বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ কিংবা তর্ক করার জায়গা নেই। তবে জনপ্রিয় হয়ে উঠার শুরুটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। একের পর এক বাধা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশের ক্রিকেট পেয়েছে জনপ্রিয়তা। যদিও এর আগের সে গল্পগুলো আমাদের কাছে বড়ই অজানা। ইন্টারনেট কিংবা পুরোনো পত্র-পত্রিকা ঘেটে সে তথ্যগুলো পাওয়া বেশ দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তথ্য ঘেটে জানা যায় বাংলাদেশে ক্রিকেটের আগমণ ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। তখন থেকেই বাংলাদেশে চলছে ক্রিকেট।
বাংলাদেশে ক্রিকেটের আগমণ বৃটিশ আমলে। সে সময় প্রথম কবে এবং কোথায় ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল তা জানা যায়নি। তবে পুরোনো রেকর্ড ঘাটলে জানা যায় ১৯৪১ সালে ঢাকায় প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ হয়। সে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বেঙ্গল গর্ভনর একাদশ এবং বেঙ্গল জিমখানা। সেখান থেকেই বাংলাদেশের ভূখন্ডে শুরু ক্রিকেট।
১৯৪৭ এর দেশভাগের পর ক্রিকেট আস্তে আস্তে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দেশভাগের পর থেকে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়কালে বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের অংশ। তখন এ অঞ্চলের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
পুরো পাকিস্তানজুড়ে সবচেয়ে স্টেডিয়াম ছিল ঢাকা স্টেডিয়াম (বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম)। তাই তো তখন ঢাকায় বসতো টেস্ট ক্রিকেটের আসর। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে ঢাকায় হয়েছিল সাতটি টেস্ট। এছাড়াও নিয়মিতই আমন্ত্রণমূলক বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এবং ঘরোয়া লিগের ম্যাচ ঢাকায় আয়োজিত হতো।
১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। এরপরেই শুরু হয় ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশের লড়াই। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিবি)। একই বছর স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে প্রথম ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়।
যুদ্ধ বিধস্ত দেশ পুর্নগঠনের সময় খেলাধুলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ ছিল অনেকখানি কম। তবে আস্তে আস্তে দেশ কিছুটা সচল হয়ে উঠলে শুরু হয় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট।
১৯৭৪ সালে শুরু হয় ক্রিকেট লিগ। জেলা ভিত্তিক প্রথম-দ্বিতীয় ডিভিশন শুরু করে ক্রিকেট বোর্ড। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫-৭৬ ক্রিকেট মৌসুম শেষে ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রিকেট কনফারেন্সের (বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) কাছে সদস্য পদের আবেদন করে।
একই বছর বাংলাদেশ সফরে আসে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের একটি আমন্ত্রণমূলক দল। সে দলের সফর শেষেই আইসিসির সদস্য পদ পায় বাংলাদেশ। তবে পূর্ণ সদস্য নয়, পায় সহযোগী সদস্যের মর্যাদা।
সহযোগী সদস্য পদ পাওয়ার পর ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে বিসিসিবি। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭৮ সালে ঢাকায় আসেন মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবের কোচ রবার্ট জোনস। এছাড়াও একই বছর ঢাকায় আসে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের ক্রিকেট যে নিয়মিতই উন্নতি করছে তা বোঝা যাচ্ছিল। ১৯৭৮ সালেই দীর্ঘ এক মাসের সফরে দ্বিতীয় বারের মতো ঢাকায় আসে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব।
এরপরেই আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া এ আসরে অবশ্য ভালো করতে পারেনি। প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ফিজি এবং মালয়েশিয়াকে হারিয়েছিল। পরবর্তী পাঁচটি আসরে অংশ নিয়েও সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ।
১৯৯৭ সালে আসে সেই মহেন্দ্রক্ষণ, সে বছর কেনিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় এবং প্রথমবারে মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা। অবশ্য এর আগে থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের প্রস্তুতি। কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে সেবার শিরোপা জিতে নেয়। অবশ্য এর আগেই ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়েছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি নিয়মিতই বিভিন্ন দ্বি-পাক্ষিক এবং ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের এক বছর আগে ১৯৯৬ সালে টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ। তবে সেবার টেস্ট খেলার অনুমতি পায়নি বাংলাদেশ। তবে ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করার পর ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ।
১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে হারানোর বছরই আবারও টেস্ট মর্যাদার জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ। অবশেষে ২০০০ সালের ২৬ জুন অপেক্ষার অবসান ঘটে। সবগুলো দেশের অনুমতিক্রমেই পায় টেস্ট মর্যাদা।
একই বছর নিজেদের অভিষেক টেস্ট খেলতে ভারত এবং ইংল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। অবশেষে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামে বাংলাদেশ। উত্তেজনা এতটাই ছিল না অভিষেক টেস্টে নিজেদের দলীয় ছবি তুলতেই ভুলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ক্রিকেট ইতিহাসে ওই ম্যাচেই প্রথমবারের দুই বাঙ্গালী টেস্টে টস করতে নেমেছিল।
২১ বছরের পথচলায় ১২৪ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এ সময় ১৫ ম্যাচে জয়ের পাশাপাশি ১৭ ড্র এবং ৯২ টেস্টে হেরেছে বাংলাদেশ।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]