যেভাবে জুয়ার ফাঁদে পড়েছিলেন টেইলর

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২২
যেভাবে জুয়ার ফাঁদে পড়েছিলেন টেইলর

স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা দীর্ঘদিন গোপন করায় ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বড় শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার ব্রেন্ডন টেইলর। তবে এর আগেই এ ঘটনার পিছনের গল্প জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছে, প্রস্তাব পেয়েছিলেন তবে স্পট ফিক্সিং করেননি তিনি।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান ব্রেন্ডন টেইলর। এরপর থেকে কোনো আলোচনাতেই ছিলেন না তিনি। তবে বিশাল এ বিবৃতি দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন টেইলর। জানিয়েছেন, প্রস্তাব পেলেও ফিক্সিং করেননি তিনি। তবে প্রস্তাব পাওয়ার চার মাস পরে আইসিসিকে জানিয়েছিলেন, মূলত দেরি করার কারণেই শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি।

এক বিবৃতিতে টেইলর বলেন, ‘স্পন্সরশিপ ও জিম্বাবুয়েতে সম্ভাব্য একটি টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা চালুর বিষয়ে আলোচনা করতে ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী আমাকে ভারতে যেতে অনুরোধ করেন। বলা হয়, এজন্য আমাকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়া হবে।’

এ কাজটা বাধ্য হয়েই করেছিলেন বলে জানান টেইলর। কারণ এর আগে প্রায় ছয় মাস জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট থেকে কোনো ধরনের বেতন পাননি তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলে যেতে পারবেন কি না সে বিষয় নিয়েও তৈরি হয়েছিল সংশয়। তাই এ আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন বলে জানান।

আলোচনায় অংশ নেওয়ার পরই জুয়াড়ির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বসেন টেইলর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পানীয় পান করেছিলাম এবং সন্ধ্যায় এক সময় তারা আমাকে খোলাখুলিভাবে কোকেন অফার করে, তারাও কোকেন নিচ্ছিল এবং আমি বোকামি করে টোপটা গিলেছিলাম। এরপর অসংখ্যবার এটা নিয়ে ভেবেছি, সে রাতের ঘটনাপ্রবাহ মনে করে এখনও অসুস্থ বোধ করি, তারা আমাকে কীভাবে বোকা বানিয়েছিল।’

কোকেন নেওয়ার পরও তাকে কোনো ফিক্সিং প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। পরের দিন সকালে এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা হয় বলে জানান টেইলর। বলেন, ‘পরের দিন সকালে সেই একই লোকগুলো আমার হোটেল রুমে আসে এবং আগের রাতের কোকেন নেওয়ার ভিডিও দেখিয়ে আমাকে বলে, আমি যদি তাদের জন্য আন্তর্জাতিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিং না করি, তাহলে ভিডিওটি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।’

আরও বলেন, ‘আমি কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলাম। ওই ৬ জন তখন আমার রুমে, নিজের নিরাপত্তার জন্য ভয় পেয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, আমি শেষ হয়ে গেছি। যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে ফেলেছি, যা আমার জীবনকে চিরতরে বদলে দিয়েছে।’

এ ঘটনার পরই টেইলরকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়া হয়। অবশ্য এ ১৫ হাজার ডলার নিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানান টেইলর। এটি না নিলে হয়তো বিপদেও পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন ব্রেন্ডন টেইলর।

বলেন, ‘আমাকে ১৫ হাজার ডলার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বলা হয়েছিল এটা স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য ‘আগাম’ দেওয়া হলো এবং ‘কাজ’ শেষ হলে আরও ২০ হাজার ডলার দেওয়া হবে। আমি সেই অর্থটা নিই, যাতে প্লেনে উঠতে পারি এবং ভারত ছাড়তে পারি। আমার মনে হয়েছিল, এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না, কারণ তখন না বলার কোনো সুযোগ ছিল না। তখন আমার শুধু মনে হচ্ছিল, সেখান থেকে বেরোতে হবে।’

পরিবারের নিরাপত্তা বিবেচনায় এ ঘটনা আইসিসিকে জানাতে আরও চার মাস সময় লেগেছিল বলে জানান টেইলর। তার ধারণা ছিল, আইসিসি তার দেরি করার কারণটা বুঝতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওই ‘ব্যবসায়ী’ তার বিনিয়োগের বিনিময় চেয়েছিল, যা আমি দিতে পারিনি এবং দিতামও না। এই অপরাধের বিষয়ে আইসিসিতে রিপোর্ট করতে আমার ৪ মাস সময় লেগে যায়। আমি স্বীকার করি, সময়টা বেশি লেগেছিল, কিন্তু ভেবেছিলাম আমি সবাইকে রক্ষা করতে পারব, বিশেষ করে আমার পরিবারকে। আমি আমার নিজের ইচ্ছায় আইসিসির কাছে গিয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম, কঠিন সেই সময়ের কথা, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিকারে ভয়ের ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে পারলে তারা এই দেরি করার কারণটা বুঝতে পারবে।’

আইসিসির তদন্তে প্রত্যেকবারই নিজের সঠিক তথ্যটা দিয়েছেন এবং স্বচ্ছ্ব ছিলেন বলে জানান টেইলর। এছাড়াও এ ঘটনা থেকে বের হয়ে আসতে আরও নিজেকে রিহ্যাবেও রেখেছেন তিনি। এখন দেখার অপেক্ষা কতদিনের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হন টেইলর।

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর

[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

জুয়ারির প্রস্তাব গোপন করে শাস্তির মুখে টেইলর

জুয়ারির প্রস্তাব গোপন করে শাস্তির মুখে টেইলর

অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে নিষিদ্ধ জিম্বাবুয়ের যুব ক্রিকেটার

অবৈধ বোলিং অ্যাকশনে নিষিদ্ধ জিম্বাবুয়ের যুব ক্রিকেটার

কাউন্টি দল সাসেক্সের দায়িত্ব নিলেন গ্রান্ট ফ্লাওয়ার

কাউন্টি দল সাসেক্সের দায়িত্ব নিলেন গ্রান্ট ফ্লাওয়ার

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন টেইলর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন টেইলর