আধুনিক ক্রিকেটে দলগুলোর একাদশে সাধারণত একজন লেগ স্পিনারের দেখা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। স্কোয়াডে থাকলেও একাদশে লেগ স্পিনারকে খেলানোর সাহসই দেখায় না টিম ম্যানেজমেন্ট। শুধু জাতীয় দল নয়, ঘরোয়া ক্রিকেট এমনকি বয়স ভিত্তিক দলেও একজন লেগ স্পিনার পাওয়া যায় না। দলে লেগ স্পিনার না পাওয়ার পিছনে মূল কারণ উইকেট এবং ক্রিকেটারদের সাহসের অভাব, এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন।
নতুন বছরের শুরুতেই মাঠে গড়াবে যুব বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপের আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপ খেলতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তবে দুই টুর্নামেন্টের স্কোয়াডে একজন লেগ স্পিনারের দেখা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দেশ ছাড়ার আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে কোচ নাভিদ নওয়াজ জানিয়েছিলেন, মানসম্পন্ন কোনো লেগ স্পিনার না থাকায় অফ স্পিনারদের উপরই ভরসা রাখতে চান তিনি।
অনূর্ধ্ব ১৯ দলের প্রধান নির্বাচকের মতে দেশে লেগ স্পিনার তৈরি করার মতো কোনো উইকেট নেই। এছাড়াও দেশে ক্রিকেটারদের মধ্যে লেগ স্পিনার হওয়ার জন্য যে সাহসের দরকার সেই সাহসও নেই।
এ বিষয়ে সাজ্জাদ আহমেদ শিপন স্পোর্টসমেইল২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিতে কি লেগ স্পিনার আছে প্রচুর? আমাদের সংস্কৃতিতে হাতে গোনা কয়েকজন লেগ স্পিনার আছে। উইকেটের উপর নির্ভর এবং লেগ স্পিনার হওয়ার জন্য প্রচুর সাহসের দরকার হয়। এই দুইটা জিনিসে কমতি আছে। আমাদের লেগ স্পিনার হওয়ার মতো উইকেট নেই। আর ক্রিকেটারদের মধ্যে লেগ স্পিনার হওয়ার মতো সাহসও নেই। এই কারণেই লেগ স্পিনার তৈরি হচ্ছে না।’
এছাড়াও আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, ‘এটা (লেগ স্পিনার) তো তৈরি করতে পারবো না। এটা নরমালি তৈরি হয়।’
জাতীয় দলে বর্তমানে লেগ স্পিনার হিসেবে নিয়মিত স্কোয়াডে ডাক পাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। তবে একাদশে জায়গা না পেয়েই দিন কাটে তার। এর আগে একই ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিলেন লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন।
দলে লেগ স্পিনারের ঘাটতি থাকলেও দল বিশ্বকাপ জয় করতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি আরও জানান, নতুন ক্রিকেটার তৈরির মূল লক্ষ্যের প্রতি সজাগ দৃষ্টি আছে তাদের।
দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা তৈরি করার লক্ষ্যেই এবারের সফরকে শিরোপা ধরে রাখা মিশন বলে জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যুবাদের প্রধান নির্বাচক।
সাজ্জাদ আহমেদ শিপন বলেন, ‘আমরা আমাদের ফোকাস থেকে সরে যায়নি। আমরা ক্রিকেটার তৈরি করার দিকেই লক্ষ্য রাখছি। আমরা যদি লক্ষ্য (বিশ্বকাপ জয়) ঠিক করে আগাই তাহলে ছেলেদের মধ্যে একটা তাড়না থাকে।’
এছাড়াও এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ খেলার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে ভারতের যুবাদের বিপক্ষে সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ দল। সে সিরিজের আগে দলে ডাক পান যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই সদস্য রাকিবুল হাসান এবং তানজিম হাসান সাকিব। দলে প্রতিন্দ্বন্দ্বীতা বাড়ানোর জন্যই মূলত তাদেরকে দলে ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাজ্জাদ আহমেদ।
‘দুইটা সিনিয়র এবং আরও কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় থাকলে দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা তৈরি হয়। আমরা ওই প্রতিদ্বন্দ্বীতাটা তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করতেছি। এর বেশি কিছু না। কি জিতলাম না জিতলাম সেটা কোনো বিষয় না। ভবিষ্যতের জন্য কয়টা খেলোয়াড় তৈরি হলো, সেটাই আমাদের জন্য বিষয়।’- বলেন সাজ্জাদ আহমেদ।
বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশের যুবাদের সর্বশেষ সিরিজ ছিল ভারত সফর। এ সফরের আগে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও শেষ দুই ম্যাচে হেরেছিল যুব টাইগাররা।
আফগানিস্তান সিরিজের পর শ্রীলঙ্কায় আতিথ্য নেয় যুব টাইগাররা। সেখানে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই হারের মুখ দেখে বাংলাদেশের যুবারা। এ হারের কারণেই দলে জয়ের ক্ষুধা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন যুব দলের প্রধান নির্বাচক।
এ বিষয়ে সাজ্জাদ আহমেদ বলেন, ‘ভারত সিরিজের আগে আমরা কয়েকটা ম্যাচ হেরেছি। আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় সাতটা ম্যাচ হেরেছি। এই হারাটা আমাদের কারোরি ভালো লাগেনি। এটা আমাদের মনের মধ্যে জিদ তৈরি করে দিয়েছে।’
আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার কাছে হারেই দলের মানসিকতা পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে ক্রিকেটাররা নিয়মিত জয় পাওয়া শিখেছে বলে জানান তিনি।
বলেন, ‘ওইখান থেকেই আমাদের মোটিভ পরিবর্তন হয়েছে। জেতার জন্য আমাদের কি করতে হবে, সেটা এখন ওরা জানে।’
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]