্তু হ্যাঁ, এটাই সত্য। আয়ারল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করা আইরিশ মরগান দল পরিবর্তন করে গায়ে জড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ডের জার্সি। এই জার্সিতেই বিশ্বজয়ের স্বাদ পেয়েছেন, ঘুচিয়েছেন ইংলিশদের অপবাদ।
২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা মরগান প্রথম নজরে আসেন ওই বছরে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে। দারুণ পারফর্মেন্সে দ্রুতই নিজের গায়ে তুলে নেন আন্তর্জাতিক জার্সি। আয়ারল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া মরগান পরের বছরই সুযোগ পান বিশ্বকাপে। ওই বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে হারানো ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে ক্যারিয়ারটা দারুণ ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মরগানের মনের এক কোণে ছিল ক্রিকেটারদের বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন টেস্ট ক্রিকেট খেলা। তবে আয়ারল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারবেন না এমন বাস্তবতা মেনেই সিদ্ধান্ত নেন জাতীয় দল হিসেবে ইংল্যান্ডকে বেছে নিবেন।
সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০০৯ সালে পাড়ি জমান অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। দারুণ প্রতিন্দন্দ্বীতাপূর্ণ ইংলিশ ক্রিকেটে নাম লেখান মরগান। সেখানে টিকতে পারবেন কি-না সেই সন্দেহ ছিল শুরু থেকেই। এমনকি দ্রুতই তার সুযোগ মেলে ইংলিশদের সাদা পোশাকেও। আজন্ম লালিত সেই স্বপ্নের ফরম্যাটে খেলতে মোটেও ভালো কিছুই করতে পারেননি মরগ্যান। উল্টো মাত্র ১২ টেস্টেই থমকে যায় তার টেস্ট ক্যারিয়ার।
২০১২ সালে ইংলিশদের হয়ে শেষ টেস্ট খেলে ফেলা মরগ্যান আদৌ ইংলিশ ক্রিকেটে টিকতে পারবেন কি-না সেই সন্দেহ শুরু হয়। সেই শঙ্কাকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজেকে রঙিন পোশাকেই প্রমাণ করতে শুরু করেন।
সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের অধীনে ইংল্যান্ড দল যখন রঙিন নতুন শুরুর অপেক্ষায় তখন তার উপর পূর্ণ আস্থা রাখেন কুক। সেই আস্থার প্রতিদানও দেন, নিজেকে প্রমাণ করেন। জানিয়ে দেন, ইংলিশদের ডেরাতে খেলার সব যোগ্যতাই নিজের মধ্যে পুষে রেখেছেন।
২০১২ সাল থেকেই ইংল্যান্ডের জার্সিতে নিজেকে প্রমাণ করা মরগ্যানের কাঁধে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা ভাবনাও শুরু করে দেয় ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে হঠাৎই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া অ্যালিস্টার কুকের স্থলাভিষিক্ত হন মরগান। তবে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক বিশ্বকাপটা মোটেও ভালো ছিল না তার জন্য। দলকে গ্রুপ পর্বের বাঁধায় পার করাতে পারেননি।
গ্রুপ পর্বের বাঁধা পার করাতে না পারা ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক হিসেবে বহাল তবিয়তেই ছিলেন মরগান। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিজদের মাটিতে দলকে জিতিয়েছিলেন বিশ্বকাপ শিরোপা। বিশ্বকাপ জয়ের পথে দলের সতীর্থদের কাছ থেকে সামর্থ্যের সবটুকু বের করে এনেছিলেন তিনি। এতেই ঘোঁচে ইংলিশদের বিশ্বকাপ জিততে না পারার আক্ষেপ।
বিশ্বকাপ জয়ের পরেই যেন হারিয়ে যান মরগান। নিজের সেই পুরোনো ছন্দ ধরে রাখতে না পারার পরও তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েন। তীব্র সমালোচনার মুখে মরগান জানিয়েছিলেন, “আমি যদি মনে হয় আমি দলের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছি, তাহলে নিজ থেকেই ক্রিকেটকে বিদায় জানাবো।”
বিদায় জানানোর এই ইঙ্গিত দিয়েই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে গিয়েছিলেন মরগান। তবে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে খেললেও শেষ ম্যাচে ইনজুরির কারণে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। আর প্রথম দুই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসেনি কোনো রানও।
এরপরেই গুঞ্জন উঠে হয়তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন মরগ্যান। সেই গুঞ্জন উঠার একদিন পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন ইংলিশ রাজ্যের আইরিশ অধিপতি মরগান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে নিজের ছাপটা কিন্তু ঠিকই রেখে গেছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে রঙিন পোশাকে সর্বোচ্চ ম্যাচ কিংবা রানের রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক রেকর্ড নিজের নামের পাশে রেখেছেন। ইংলিশদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা ও অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডও তার। তবে সব রেকর্ডের মধ্যে ভিন্নভাবে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের হয়ে সেঞ্চুরির রেকর্ড। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর