নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন পাকিস্তানি ব্যাটার আসিফ আলি। এরপরেই পাকিস্তান ক্রিকেটের নায়ক তিনি। তবে নায়ক হওয়ার আগে ভিলেন হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই অপমান ঘুচিয়ে এখন পাকিস্তানের নায়ক আসিফ আলি।
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে আসিফ আলির নাম দেখে বেশ চমকেই উঠেছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট সমর্থকতা। তাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি পাকিস্তানের গণমাধ্যমও শুরু করেছিল তীব্র সমালোচনা। সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে পাকিস্তানের নতুন নায়ক আসিফ আলি।
পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে আসিফ আলির সুযোগ পাওয়া নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। এ প্রশ্ন উঠাটাই ছিল স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০১৮ সালে অভিষেকের পর থেকে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগ পর্যন্ত কখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার ছিলেন না তিনি।
বিশ্বকাপের আগে খেলা ১২ ইনিংসে মাত্র ৮.৯১ গড়ে করেছিলেম ১০৭ রান। এ সময় তার স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ১০০। তাই তো দলে তার সুযোগ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক ছিল। নিউজিল্যান্ড কিংবা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১ বলে ৪১ রান করেছিলেন তিনি। এরপর বিশ্বকাপের আগে আর কখনই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।
২০১১ সালে হঠাৎই ক্রিকেটে আসেন আসিফ আলি। ক্রিকেটে আসার আগে লোহার কারখানায় কাজ করা আসিফ প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে তখনকার অধিনায়ক মিসবাহর নজর কাড়েন। সেখান থেকে ন্যাশন্যাল টি-টোয়েন্টি কাপ হয়ে পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) দল ইসলামবাদ ইউনাইটেডে খেলার সুযোগ পান। সেখান থেকেই আসিফ আলির উত্থান। তবে জাতীয় দলের জার্সিতে ভালো খেলতে না পারা অপবাদটা সবসময়ই ছিল।
২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে ১৮ মাস বয়সী কন্যার মৃত্যুর কারণেও ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ ভুগেছেন ৩০ বছর বয়সী আসিফ। তবে ক্যারিয়ার নিয়ে ধুকলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এ হার্ড হিটার।
জাতীয় দলে মূলত স্লগার রোলে খেলা আসিফ ক্যারিয়ার জুড়ে পেয়েছেন মিসবাহ উল হকের ছায়া। মূলত তার কারণেই একের পর এক ব্যর্থতা সত্ত্বেও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে সে সুযোগকে ঠিকই কাজে লাগিয়েছেন আসিফ। শুধু কাজে লাগাননি, হয়েছেন পাকিস্তানের তারকা।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ম্যাচে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের ম্যাচে জয়ের নায়ক ছিলেন আসিফ আলি। দুই ম্যাচেই ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের সাবেক কোচ মিসবাহ উল হক আসিফের সফলতায় প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস। বলেন, ‘সে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে এবং তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছে। এতে আমি আনন্দিত।’
পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘তারা তাকে (আসিফ আলি) সিফর্সি, পারচি যাই বলুক না কেন আসিফ দেখিয়েছে প্রতিভাবান ক্রিকেটার কিভাবে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।’
আসিফ আলির সবচেয়ে বড় ভক্ত ছিলেন প্রয়াত অস্ট্রেলিয় কিংবদন্তি ডিন জোন্স।
‘আসিফ হচ্ছে সত্যিকারের মেধাবী’। ম্যাচে ইসলামাবাদ প্রতিপক্ষ পেশোয়ারকে পরাজিত করে। তিনি বলেন, ‘সে একজন দৃঢ়চেতা খেলোয়াড়, যে চোখের পলকে ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।’
২০১৯ সালের মার্চে পিএসএলের ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আসিফের কন্যা সন্তানের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার খবর পেয়ে কেঁদে ফেলেছিেেলন জোন্স। তার চিকিৎসার জন্য তহবিলও গঠন করেছিলেন তিনি। দুইমাস পরেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান আসিফের ছোট্ট কন্যাটি।
ওই সময় ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন আসিফ। কিন্তু দুই ম্যাচে অংশ নিয়ে মাত্র ১৯ করায় তাকে স্কোয়াড থেকে সরিয়ে নেয় পাকিস্তানের নির্বাচকরা।
নিজের চলার পথকে ‘বেদনাদায়ক যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন আসিফ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘এটি ছিল কঠিন একটি যাত্রাপথ। আমি মিসবাহকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি আমাকে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তার কাছে আমি চিরকালের জন্য কৃতজ্ঞ।’
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]