২০১১ সালের দিকে নাসির হোসেন, লোয়ার মিডল অর্ডারে এসেই দেখালেন দুয়েক ঝলক। নামের পাশে ফিনিশার তকমাটাও যুগিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কখনো কখনো এ দায়িত্ব পালন করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সম্ভাবনা জাগিয়েছিল সাব্বির রহমানের কয়েকটি ঝড়। তবে স্থায়িত্ব নেই কারোরই।
এ কয়েক বছরে একজন ধোনি কিংবা হালের জোস বাটলার তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। যিনি ক্রিজে এসে ম্যাচ খেলবেন, হুটহাট রান তুলে দলকে জেতাবেন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এ দায়িত্বে অনেক জনকেই পরখ করেছে বোর্ড। কোনো স্থায়ী ফল আসেনি। তবে কি এবার খোঁজাখুঁজির সেই রাডারে শামীম পাটুয়ারী ধরা পড়েছেন? আপাতত বলা যাচ্ছে না। তবে শামীমের ক্রিকেটীয় স্কিল কিন্তু তা-ই ইশারা করছে।
যুব বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার শামীম পাটুয়ারী। টাইগার পাড়ায় এ ক্রিকেটার হৈচৈ ফেললেন কিভাবে? প্রশ্নটা জাগতেই পারে। তবে বিশ্বকাপে যে আহামরি খেলেছেন তা নয়। নজর কেড়েছে তার ক্রিকেটীয় মেধা, স্কিল। বিশেষ করে বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে, ঘরের মাঠে খেলাগুলোয় শামীমের শার্প ক্রিকেটীয় ডিসপ্লে।
এখন শামীমের দায়িত্ব মূলত ফিনিশিংয়ে। অনুর্ধ্ব-১৪ থেকেই পাওয়ার হিটিংয়ের ন্যাচারাল প্রতিভা নিয়ে জন্মানো এই ব্যাটসম্যান বেশ পটু। যেটি ক্লিয়ারলি আবিস্কার হয়েছে চট্টগ্রামে আয়ারল্যান্ড ওলভসের বিপক্ষ প্রথম তিন ওয়ানডেতে। আন্ডার প্রেশারে যেভাবে সাবলীল ব্যাটিং করে দলকে জিতিয়েছেন, তা অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য বলছি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায়।
সাগরিকায় শামীমের সর্বশেষ তিনটি ইনিংস এমন- ২৬ বলে ২২, ৩৯ বলে ৫৩, ২৫ বলে ৪৪। সবকটা ইনিংসেই নট আউট। যেখানে শেষ দুই ম্যাচে দলকে জিতিয়ে সবুজ গালিচা ছেড়েছেন তিনি। ছোটখাটো ইনিংস, তবে দলের প্রয়োজনে মহামূল্যবান। তাতেই যে রাতারাতি ‘ফিনিশার’ বনে গেলেন -এমনটাও ভাবা মুশকিল। তবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আলো দেখাচ্ছে শামীমের স্কিল।
চট্টগ্রামে ব্যাটসম্যান শামীমকে দেখার সুযোগ হয়েছে। কব্জির জোর অনেক। শট সিলেকশনও দারুণ। নিজের জোনে বল পেলে সীমানা পার করতে পারেন। ভালো লেন্থের বলও জায়গায় দাঁড়িয়ে মারতে পারেন। শামীমের ব্যাট চালানো দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি, যেন তিনি জাদুকর। বল মাটিতে পড়ার আগেই জানতেন তিনি! বল রিড করার ক্ষমতা যাকে বলে। চোখের তীক্ষ্ণতা, কো-অর্ডিনেশন পাওয়ার নিয়ে জন্মানো ব্যাটসম্যান।
একজন ব্যাটসম্যানের জন্য এটা বিরাট ব্যাপার। সচরাচর এমন ব্যাটসম্যানের দেখা মেলে না খুব বেশি। ক্রিকেট বোদ্ধাদের কাছে বাকি সব ব্যাটসম্যানের চেয়ে বল দেখার জন্য কয়েক সেকেন্ড বেশি সময় পান ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। কেন জানেন? এ কো-অর্ডিনেশন পাওয়ার। শামীমের আছে যে গুণ। বাংলাদেশে দ্বিতীয়জন খুঁজে পেতে আপনি স্রেফ হিমশিম খাবেন!
ছয় নম্বরে ব্যাট করা চ্যালেঞ্জিং। কখনো দ্রুত রান তোলা, কখনো ইনিংস বিল্ডাপ করে রানের গতি বাড়ানো। একই পজিশন, ভিন্ন ভিন্ন সিচুয়েশন। তবে এটাকেই নাকি উপভোগ করছেন এ উদীয়মান ক্রিকেটার। সম্প্রতি জানিয়েছেন তিনি নিজেই। ‘অনুর্ধ্ব-১৯ থেকে আমাকে এই রুল দেওয়া হয়েছে। শুরুতে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও এখন বেশ উপভোগ করছি। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার অনুভূতিটাই আলাদা’ -বলছিলেন শামীম পাটুয়ারী।
পজিশনের চাহিদা বুঝে খেলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শামীম। জানান, ‘আমি এখন এভাবেই নিজেকে তৈরি করছি। আমি জানি, এখানে আমাকে প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন সিচুয়েশনে ব্যাট করতে হবে। আমি ইনিংস তৈরিও করতে পারি। ধীরে আস্তে খেলতেও অভ্যাস্ত। সবমিলিয়ে এই পজিশনটা আমার জন্য পারফেক্ট মনে করছি। আমি সেভাবে তৈরি হচ্ছি।’
ফিল্ডিং এবং বোলিংয়েও সার্ভিস দিতে পারেন শামীম। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারের নাম শামীম। সে তকমাটা এসেছে গেল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ থেকে। শামীমের ক্ষীপ্রতা, ফাস্টেস্ট থ্রোয়িং, বল ট্যাকল করা। সবমিলিয়ে সার্কেলে যে নৈপূণ্য দেখিয়েছেন শামীমের তুলনায় বাংলাদেশে আর কাউকে পাওয়া মুশকিল।
বোলিংটাও ভালো করেন। লিমিটেড ওভারে দারুণ কার্যকর। তিন বিভাগে অসাধারণ। প্রতিভার কমতি নেই। একদম ন্যাচারাল ক্রিকেটীয় মেধা যাকে বলে, তার প্রমাণই শামীম। এখনো অনেক পথ পাড়ি দেবার, নিজেকে গড়ার। সুনিপুণ পরিকল্পনায় শামীম পাটুয়ারী হতে পারেন টাইগার ক্রিকেটের জন্য একটি কমপ্লিট প্যাকেজ। যা হন্য হয়ে খুঁজছে বোর্ড, দল এবং টাইগারপ্রেমীরা।
[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]