বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২৫তম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে মিনিস্টার ঢাকা। এ জয়ে মোট ৯ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে রইলো ঢাকা। অন্যদিকে, ঢাকার কাছে হেরে গিয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে শঙ্কায় পড়লো সিলেট।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের শেষ দিনের প্রথম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৯ রানের সংগ্রহ গড়ে সিলেট টাইগার্স। জবাবে ৪ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় ঢাকা।
এ জয়ে ৯ খেলায় ৪টি করে জয়-হার এবং একটি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে উঠলো ঢাকা। আর ৮ ম্যাচে ৪টি করে সমান জয়-হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে নেমে গেল খুলনা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চার পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় ঢাকা। আগের ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়েন মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাঈম শেখ, এবাদত হোসেন ও আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শাহজাদ। বল হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারেই খুলনার উইকেট তুলে নেন ঢাকার পেসার রুবেল হোসেন।
আগের ম্যাচের হিরো সৌম্য সরকারকে ১ রানে শিকার করেন রুবেল। তিন নম্বরে নামা জাকের আলি ৫ রানের মাথায় রান আউটের ফাঁদে পড়েন। ইনিংসের চতুর্থ ও নিজের প্রথম ওভারে খুলনার জোড়া উইকেট তুলে নেন স্পিনার আরাফাত সানি। সানির দ্বিতীয় বলে কভারে দাঁড়ানো ঢাকার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে ফ্লেচার। পরের ডেলিভারিতে ইয়াসির আলিকে দারুণ ঘূর্ণিতে বোল্ড করেন সানি। ফ্লেচার ৬ ও ইয়াসির খালি হাতে ফিরেন।
শুরুতেই ঢাকার বোলারদের চাপে প্রথম চার ওভারে কোন বাউন্ডারি আদায় করতে পারেনি খুলনার ব্যাটাররা। পঞ্চম ওভারে ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি আসে অধিনায়ক মুশফিকের ব্যাট থেকে। তবে সপ্তম ওভারের শেষ বলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মুশফিক। আফগানিস্তানী পেসার আজমতউল্লাহ ওমরজাইর বলে বোল্ড হন মুশফিক। ১২ বলে ১২ রান করেন মুশি।
৩২ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মুশফিকের বিদায়ে উইকেটে আসা জিম্বাবুইয়ান রাজা কাউন্টার অ্যাটাকে ৩টি বাউন্ডারি তুলে নেন। অন্যপ্রান্তে মাহেদি ছিলেন সাবধানী। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে আফগানিস্তানী স্পিনার কাইস আহমেদকে ছক্কা মেরে হাত খুলেছিলেন মাহেদি। তবে পরের বলেই স্টাম্পড হন ১৮ বলে ১৭ রান করা এ তরুণ ব্যাটার।
দলের বিপর্যয়ের মধ্যে শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরোকে নিয়ে রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন রাজা। ১৫তম ওভারে পরপর দু’বলে মাহমুদউল্লাহকে ছক্কা মারেন রাজা। তবে ১৭তম ওভারের প্রথম বলেই ফজল হক ফারুকির শিকার হন ১২ রান করা পেরেরো। পেরোর পর আর কোন স্বীকৃত ব্যাটার না থাকায় শেষ দিকে দলকে একাই টানেন রাজা। ১৯তম ওভারে আজমতউল্লাহর শেষ দুই বলে ১০ রান নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১৩তম ও বিপিএলে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন রাজা।
ফারুকির শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মারেন ক্রিজে রাজার সঙ্গী রুয়েল মিয়া। আর চতুর্থ বলে ছক্কা হাকান রাজা। তবে শেষ বলে আউট হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১২৯ রানের সংগ্রহ পায় খুলনা। ৫০ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৪ রান করেন রাজা। ৮ রানে অপরাজিত থাকেন রুয়েল। ঢাকার সানি ১৫ ও আজমতউল্লাহ ২৫ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
১৩০ রানের টার্গেটের শুরুতেই ডাবল ধাক্কা খায় ঢাকা। ১২ রানের মধ্যে তামিম ও তার সঙ্গী ইমরান উজ্জামান প্যাভিলিয়নে ফিরেন।
দ্বিতীয় ওভারে রুয়েল মিয়াকে তামিম চার ও ইমরান ছক্কা মেরে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে ইনিংসের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে তামিমকে ৬ রানে লেগ বিফোর আউট করেন খুলনার বাঁ-হাতি স্পিনার নাবিল সামাদ।
অন-ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিক। তৃতীয় আম্পায়ার তামিমকে আউট দেন। ওই ওভারটি উইকেট মেডেন নেন নাবিল। পরের ওভারে পেসার খালেদ আহমেদের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে নাবিলকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ইমরান। তামিমের মত ইমরানও করেন ৬ রান।
শুরুর ধাক্কাটা সামলে উঠতে সাবধান ছিলেন ঢাকার জহিরুল ইসলাম ও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তাই পাওয়ার প্লেতে ২৯ রানের বেশি পায়নি ঢাকা। পাওয়ার প্লে শেষে রান তোলার গতি বাড়ান জহিরুল ও মাহমুদউল্লাহ। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেন তারা। এতে ১২ ওভার শেষে ৬৮ রান পায় ঢাকা।
১৩তম ওভারে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া জহিরুলকে বোল্ড করে খুলনাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন রুয়েল। ৩৫ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩০ রান করেন জহিরুল। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সাথে ৫৫ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তিনি। জহিরুলের বিদায়ে উইকেটে এসে খালেদ আহমেদের করা ১৪তম ওভারে দু’টি ছক্কা মারেন শামসুর রহমান।
পেরেরার করা ১৬তম ওভার শামসুরের বাউন্ডারিতে শুরু হলেও শেষটা ভালো ছিল না ঢাকার। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে লং-অফে ইয়াসিরকে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খায় ঢাকা। ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৬ বলে ৩৪ রান করেন অধিনায়ক।
মাহমুদউল্লাহ যখন ফিরেন তখন ঢাকার ২৪ বলে ২৯ রান দরকার ছিল। ১৭তম ওভারে ৫ রান আসে। পেরেরার করা ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই আউট হন শামসুর। তবে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৪ বলে ২৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন শামসুর।
শামসুরের বিদায়ের ওভারে ৯ রান আসায় শেষ ১২ বলে ঢাকার প্রয়োজন পড়ে ১৫ রান। খালেদের করা ১৯তম ওভার থেকে ৪ রানের বেশি নিতে পারেননি শুভাগত হোম ও আজমতউল্লাহ। এতে শেষ ওভারে জিততে ১১ রানের সমীকরণ দাঁড়ায়।
শেষ ওভারে বল করতে আসেন পেরেরা। প্রথম দুই বলে দুই ছক্কায় ঢাকাকে জয়ের স্বাদ দেন শুভাগত। প্রথম বলটি বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মারেন শুভাগত। পেরেরার পরের স্লোয়ার ডেলিভারিটি কভার দিয়ে ছক্কা মেরে ঢাকার জয় নিশ্চিত করেন শুভাগত।
৯ বলে ১৮ রানে শুভাগত ও ৭ বলে ১০ রানে অপরাজিত থাকেন আজমতউল্লাহ। খুলনার পেরেরা ৩৯ রানে ২ উইকেট নেন। ১৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা ঢাকার সানি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মিনিস্টার ঢাকার আরাফাত সানি।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]