আইসিসি র্যাংকিংকে এগিয়ে থাকা আফগানদের গুড়িয়ে দিল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে সফররত আফগানদের ৬১ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৫ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নামুস-শরিফুল-সাকিবদের বোলিং তোপে ১৭ দশমিক ৪ ওভারে ৯৪ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। এ জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
মোহাম্মদ নাঈমের সাথে ইনিংস শুরু করেন অভিষেক হওয়া মুনিম শাহরিয়ার। ইনিংসের শুরুতেই স্ট্রাইকে ছিলেন তিনি। আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকি দ্বিতীয় বলেই কভার দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে নেন মুনিম। তবে ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ফারুকি।
রিভিউ নিয়ে ৫ বলে ২ রান করা নাঈমকে বিদায় দেন ফারুকি। এরপর স্পিনার মুজিব উর রহমানের পরের ওভারের প্রথম দুই বলেই বাউন্ডারি মারেন মুনিম। অভিষেক ম্যাচে ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েও ইনিংসের পঞ্চম ও রশিদ খানের প্রথম ওভারে থামতে হয় মুনিমকে। লেগ বিফোর আউট হন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে না পারা মুনিম ১৮ বলে ৩টি চারে ১৭ রান করেন।
ইনিংসে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লিটনের দুই বাউন্ডারির সুবাদে ৬ ওভার শেষে ৩৭ রান পায় বাংলাদেশ। চার নম্বরে সাকিব ব্যাট হাতে রান খড়া কাটাতে পারছেন না। তিন ম্যাচের ওয়ানডেতে ৬০ রান করা সাকিব এ ম্যাচে ৫ রানে আটকে যান। স্পিনার কায়েস আহমেদের বলে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মুজিবকে ক্যাচ দেন সাকিব।
সাকিবের আউটের পর ক্রিজে লিটনের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান রেট ছিল ৬। দশম ওভারে ১টি করে ছক্কা মারেন লিটন ও মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে আরও একটি ছক্কা আসে লিটনের ব্যাট থেকে। আর ওই ওভারেই পেসার আজমতুল্লাহ ওমরজাইর বলে লেগ বিফোর আউট হন ৭ বলে ১০ রান করা টাইগার দলনেতা। লিটনের সাথে ১৯ বলে ৩৩ রান যোগ করেন তিনি।
সতীর্থদের যাওয়া আসার মাঝে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ইনফর্ম লিটন। ১৪তম ওভারে ৩৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরিতে পা রাখেন একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন। ওই ওভারেই বাংলাদেশের রান ১শ স্পর্শ করে।
হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি খুব বেশি বড় করতে পারেননি লিটন। ফারুকির স্লোয়ার ডেলিভারি শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে মারতে গিয়ে ত্রিশ গজের ভেতর ওমরজাইকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন লিটন। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৪ বলে ৬০ রান করেন লিটন। আফিফের সাথে পঞ্চম উইকেটে ৩৮ বলে ৪৬ রান যোগ করেন লিটন।
১৭তম ওভারের শেষ বলে লিটন ফেরার পরই থামেন আফিফও। ২৪ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেন আফিফ। লিটন-আফিফ যখন ফিরেন তখন ইনিংসের ১৬ বল বাকি ছিল। বাংলাদেশের রান ছিল ৫ উইকেটে ১২৭। শেষ ১৬ বলে ২ উইকেট হারিয়ে ২৮ রান পায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইয়াসির ও শরিফুলের ১টি করে চার ছিল। আরও ১টি চার আসে লেগ-বাই থেকে। ইনিংসের শেষ বলে শরিফুলের বাউন্ডারিতে ৮ উইকেটে ১৫৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে আউট হওয়া ইয়াসির ৮ ও মাহেদি হাসান ৫ রান করেন। নাসুম ৩ ও শরিফুল ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। আফগানিস্তানের ফারুকি ২৭ রানে ও ওমরজাই ৩১ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
আঙুলের ইনজুরির কারণে সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে ছিটকে যান উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। আর এ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় মুনিম শাহরিয়ার ও ইয়াসির আলির।
১৫৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে বাংলাদেশের স্পিনার নাসুমের তোপের মুখে পড়ে আফগান টপ-অর্ডার। নিজের প্রথম দুই ওভারে ৩ উইকেট তুলে নেন নাসুম। প্রথম ওভারে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে শূন্য রানে, পরের ওভারে হজরতউল্লাহ জাজাইকে ৬ রানে ও রাসুলিকে ২ রানে ফিরিয়ে দেন নাসুম। এমন অবস্থায় ইনিংসের প্রথম ১৫ বলে ৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে পড়ে আফগানিস্তান।
ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের তৃতীয় ওভারে আবারও উইকেট শিকারে মাতেন নাসুম। এবার ৬ রান করা করিম জানাতকে আউট করে চতুর্থ উইকেট নেন তিনি। ২০ রানে ৪ উইকেট পতনের পর দলকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক নবি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। তাদের গড়া ৩৮ বলে ৩৭ রানের জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। ১৬ রান করা নবিকে বিদায় করেন তিনি।
দলীয় ৫৭ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে নবির বিদায়ের পর আফগানিস্তানের পরের দিকের ব্যাটারদের বড় ইনিংস খেলতে দেননি শরিফুল-সাকিব ও মোস্তাফিজ। ফলে ১৭ দশমিক ৪ ওভারে ৯৪ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান আফগানদের।
আফগানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন জাদরান। ওমারজাইর ২০ রান আফগানদের হারের ব্যবধান কমিয়েছে। ৪ ওভারে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসুম। এটিই তার ক্যারিয়ারের যৌথ সেরা সেরা বোলিং। ২০২১ সালে এ ভেন্যুতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন নাসুম। এছাড়া শরিফুল ৩টি, সাকিব ২টি ও মোস্তাফিজ ১টি উইকেট নেন।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]