সুপার সিক্সের শেষ ম্যাচে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৯৪ রানে হারিয়ে এক মৌসুম পর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিডিসিএল) শিরোপা জিতলো আবাহনী লিমিটেড। এ নিয়ে ১৯তম বারের মত লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলো আবাহনী।
লিগের শেষ ম্যাচ জিতে ১৬ খেলা শেষে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে শিরোপার স্বাদ নেয় আবাহনী। সমানসংখ্যক ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে রানার-আপ হলো রূপগঞ্জ। অন্যদিকে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির কাছে ৪ উইকেটে হেরে রূপগঞ্জের মত সমান ২০ পয়েন্ট অর্জন করে রান রেট বিবেচনায় তৃতীয় স্থান দখল করেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
জিতলেই শিরোপা ঘরে তুলবে আবাহনী। এমন সমীকরণ নিয়ে সাভারের বিকেএসপি’র তিন নম্বর মাঠে রূপগঞ্জের মুখোমুখি হয় আবাহনী। টস জিততে না পেরে ম্যাচের শুরুতেই ব্যাট হাতে ক্রিজে হাজির হন এবারের লিগে সফল ও আবাহনীর দুই ওপেনার এনামুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত। পুরো মৌসুমে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এনামুল ও শান্ত আজও নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন।
শুরু থেকে রূপগঞ্জের বোলারদের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেন এনামুল ও শান্ত। পুরোপুরি সফল না হওয়ায় প্রথম ৫ ওভারে ৩০ রান যোগ করতে পারেন তারা। তবে পরের ৫ ওভারেই অগ্নি মূর্তি ধারণ করেন এনামুল। শান্তকে দর্শক বানিয়ে এক প্রান্ত দিয়ে চার-ছক্কায় ফুলঝুড়ি ফুটান এনামুল। এই ৫ ওভারে ৫২ রান পায় আবাহনী। ফলে ১০ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৮২ রানে পৌছে যায় আবাহনী। এ সময় ৪৩ বলে ৫৩ রানে এনামুল ও ১৭ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত।
১৩তম ওভারে প্রথম বলে বিচ্ছিন্ন হন এনামুল ও শান্ত। ভারতের অফ-স্পিনার পারভেজ রসুলের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৫৭ রানে থামেন এনামুল। তার ৫১ বলের ইনিংসে ৮টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল।
দলীয় ৯২ রানে এনামুলের বিদায়ের পর মিডল-অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান ভারতের হানুমা বিহারি ৬ ও উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিথুন ১ রান করে বিদায় নিলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় আবাহনী। তবে আবাহনীকে বেশিক্ষণ চাপে থাকতে দেননি শান্ত ও অধিনায়ক নাসির হোসেন। শক্ত হাতে চতুর্থ উইকেটে হাল ধরেন তারা। দ্রুত উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে আবাহনীর রান বড় করতে থাকেন শান্ত ও নাসির। সেই সাথে নিজের স্কোরটাও।
ইনিংসের ৪২তম ওভারে এক সাথেই সেঞ্চুরির স্বাদ নেন শান্ত ও নাসির। এবারের লিগে শান্ত এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি হলেও প্রথমবারের মত তিন অংকে পা রাখেন নাসির। সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে দলীয় ৩১০ রানে থামেন নাসির। ১৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৯১ বলে ১২৯ রান করেন নাসির। শান্ত’র সাথে চতুর্থ উইকেটে ১৮৭ রান যোগ করেন নাসির।
অধিনায়কের বিদায়ের পর থামতে হয় শান্তকেও। ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৭ বলে ১১৩ রান নামের পাশে রাখতে পারেন তিনি। সেই সাথে এবারের লিগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হয়ে যান শান্ত। লিগে ১৬ ম্যাচে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ ৭৪৯ রান করেছেন তিনি।
শান্ত-নাসিরের আউটের আবাহনীর স্কোর বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু মাত্র ১৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি মোসাদ্দেক-মিরাজ জুটি। ৪৯ দশমিক ২ ওভারে আউট হন মিরাজ। ৭ বলে মাত্র ৭ রান করেন তিনি। এ সময় দলের রান ৩৪৪।
মিরাজের ফিরে যাওয়ায় উইকেটে যাবার সুযোগ ঘটে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। ব্যাট হাতে নেমেই ঝড় তুলেন তিনি। মাত্র ৮ বল খেলার সুযোগ পেয়ে ৪টি ছক্কা হাঁকান ম্যাশ। তার নামের পাশে সাড়ে তিনশ’ স্ট্রাইক রেটে ২৮ রান জলজল করছিল। শেষদিকে মাশরাফির এমন তান্ডবে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রানের পাহাড় সমান সংগ্রহ পায় আবাহনী। রূপগঞ্জের রসুল ৪২ রানে ৩ উইকেট নেন।
৩৭৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শূন্য রানে প্রথম ও ৪১ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। এরপর দলকে প্রাথমিক ধাক্কা থেকে মুক্ত করেন মোহাম্মদ নাইম ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দু’জনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় আবাহনীকে যোগ্য জবাব দেয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে রূপগঞ্জ।
কিন্তু নাইম ও মুশফিক হাফ-সেঞ্চুরি করে বিদায় নিলে ম্যাচ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায় রূপগঞ্জ। নাইম ৫৪ বলে ৭০ ও মুশফিক ৬৬ বলে ৬৭ রান করেন। নাইম-মুশফিকুরকে শিকার করেন আবাহনীর অধিনায়ক নাসির। এরপর অধিনায়কের হাত ধরেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় আবাহনী।
আবাহনীর নিয়ন্ত্রণে রূপগঞ্জের পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা খেই হারিয়ে ফেলে। ফলে শেষ পর্যন্ত ৪৪ বল বাকি থাকতে ২৮০ রানে গুটিয়ে যায় দলটি।
নাইম-মুশফিকের পর এক প্রান্ত আগলে লড়াই করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন অধিনায়ক নাইম ইসলাম। যোগ্য সহায়তা না পেয়ে দলের হার রুখতে পারেননি তিনি। ৬৮ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেন নাইম। আবাহনীর পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন মিরাজ-সানজামুল-নাসির ও সন্দীপ।
ঢাকার শীর্ষ লিগ ক্রিকেটে আবাহনীর এটি ১৯তম শিরোপা। আগের ম্যাচেই তারা ৩৯৩ রানের রেকর্ড গড়েছিল। আজকের ৩৭৪ রান হলো বাংলাদেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরটিও (৩৭১) আবাহনীর দখলে।
১২৯ রান করে শেষ ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়েছেন অধিনায়ক নাসির। ১৬ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরিসহ ৭৪৯ রান করে শীর্ষ রানসংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার সমানসংখ্যক ম্যাচে ৩৯ উইকেট নিয়ে শীর্ষ বোলার আবাহনী পেসার মাশরাফি।