নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে অ্যালিসা হিলি যখন ইংলিশ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলছিলেন, ঠিক সে সময় গ্যালারিতে বসে সেই দৃশ্য উপভোগ করছিলেন অজি ক্রিকেটার মিচেল স্টার্ক। অ্যালিসা হিলির বিশ্বকাপ জয়ের এই ম্যাচ মাঠে বসেই দেখেছেন স্টার্ক। হিলির বিশ্বকাপ জয়ের পর ছোট্ট এক তালিকায় ঢুকেছেন তারা দু’জনে। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের নজির এই প্রথম! এর আগে কোনো দম্পতি কোনো খেলাতেই দেশকে উপহার দিতে পারেননি বিশ্বকাপ শিরোপা।
ক্রীড়াবিশ্বে পারিবারিক বন্ধন খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর নয়। প্রায় সময়ই দেখা যায় ক্রীড়া বিশ্বে খুঁজে পাওয়া যায় এই রকম পারিবারিক বন্ধন। তবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের নজির খুঁজতে গেলে একটি দম্পতির নামই পাওয়া যায়, সেটা হলো অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় দম্পতি মিচেল স্টার্ক এবং অ্যালিসা হিলি।
মাত্র নয় বছর বয়সেই পরিচয় অ্যালিসা হিলি আর মিচেল স্টার্কের। অস্ট্রেলিয়ায় ছেলে-মেয়ে একসাথে ক্রিকেট খেলার প্রচলন বেশ আগে থেকেই। আর সেখানেই পরিচয় ঘটে দু’জনের। অ্যালিসা হিলি এবং মিচেল স্টার্ক, দুইজনেই এসেছিলেন উইকেটরক্ষক হতে।
তবে হিলি উইকেটের পিছনে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ব্যাটিং ভালো পারায় শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্যেই জুটেছিল উইকেটরক্ষকের ভার। আর মিচেল স্টার্ক হয়ে উঠেন একজন পেসার।
সেই পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে তৈরি হয় বন্ধুত্ব। আর সেখান থেকেই প্রণয় থেকে পরিণয়। ২০১৬ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা দু’জনে। এর আগে ২০১০ সাল থেকে দীর্ঘ ছয় বছর ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন স্টার্ক আর হিলি।
শুধু ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না তারা দু’জনে। জায়গা করে নিয়েছেন নিজ নিজ দলে। আর হয়েছেন নিজ নিজ দলের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন।
মিচেল স্টার্ক ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছেন দুইটি বিশ্বকাপ শিরোপা। একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাশাপাশি দলকে জিতিয়েছেন সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা।
এই দিক থেকে যোজন যোজন এগিয়ে থাকবেন অ্যালিসা হিলি। কারণ তিনি যে অস্ট্রেলিয়া নারী দলকে উপহার দিয়ছেন সাতটি বিশ্বকাপ শিরোপা। দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া নারী দলের পাঁচ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন অ্যালিসা হিলি।
শুধু তাই নয়, ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন মিচেল স্টার্ক। জিতে নিয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার। এদিকে, অ্যালিসা হিলি ২০২২ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কার জিতে নিয়েছেন। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও।
ক্রিকেটকে নিজেদের ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া অ্যালিসা হিলি এবং মিচেল স্টার্ক দম্পতি এসেছে ক্রিকেটীয় পরিবার থেকেই। মিচেল স্টার্কের বাবা ছিলেন দু’জনেরই ছোটবেলার কোচ। অর্থাৎ, নয় বছর বয়সে যখন দু’জনের পরিচয় হয়, সে সময় স্টার্ক এবং হিলির কোচ ছিলেন তিনি।
আর অ্যালিসা হিলির চাচা ইয়ান হিলি ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি উইকেটরক্ষ। মূলত সেই থেকেই ক্রিকেটে উইকেটের পিছনে দাঁড়ানোর স্বপ্ন নিয়েই বড় হয়েছিলেন অ্যালিসা হিলি। শেষ পর্যন্ত সফলও হয়েছেন।
হিলি-স্টার্কের মত দেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন এরকম আর মাত্র দু’টি জুটি আছে। তারা হলেন ইংল্যান্ডের – রজার প্রিডক্স ও রুথ ওয়েস্টব্রুক এবং শ্রীলঙ্কার গাই ডি অ্যালিস ও রাসাঞ্জালি ডি সিলভা। তবে, দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে পেরেছেন কেবল হিলি-স্টার্ক জুটিই!
এই দম্পতির মধ্যে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের দিক থেকে ৭-২ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন অ্যালিসা হিলি। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, স্ত্রীর থেকে কম সংখ্যক বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেই ক্যারিয়ারকে ইতি টানতে হবে স্টার্ককে। কম শিরোপা জিতলেও আফসোস থাকার কথা নয় স্টার্কের। কারণ তারাই যে একমাত্র জুটি হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন। শুধু ক্রিকেট নয়, অন্য খেলাতেও নেই এই রেকর্ড।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর