বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ : সমালোচনা, লজ্জা এবং অর্জন

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২১
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ : সমালোচনা, লজ্জা এবং অর্জন

বছরের শেষ সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্ট কোনো সিরিজেই কাঙ্খিত জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দুই সিরিজেই হয়েছে হোয়াইটওয়াশ। এ সিরিজে বাংলাদেশের অর্জনের খাতা শূন্য হলেও তৈরি হয়েছিল কিছু সমালোচনা এবং লজ্জা।

টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল ঘোষণা দিয়ে শুরু করা যাক। সিরিজ শুরুর মাত্র দুইদিন আগে ঘোষণা করা হয়ে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড। সবাইকে চমকে দিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে ডাক পান সাইফ হাসান, আকবর আলি এবং শহিদুল ইসলাম। 

দল ঘোষণার সময় জানানো হয়, টেস্ট সিরিজের কথা মাথায় রেখে মুশফিককে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। তবে দল ঘোষণার পর পরই মুশফিক জানান, তাকে বিশ্রাম দেওয়ার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। সংবাদ মাধ্যমে এ কথা বলায় তাকে মুশফিককে শোকজ করে বিসিবি। 

টেস্ট ব্যাটার সাইফ হঠাৎই টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে, ঘটনাটা তৈরি করে বেশ সমালোচনা। এরপরেও তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতে খেলেন তিনি। দুই ম্যাচ মিলিয়ে করেন মাত্র ১ রান। ফুটে উঠে তার ব্যাটিং টেকনিকের দূর্বলতাগুলো। তবুও টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা করে নেন সাইফ।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে ছিলেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। তবে উইকেটে বাঁহাতি ব্যাটার থাকায় বোলিং করাননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচ শেষে রিয়াদ তার ব্যাখ্যায় এ কথা বললে, বিপ্লবের জায়গা নিয়ে উঠে প্রশ্ন। তবে শেষ দুই ম্যাচের কোটার পুরো ওভার বোলিং করিয়েছিলেন অধিনায়ক।

দ্বিতীয় ম্যাচে নতুন বিতর্ক। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে মাঠে ঢুকে পড়েন এক পাগলাটে দর্শক। হঠাৎই এভাবে মাঠে দর্শক প্রবেশ করার বিষয়টি মিরপুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদিও পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করে বিসিবি।

প্রথম দুই টি-টোয়েন্টি হেরে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় বাংলাদেশের, সে সময় টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পান দুই ক্রিকেটার পারভেজ হোসেন ইমন এবং কামরুল ইসলাম রাব্বি। ধারণা করা হয়েছিল ওপেনিং সমস্যা সমাধানে ইমনকে দলে ডাকা হয়েছে। 

তবে তৃতীয় ম্যাচের আগে দলে ডাক পাওয়া দুই ক্রিকেটারেই কেউই সুযোগ পাননি একাদশে। ম্যাচের আগে হঠাৎ করে দুই ক্রিকেটারকে স্কোয়াডে ডেকে তাদেরকে না খেলানোটা তৈরি করে সমালোচনা।

তৃতীয় ওয়ানডেতে নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামেন পেসার শহিদুল ইসলাম। এ ম্যাচে উইকেট পেলে সাকিব আল হাসানের পুরাতন ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহিদুলের নামে চালিয়ে দেয় বিসিবি। বিসিবির এ ঘটনাও দেশব্যাপী তৈরি করে সমালোচনা।

টি-টোয়েন্টি সিরিজ জুড়ে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দর্শক ইস্যু। পাকিস্তান সিরিজ দিয়েই দীর্ঘদিন পর মাঠে ফিরেছিল বাংলাদেশের দর্শকরা। তবে মাঠে বাংলাদেশকে সমর্থন নয়, বরং পাকিস্তানকে সমর্থন দিতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন তারা।

এছাড়াও ঢাকায় পা রেখে প্রথম দিনের অনুশীলনে মাঠে পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তান দল। মাঠে পতাকা টানানো বৈধ কিনা সেটা নিয়েও দেশের সর্বস্তরে তৈরি করেছিল সমালোচনা।

এতো গেল টি-টোয়েন্টি। টেস্টে তো সমালোচনা এগিয়ে ছিল আরও এক ধাপ। টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টেও ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের টিকিটে সকাল ১০ টা নয়, বরং রাত ১০ টায় খেলা শুরুর সময় উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

এমনকি চট্টগ্রাম টেস্টে নিজ দেশের নামও ভুল করে বিসিবি। আবারও সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ক্রিকেট।

মাঠের পারফর্মেন্স দিয়েও সে সমালোচনা ঢাকতে পারেনি মমিনুল বাহিনী। দুই টেস্টেই ছিল টপ অর্ডারদের হতশ্রী পারফর্মেন্স। চট্টগ্রাম টেস্টে খেলা বাংলাদেশের দুই পেসার ইবাদত হোসেন কিংবা আবু জায়েদ রাহি, নির্বিষ বোলিং আবারও তাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়া করায়

দীর্ঘদিন পর মাঠে দর্শক ফিরেছিল জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে। তবে দর্শকরা বসে খেলা দেখবেন সে উপায় রাখেনি বিসিবি কিংবা মাঠ কর্তৃপক্ষ। গ্যালারির ভাঙা চেয়ারে দর্শকদের বসার কোন উপায়ই ছিল না।

এ ম্যাচে আবারও সমালোচনায় আসেন ওপেনার সাইফ হাসান। চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসেই শাহিন শাহ আফ্রিদির বাউন্সারে উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি। তার ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠে।

তবে এ সিরিজের সব সমালোচনাকে দূরে সরিয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলেন ইয়াসির আলি রাব্বি। তবে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠে ছাড়ায় অভিষেকটা হয়নি সুখকর।

এতো গেল চট্টগ্রাম! চট্টগ্রাম পর্ব শেষে হঠাৎই টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পান নাঈম শেখ। দীর্ঘ ২১ মাস কোনো ধরনের লঙ্গার ভার্সন ম্যাচ না খেলেই টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পান তিনি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতার কারণেই জাতীয় দলে সুযোগ পান নাঈম। এমনটাই জানিয়েছিলেন নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। 

ঢাকা টেস্টের আড়াইদিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্বে আড়াই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর টেস্ট হারার নজির নেই বললেই চলে। সেখানে ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংস এবং ৮ রানের ব্যবধানে ম্যাচ হারে মমিনুল বাহিনী।

এ ম্যাচে ব্যাটার কিংবা বোলার, কারও কাছ থেকেই আসেনি প্রত্যাশামাফিক কোনো পারফর্মেন্স। অবশ্য এ ম্যাচের আগে অধিনায়ক মমিনুল জানিয়েছিলেন, ‘ধানক্ষেত হলেও আমাদেরকে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’ ধানক্ষেত নয়,ভালো উইকেট পেয়েও নিজেদের সেরা ক্রিকেটাটা খেলতে পারেননি মমিনুল বাহিনী।

এতো সমালোচনা-লজ্জার মধ্যে নিজের কাজটা করে গেছেন সাকিব আল হাসান এবং লিটন দাস। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম সময়ে চার হাজার রান এবং ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খারাপ পারফর্মেন্সের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে টেস্টে নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন লিটন দাস।

চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ দুই ইনিংসের পর, ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো ব্যাটিং করেন। তবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দলকে চূড়ান্ত বিপর্যয়ে দিকে ঠেলে দেন লিটন। তবুও নিজের কাজটা করে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন লিটন।

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর

[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

২০২৩ সাল পর্যন্ত টাইগারদের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ

২০২৩ সাল পর্যন্ত টাইগারদের স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ

উইকেটে টিকে থাকতেই আক্রমণাত্মক খেলেছি : শান্ত

উইকেটে টিকে থাকতেই আক্রমণাত্মক খেলেছি : শান্ত

কেন এতো তাড়াহুড়ো, বুঝতেছি না : সুজন

কেন এতো তাড়াহুড়ো, বুঝতেছি না : সুজন

অভিষেকের ৪১৯ বলে খালেদের প্রথম উইকেট শিকার

অভিষেকের ৪১৯ বলে খালেদের প্রথম উইকেট শিকার