সাভারে বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে ভেজা আউটফিল্ডের কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে ৩৩ ওভারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। তবে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ম্যাচটিতে সাকিব-তামিমদের লড়াই হলো হাড্ডাহাড্ডি। বিজয়-তামিমদের স্বল্প রানে আটকে দিলেও জয় পেতে সাকিব-মাশরাফিদের খেলতে হয়েছে শেষ ওভার পর্যন্ত। কষ্টার্জিত লড়াইয়ে শেষ ওভারে গিয়ে ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে মাশরাফির রূপগঞ্জ।
১৫৩ রানের (৩৩ ওভারে) জবাবে ৮৪ রানে সপ্তম উইকেট হারায় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। এরপর অষ্টম উইকেটে ৭৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রান যোগ করে চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দেন তানবীর হায়দার ও মুক্তার আলি। এ জয়ে শিরোপা জয়ে ভালোভাবেই টিকে রইলেঅ মাশরাফি-সাকিবের লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
১২ ম্যাচ শেষে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানেই থাকলো লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। আর ১২ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। এছাড়া সমান ১২ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে আছে প্রাইম ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সাভারে বিকেএসপিতে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্বান্ত নেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ব্যাট হাতে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও তামিম ইকবাল। ছক্কা দিয়ে রানের খাতা খুলেছিলেন এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা তামিম। ফলে ৩ ওভার শেষে ২৪ রান পায় প্রাইম ব্যাংক।
চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে উইকেট তুলে নেন লিজেন্ডস অব রূপঞ্জের সাকিব আল হাসান। ছক্কা দিয়ে ইনিংস শুরু করা তামিমকে ৮ রানে থামান সাকিব। শর্ট মিড উইকেটে তানভীর হায়দারকে ক্যাচ দেন তামিম। পরের ওভারে তিন নম্বরে নামা শাহাদাত হোসেনকে খালি হাতে ফেরান লিজেন্ডস অব রূপঞ্জের আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদ। এতে ২৫ রানে ২ উইকেট হারায় প্রাইম ব্যাংক।
মিডল-অর্ডার ব্যাটার মমিনুল হককে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়ান বিজয়। উইকেটে সেটও হয়ে গিয়েছিলেন তারা। ১৩ রান করা মমিনুলকে আউট করে এই জুটি ভাঙেন মাশরাফি। নিজের পরের ওভারে প্রাইম ব্যাংকের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে ৩ রানে আউট করেন মাশরাফি। মাশরাফির জোড়া আঘাতের সাথে উইকেট শিকারে মাতেন সাকিবও। ছয় নম্বরে নামা নাসির হোসেনকে ৪ রানে আউট করেন সাকিব। ফলে ৭২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে প্রাইম ব্যাংক।
এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন বিজয় ও ইয়াসির আলি। এ জুটি গড়ার পথে এবারের আসরের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন বিজয়। পরে ব্যক্তিগত ৭৩ রানে বিজয়কে আউট করেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের পেসার আল-আমিন হোসেন।
৯১ বল খেলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন বিজয়। মৌসুমে ১২ ম্যাচে ৮৭৮ রান করেছেন তিনি। যার মাধ্যমে ডিপিএলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে যান বিজয়। ব্যাটার সাইফ হাসানকে টপকে এ রেকর্ড করেন তিনি। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে ১৬ ম্যাচে ৬২ দশমিক ৬১ গড়ে ৮১৪ রান করেছিলেন সাইফ।
বিজয়ের সাথে বড় জুটি গড়া ইয়াসির থামেন ৩৯ রানে। ফলে ৩১ দশমিক ২ ওভারে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ১৫২ রানের সংগ্রহ পায় প্রাইম ব্যাংক। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের সাকিব-ভারতের চিরাজ জানি ও মাশরাফি ২টি করে উইকেট নেন।
১৫৩ রানের জবাবে শুরুতেই বিপদে পড়ে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জও। প্রাইম ব্যাংকের দুই স্পিনার মাহেদি হাসান ও রাকিবুল হাসানের বোলিং নৈপূণ্যে ৪২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় তারা। এর মধ্যে ২টি উইকেট ছিল রাকিবুলের। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান সাব্বির রহমার টপ অর্ডারে ২৬ রান করেন।
পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে উইকেটে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি সাকিব। ৩৪ বলে ১টি চারে ২১ রান করেন তিনি। তার আগে চিরাগ ১৪ ও মাশরাফি ৬ রানে ফিরলে মহাবিপদেই পড়ে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। ৮৪ রানে সপ্তম উইকেট হারায় লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। এ অবস্থায় জয়ের জন্য শেষ ৩ উইকেটে ৭৭ বলে ৬৯ রান দরকার পড়ে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের।
অষ্টম উইকেটে ৭৫ বল খেলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রান যোগ করে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে দারুণ এক জয় এনে দেন তানবীর ও মুক্তার আলি। ৩২ দশমিক ৪ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৪ রান করে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তানবীর ৩১ ও মুক্তার ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। তানবীরের ইনিংসে ৪টি চার ও মুক্তারের ইনিংসে ২টি করে চার-ছক্কা ছিল। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুক্তার আলি।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস