বাংলাদেশের হয়ে প্রথম পেসার হিসেবে অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। এরপর থেকেই বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের অন্যতম ভরসা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই মান রাখতে পারেননি তাসকিন। উল্টো দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, হয়েছিলেন সমালোচনার শিকার। এতে দমে যাননি তাসকিন, পরিশ্রম করে আবারও নিজেকে প্রমাণ করছেন।
২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে মিরপুরে ওয়ানডে অভিষেকের ক্যাপ মাথায় পড়েছিলেন তাসকিন। মাত্র তিন ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিলেন। সেখানে অভিজ্ঞ পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গ পেয়ে নিজেকে প্রমাণও করেছিলেন। জানান দিয়েছিলেন, হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের পেস ইউনিটের কান্ডারি।
বিশ্বকাপের পর পরই দলে আসেন নতুন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। নাম লেখান তাসকিনের পাশে। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি পেসার কাটার মাস্টার। অভিষেকেই নজর কাড়া মোস্তাফিজের সাথে তাসকিন আর মাশরাফি এই তিনে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ের ত্রয়ী। ইংল্যান্ডে ২০১৯ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয় এই তিন পেসারের।
তবে ইংল্যান্ডের ওই বিশ্বকাপ মাতানো হয়নি তাসকিনের। ওশেনিয়াতে পেস ইউনিটে কান্ডারি হতে চাওয়া তাসকিন একের পর এক বাজে পারফর্মেন্স করে বাদ পড়েন জাতীয় দল থেকে। আর এতেই থেমে যায় তার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। কোথায় থেমেছে তাসকিনের এই স্বপ্ন?
২০২২ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে প্রোটিয়াদের মাটিতে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেবার তিন ম্যাচে তাসকিনের ঝুলিতে ছিল মাত্র দুই উইকেট। আর রান দিয়েছিলেন ১৯৮! আর এতেই জাতীয় দল থেকে তাসকিনের বাদ পড়া নিশ্চিত হয়ে যায়। আর এখানেই থামে তাসকিনের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন।
জাতীয় দলের সেই বদ্ধ দরজা খুলতে তাসকিনের সময় লেগেছে প্রায় চার বছর। ২০২১ সালে এসে আবারও জাতীয় দলে ডাক পান তাসকিন। জাতীয় দলে ডাক পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে করা সেই বাজে পারফর্মেন্সের জন্য সমর্থকদের সমালোচনার টেবিলেই ছিলেন তাসকিন।
কিন্তু এবার তাসকিন আবারও প্রমাণ করেন নিজেকে। জানিয়ে দেন জাতীয় দলে ফেরার জন্য নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ে তুলেছেন। এক কিংবা দুই ম্যাচ নয়, টানা পারফর্ম করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তাসকিন। আর এতেই জাতীয় দলের নিজের অবস্থানকে আবারও পাকা করে নিয়েছেন।
অভিষেক ম্যাচে তাসকিনের সেই পাঁচ উইকেটের পর আবারও ফাইফার পাবেন, সেই ভাবনা হয়তো কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকও ভাবতে পারেননি। একের পর এক ম্যাচে বাজে পারফর্মেন্সে হয়তো ফাইফার পাওয়ার স্বপ্ন নিজেও তুলে রেখেছিলেন। যেই দক্ষিণ আফ্রিকাতে বন্ধ হয়েছিল তার জাতীয় দলের দরজা সেখানে এসেই ২৮৩৬ দিন পর তাসকিন পেলেন পাঁচ উইকেটের দেখা। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালে মোস্তাফিজের পাঁচ উইকেট পাওয়ার ৯৯২ দিন পর আরেক বাংলাদেশি পেসার পেলেন ফাইফার।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর তাসকিনের সামনে সুযোগ এসেছিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার। জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে আইপিএলে খেলার সেই সুযোগ লুফে নেননি তিনি। আর পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন কেন তার প্রতি আগ্রহী আইপিএলের দলগুলো।
সাম্প্রতিক সময়ের দারুণ ছন্দে থাকা তাসকিনের তৃতীয় ফাইফারের দেখা পাওয়ার অপেক্ষাটা আর দীর্ঘ হবে না। এটাই হয়তো সব ক্রিকেট ভক্তদের আশা। দেখা যাক, এবার সেই আশা পূর্ণ করতে পারেন কিনা।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর