সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন শুরু করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ২টায় পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এ সিরিজ দিয়ে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর প্রথমবারের মতো মাঠে দর্শক প্রবেশের করতে পারছে।তবে সে জন্য থাকতে হবে টিকা নেয়ার সনদ।
সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বড় পরিবর্তন এনে নতুন রুপে বাংলাদেশ দলকে সাজানো হয়েছে। বিশ্বকাপে যাচ্ছেতাই পারফর্মেন্সের কারনে চার নতুন মুখসহ ছয় ক্রিকেটারকে দলে ডাকা হয়েছে।
বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে কোন ম্যাচেই জয় পায়নি বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের মতো দলের কাছে হেরে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। পরে ওমান এবং পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে স্বস্তির জয় তুলে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেয় টাইগাররা।
অনেকদিন পর বছর পর দলের সেরা তিন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমকে ছাড়া খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ইনজুরিস সমস্যায় দলের বাইরে রয়েছেন সাকিব-তামিম। টেস্ট সিরিজকে সামনে রেখে মুশফিককে দেয়া হয়েছে বিশ্রাম। দলে একমাত্র সিনিয়র খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপে দলের খারাপ পারফরমেন্সের পরও অধিনায়কত্ব ধরে রেখেছেন মাহমুদুল্লাহ।
বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন লিটন দাস,সৌম্য সরকার এবং রুবেল হোসেন। পিঠের ইনজুরির কারণে সিরিজের দলে নেই অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
পাকিস্তান সিরিজের দলে আবারও ডাক পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। নতুন হিসেবে এ ফরম্যাটে ডাক পেয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলি, সাইফ হাসান, ইয়াসির আলি চৌধুরি এবং পেসার শহিদুল ইসলাম।
পাকিস্তান সিরিজে দলে বড় পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও এত বড় পরিবর্তন অনেকেই প্রত্যাশা করেননি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু স্পষ্ট করেছেন, এ ফরম্যাটে নতুন শুরু করতে চান তারা। তাই এত বেশি নতুন খেলোয়াড়দের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে পারফরমেন্স ভাল না হওয়ায় আসন্ন সিরিজে আমাদের কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছে।’
নান্নু আরও বলেন, ‘নতুন ডাক পাওয়া খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ভালভাবে প্রস্তুত করবে বলে আশা করছি।’
কিন্তু প্রশ্ন হল তারা কি আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারবে?
সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল খেলেছে তারা। সেমিতে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের সবগুলোতে জিতলেও, নক-আউট পর্বে দিনটি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল না। সুপার টুয়েলভে চিরপ্রতিন্দন্দ্বী ভারতের বিপক্ষেও স্মরনীয় জয় পেয়েছে পাকিস্তান। যা ছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয়।
পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে একটি ম্যাচ জেতাও কঠিন কাজ হবে বাংলাদেশের। তবে অতীত থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে টাইগাররা। সর্বশেষ দু’বার ঘরের মাঠে এই ফরম্যাটে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়ে, দু’বারই জিতেছিলো বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এবং ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে জিতেছিলো টাইগাররা।
ঘরের মাঠে সর্বশেষ দু’টি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জিতেছিলো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে টাইগাররা। যদিও ঐ দুই সিরিজের উইকেট নিয়েও হয়েছিল সমালোচনা। সিরিজ জিতলেও, সমালোচনার ঝড় ঠিকই উঠেছিলো। আশা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেট প্রস্তুত করা হবে।
২০১৫ সালের পর আবারও বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে পাকিস্তান। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাটিতে এশিয়া কাপ খেলেছিলো পাকিস্তান। বাংলাদেশের মাটিতে শেষ দুই টি-টোয়েন্টিতে হারলেও, বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারণে আত্মবিশ্বাসী থাকবে পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১২ ম্যাচের ১০টিতেই জিতেছে পাকিস্তান।
তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স আশানুরুপ নয়। ১৪৩ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৪৩টিতে জিতেছে টাইগাররা। ৭৫টি ম্যাচ হারের পাশাপাশি ২টি পরিত্যক্ত হয়।
দলে ফেরা নাজমুল হোসেন শান্ত জানান, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলার কারণে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সর্ম্পকে থাকা ধারণা সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল। বিপিএলে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের সাথে ও বিপক্ষে খেলার সুযোগ আমাদের হয়েছে। সেটা বিবেচনায় আমরা আত্মবিশ্বাসী কারণ আমরা ঐ বোলারদের মোকাবেলা করেছি বা সেই ব্যাটারদের বিপক্ষে বল করেছি। বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতিটি দলই ভালো। আমরা সেটা নিয়ে ভাবতে চাইনা। আমাদের যা করতে হবে তা হলো শুধু বল দেখা এবং খেলা। ভাল খেলতে হবে আমাদের।’
বাংলাদেশ স্কোয়াড
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সাইফ হাসান, নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মাহেদি, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলি রাব্বি, শহিদুল ইসলাম এবং আকবর আলী।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্ট্রল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]