সাকিব আল হাসান ফিক্সিং বিতর্কের দায়ে নিষিদ্ধ হওয়ার পর মমিনুল হকের কাঁধে উঠে অধিনায়কত্বের দায়িত্বভার। অধিনায়ক হিসেবে মমিনুল প্রস্তুত কি-না, সেই প্রশ্নও উঠার পরও দায়িত্ব নিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার। দায়িত্ব পাওয়ার পর অধিনায়কত্বের ধরন ও বাজে ফর্মের মধ্যে থাকলেও খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন না মমিনুল। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন মমিনুল হক।
ফিক্সিং বিতর্কের দায়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটে দেখা যায় ঘোর অমানিশা। এই দুঃসময়ে হাল ধরেন মমিনুল। অধিনায়ক হিসেবে প্রস্তুত কি-না সেই প্রশ্নের পরও ভাবা হচ্ছিলো তার হাতে হয়তো বদল হবে টেস্টে বাংলাদেশের গতিপথ।
কিন্তু ভাবনার কিয়দাংশও পূরণ করতে ব্যর্থ মমিনুল। উল্টো রান করতে না পারার ব্যর্থতার সাথে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল অধিনায়কত্বের ধরন। মাঝে মাঝে হাত ঘোরানোর সামর্থ্য না থাকলেও সেই পথে না হেঁটে একাদশে চার বোলার নিয়ে খেলতে নামার অভিযোগ মমিনুলের জন্য নিয়মিত ঘটনা ছিল।
তার অধীনে ১৭ টেস্টের তিনটিতে জয় এবং দুই ড্র করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে হার ১২! নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশকে প্রথম জয় এনে দেওয়া প্রশংসিত হওয়া মমিনুল সমালোচিত হয়েছিলেন ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারের পর।
দ্বিতীয় সারির ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষের জয়ের আশা করা টাইগার সমর্থকদের মমিনুল হতাশ করেছিলেন তার অধিনায়কত্বের ধরনে। চারদিকে সমালোচনার শিকার হওয়ার পরও অধিনায়কের পদে বহাল ছিলেন তিনি।
অধিনায়কত্বের জন্য চারদিক থেকে আসা সমালোচনার মধ্যেই নিজের ব্যাটে রান করতে হিমশিম খেয়েছেন মমিনুল। অধিনায়কত্বের সময়ে ১৭ টেস্টে ৩১ ইনিংসে ৩১ দশমিক ৪৪ গড়ে করেছিলেন ৯১২ রান। ব্যাটে তিন সেঞ্চুরি ও দুই হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ছয়বার রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছিলেন এই ক্রিকেটার। অধিনায়কত্বের সর্বশেষ এক বছরে কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তার ব্যাটের রানখরা অধিনায়কত্বের চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে বলেই ধারণা করা হয়।
মমিনুলের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশের দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ রিভিউ নিতে চাওয়ার অনিচ্ছা। প্রতি ম্যাচে রিভিউ নেওয়ার দোলাচলে ভোগা মমিনুলের জন্য ছিল নৈমত্তিক ঘটনা। বারবারই রিভিউ, একাদশ সাজানো কিংবা ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে না পারা মমিনুল অবশেষে দায়িত্বটা ছেড়েই দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩১ মে) গুলশানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সাথে বৈঠকের পর মমিনুলের ভাষ্য ছিল, “যখন ভালো খেলবেন, দল খারাপ করলেও অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। আমার মনে হয়, আমি ভালো খেলতে পারছি না, দলও ভালো করতে পারছে না। এই অবস্থায় অধিনায়কত্ব করা কঠিন। আমার মনে হয় অধিনায়কত্ব না করাই ভালো।”
টেস্ট অধিনায়কত্ব নেওয়ার আগে ব্যাট হাতে বরাবরই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন মমিনুল হক। ৩৬ টেস্টে ৪১ দশমিক ৪৭ গড়ে ২৬১৩ রান করার মমিনুল পারফর্মেন্স দিয়েই দলকে নেতৃত্ব দিবেন এমন আশাই হয়তো ছিল বিসিবির। খেই হারিয়ে ফেলা মমিনুলের পারফর্মেন্স গ্রাফ হয়েছে নিম্নমুখী সাথে দলকে টেনে তুলতেও দিয়েছেন ব্যর্থতার পরিচয়। সব মিলিয়ে হতাশ মমিনুল হয়তো নুইয়ে পড়েছেন প্রত্যাশার হাজারো চাপেই।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর