কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঁশের ব্যাট, ক্রিকেটারদের ‌‘নতুন স্বপ্ন’

ক্রিকেট, শব্দটা শুনলেই চোখে ভাসে ব্যাট-বলের লড়াই। সেখানে একপক্ষ চামড়ার তৈরি বল করে আর অন্যপক্ষের দু’জন কাঠের তৈরি ব্যাট দিয়ে ব্যাটিং করেন। ক্রিকেটের এই দৃশ্য অপরিবর্তিত থাকলেও পাল্টে যেতে ব্যাটারের হাতের ব্যাট। কাঠের জায়গা দখল করতে পারে বাঁশ। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি করেছেন বাঁশের ক্রিকেট ব্যাট।

ল্যামিনেটেড বাঁশের এই ব্যাট বর্তমানের উইলো কাঠের তৈরি ব্যাট থেকে বেশি মজবুত। এছাড়া দামে সস্তা এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর না। গবেষকদের দাবি, এর ‘সুইট স্পট’ অর্থাৎ ব্যাটের মধ্যভাগে বলের সাথে সংযোগের জায়গাও অনেক বেশি।

কেমব্রিজের সেন্টার ফর ন্যাচারাল মেটেরিয়াল ইনোভেশনের ড. ডার্শিল শাহ বলেছেন, ‘এই বাঁশের ব্যাট ব্যাটারদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে। বাঁশের ব্যাটের সুইট স্পট দিয়ে ইয়র্কার থেকে চার মারা কোন ব্যাপারই না। সবধরনের স্ট্রোকেই এটা কাজে দেবে।’

ড. শাহ এবং বেন টিঙ্কলার ডেভিস মিলে বাঁশের এই প্রোটোটাইপ ব্যাট তৈরি করেছেন। জার্নাল অফ স্পোর্টস এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি সাময়িকীতে এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়, উইলো কাঠের তুলনায় বাঁশের ব্যাট ২২ শতাংশ বেশি মজবুত। ফলে ব্যাটে বল লাগার পর এর গতি বেড়ে যায়। তবে উইলোর তৈরি ব্যাটের তুলনায় বাঁশের ব্যাট ৪০ শতাংশ বেশি ভারী। তবে গবেষকরা বলছেন, ব্লেডের ওজন তারা কমিয়ে আনতে পারবেন।

এছাড়া উইলো ব্যাটের সাথে বলের সংযোগের পর ব্যাটসম্যান যে কম্পন অনুভব করেন, বাঁশের ব্যাটের ক্ষেত্রেও কোনো হেরফের ঘটবে না বলেও তারা দাবি করছেন।

এদিকে, ভালো মানের উইলো কাঠ ক্রমশই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, উইলো গাছ বড় হতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগে। সেই তুলনায় ‘মেসো’ জাতের বাঁশ পাকতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় বছর। সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় এই বাঁশ প্রচুর জন্মে।

এদিকে, বাঁশ দিয়ে ব্যাট তৈরি করলেই তা নিয়ে মাঠে নামতে পারবে না ক্রিকেটররা। এর জন্য ক্রিকেটের আইনও পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, আইন অনুযায়ী, ক্রিকেট ব্যাটের ব্লেড তৈরি হতে হয় শুধুমাত্র কাঠ দিয়ে।

ব্যাটের গঠন প্রকৃতি নির্ধারণ করে লন্ডনের মার্লিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ফলে ভবিষ্যতে বাঁশের ব্যাট দিয়ে খেলতে হলে এমসিসির সেই আইনে পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, বাঁশ কাঠ নয়, এটা বিশেষ জাতের ঘাস।

তবে ড. ডার্শিল শাহ বলছেন, বিষয়টি নিয়ে এমসিসিকে ভাবতে হবে। একই সাথে তিনি মনে করেন, বাঁশের ব্যবহার নিয়ে খুব একটা বিতর্ক হবে না। কারণ, ব্যাটের হাতলে বেত ব্যবহার করা হয়, যেটি বাঁশেরই একটি জাত।