রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পর করাচি টেস্টেও রানবন্যা। তবে রাওয়ালপিন্ডির মতো ম্যাড়ম্যাড়েভাবে শেষ হয়নি করাচি টেস্ট। বরং টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চ ছড়িয়েছে করাচিতে। আব্দুল্লাহ শফিক, বাবর আজমের পর রিজওয়ানের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ড্র করেছে অস্ট্রেলিয়া।
করাচিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম তিনদিন ছিল অস্ট্রেলিয়ার রাজত্বের গল্প। তবে শেষ দুই দিনে পাশারদান উল্টে দিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর গল্প লিখেছে পাকিস্তান। জানান দিয়েছে, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সূচাগ্র মেদিনী’। হলোও তাই, দিনের একদম অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছে বাবর আজম বাহিনী।
করাচিতে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে উসমান খাজা আর দ্বিতীয় দিনে উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারির ব্যাটে ভর করে বড় সংগ্রহের দিকে আগাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় দিনের শুরুতে স্কোরবোর্ডে ৫৫৬ রান যোগ হতেই ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স।
অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ইনিংস ঘোষণার পর সবাই ধরেই নিয়েছিল নিশ্চিত ম্যাড়ম্যাড়ে ড্রয়ের পথ ধরছে করাচি টেস্ট। তবে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ১৪৮ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্রিকেট সমর্থকের রায় ছিল ম্যাচ যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার পকেটে।
তৃতীয় দিনের শুরুতেও ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া আর দিনের শেষভাগেও ক্রিজে দুই অজি ব্যাটার। মাঝখানে অজিদের বোলিং তোপে মাত্র ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান।
চতুর্থ দিনের শুরুতে মাত্র ২৫ বল খেলে ইনিংস আবারও ইনিংস ঘোষণা অজিদের। সে সময় স্কোরবোর্ডে অজিদের রান ২ উইকেটে ৯৭। এবার পাকিস্তানের সামনে জয়ের লক্ষ্য রেকর্ড ৫০৬ রান। জিততে হলে বাবর আজম বাহিনীকে গড়তে হবে রেকর্ড!
প্রথম ইনিংসে বাজে ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখানো পাকিস্তান চতুর্থ দিনেই অলআউট হবে, এই ভাবনায় হয়তো কাজ করছিলো সবার মনে। শুরুটাও হয়েছিল ঠিক ওইরকমই। মাত্র ২১ রান তুলতেই পাকিস্তানের নেই দুই উইকেট।
দুই উইকেটে হারানোর পর ঢাল হয়ে দাঁড়ান অধিনায়ক বাবর আজম আর ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। দুইজনের অপ্রতিরোধ্য ব্যাটিংয়ে দিনের বাকি সময়ে আর কোনো উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। দিন শেষ করে স্কোরবোর্ডে দুই উইকেটে ১৯২ রান তোলে।
দুইজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে পাকিস্তান। শেষদিনে জয়ের জন্য পাকিস্তানের ৮ উইকেটে দরকার ৩১৪ রান। আর হাতে আছে পুরো একটি দিন অর্থাৎ ৯০ ওভার। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখা সমর্থকদের কাছে মোটেও বোকামি না!
শেষ দিনের শুরুতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক। একটু পরেই তার সঙ্গী হন ফাওয়াদ আলম। ২৭৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা পাকিস্তানের হার নিশ্চিত তাই হয়তো ভেবেই নিয়েছিলেন অজি কাপ্তান প্যাট কামিন্স। তবে এবারও ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন বাবর আজম।
অধিনায়কের সাথে এবার যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই জুটিই প্রতিপক্ষের জন্য পরিণত হয়েছিল দুঃস্বপ্নে। এবার টেস্টেও তারা অস্ট্রেলিয়ার জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে দুঃস্বপ্নের মতো। দুইজন মিলে গড়ে তোলেন ১১৫ রানের জুটি।
ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতক থেকে চার রান দূরে থাকতেই প্যাভিলিয়নে ফেরার কিসের যেন তাড়া অনুভব করছিলেন বাবর আজম। আর এতেই নাথান লায়নের বলে মার্নাস ল্যাবুশেনের হাতে ক্যাচ দেন পাকিস্তান অধিনায়ক। ফলাফল, দ্বিশতক মিস বাবরের।
বাবর আজম ফিরলেও ওয়ানডে স্টাইলে নিজের ব্যাট চালিয়ে নিতে থাকেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এই উইকেটরক্ষক ব্যাট চালালেও অপরপ্রান্তের ব্যাটাররা যেন যোগ দিয়েছিলেন সবচেয়ে কম বল খেলার প্রতিযোগীতায়। ফলাফলস্বরুপ, বারব আজমের পর পর ফাহিম আশরাফ, সাজিদ খানরা ফেরেন ডাগ আউটে।
টানা তিন উইকেটের পড়ার পরও কোনো বিপদ হতে দেননি রিজওয়ান। দিনের শেষভাগে নওমান আলিকে নিয়ে ম্যাচ ড্র নিশ্চিত করেন তিনি। আর পাকিস্তান থামে ৭ উইকেট হারিয়ে ৪৪৩ রানে। আর এতেই শেষ হয় রোমাঞ্চ তৈরি করা এক টেস্টের।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টেও হয়েছিল একই ফলাফল। আর এতেই সিরিজে চলছে সমতা। ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা ক্রিকেটারের পুরষ্কার নিজের করে নিয়েছেন অধিনায়ক বাবর আজম।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর