ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৫তম আসরের পর্দা নেমেছে। অভিষেকেই শিরোপা ঘরে তুলেছে গুজরাট টাইটান্স। আইপিএলে এবার প্রথমবারের মতো আট দলের সাথে যোগ হয়েছে গুজরাট টাইটান্স ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস।
সদ্য শেষ হওয়া ১৫তম আইপিএলে দর্শকরা সাক্ষী হয়েছেন দারুণ সব পারফর্মেন্সের। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে পুরো জমজমাট ছিল এবারের আসর। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে অনেকেই বিমোহিত করেছেন ক্রিকেট প্রেমীদের।
আইপিএলের এবারের আসরে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছেন রাজস্থানের ইংলিশ ওপেনার জস বাটলার। গোলার বেগে দারুণ বোলিং করেছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ভারতীয় পেস বোলার উমরান মালিক।
এছাড়া আরও একাধিক ক্রিকেটার দারুণ পারফর্ম করে চমক দেখিয়েছেন। ব্যক্তিগত পুরষ্কারে রাজস্থান রয়্যালস ব্যাটার জস বাটলার করছেন জয়জয়কার। স্বপ্নের মতো কাটানো আইপিএলের এবারের মৌসুমে একাই জিতেছেন তিনটি পুরষ্কার।
চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আইপিএলের ১৫তম আসরে ব্যক্তিগত পুরষ্কারগুলো কারা জিতলেন-
অরেঞ্জ ক্যাপ (সর্বোচ্চ রান)
আইপিলের ইতিহাসে নির্দিষ্ট আসরে এবার অন্যতম সেরা ব্যাটিং করেছেন রাজস্থানের ব্যাটার জস বাটলার। বলতে গেলে রাজস্থানকে একা হাতেই ফাইনালে তুলেছেন ইংলিশ এ ক্রিকেটার।
১৭ ম্যাচে বাটলারের সংগ্রহ ৮৬৩ রান। আর এতেই অরেঞ্জ ক্যাপ জিতেছেন তিনি। অবশ্য পুরো মৌসুমের অধিকাংশ সময়েই ‘অরেঞ্জ ক্যাপ’ পড়েই খেলেছেন বাটলার। যদিও ফাইনালে দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।
সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলের ১৫তম আসরে ব্যাট হাতে বার সংগ্রহের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক কে এল রাহুল. তার সংগ্রহ ৬১৬।
সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি
আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পর এখানেও বাজিমাত করেছেন রাজস্থান ওপেনার জস বাটলার। পুরো আসরে ৮৩টি চারের সাথে ৪৫টি ছক্কা হাকিয়েছেন তিনি।
এছাড়া পাঁচটি সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাটলার। রানের পর সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারির পুরষ্কারটাও তার হাতেই উঠেছে।
সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়
রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে এবারে আইপিলে জস বাটলারের ব্যাট যেন একটু বেশিই চওড়া হয়ে গিয়েছিল। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে বাটলারের সংগ্রহ ৮৬৩ রান। রয়্যালস শিবিরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের ৪৫৮।
তবে বাটলার এ আসরে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছেন। সেখানে রয়্যালসের আর কেউ সেঞ্চুরিই করতে পারেনি। ফলে সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটাও বাটলারেরই প্রাপ্য এবং সেটা তিনি পেয়েছেনও।
পারপল ক্যাপ (সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী)
সাত বছর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরুতে কাটানোর পর এবার আর যুজবেন্দ্র চাহালকে ধরে রাখেনি ফ্রাঞ্চাইজিটি। তাকে রিটেইন না করে যে ফ্রাঞ্চাইজি ভুল করেছে সেটাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন এ লেগ স্পিনার।
রাজস্থান রয়্যালসের এবারের আসরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছিলেন চাহাল। পুরো মৌসুমে ২৭টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এ পথে তার সবচেয়ে কাছের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ব্যাঙ্গালোরুর শ্রীলঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। লঙ্কান এ স্পিনার শিকার করেছেন ২৬ উইকেট। তবে শেষ পর্যন্ত পারপল ক্যাপ উঠেছে চাহালের মাথায়।
সবচেয়ে দ্রুত গতির ডেলিভারি
আইপিএলের ১৫তম আসরে জোড়ে বল করার ক্ষেত্রে রীতিমত পাল্লা দিয়েছেন লকি ফার্গুসন ও উমরান মালিক। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের উমরান তো প্রায় প্রতি ম্যাচেই জোরে বল করার পুরষ্কার জিতেছেন। এমনকি আজকে রেকর্ড গড়ে পরের দিন আবার নিজের রেকর্ড ভেঙেছেন।
টুর্নামেন্টে থেকে উমরানের দল হায়দরাবাদ আগেই বাদ পড়ায় সবচেয়ে দ্রুত গতির বল করার সুযোগ ছিল ফার্গুসনের সামনে। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন গুজরাটের কিউই বোলার।
ফাইনালের আগ পর্যন্ত উমরানের করা ঘণ্টায় ১৫৭ কি.মি. গতিতে করা ডেলিভারিই ছিল সর্বোচ্চ। তবে ফাইনালে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন ফার্গুসন। ১৫৭.৩ কি.মি. গতিতে বল করে পুরষ্কারটা বাগিয়ে নেন লকি ফার্গুসন।
টুর্নামেন্ট সেরা ক্যাচ
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ খেলেছিল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্ট। লক্ষ্ণৌর দেওয়া ২১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছিল কলকাতা। ওই ম্যাচে ১৪ বলে ৪৯ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন নাইট ব্যাটার রিংকু সিং।
ম্যাচের শেষ ওভারে মার্কাস স্টয়নিসের বলে এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন রিংকু। শট খেলার পর মনে হচ্ছিল বল মাঠের ফাঁকা জায়গায় পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে ছুটে আসেন লক্ষ্ণৌর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার এভিন লুইজ।
ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে চিতা বাঘের মতো ছুটে এসে পুরো শরীর দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলকে বাম হাতের তালুবন্দী করেন। অবিশ্বাস্য এ ক্যাচের জন্য টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচের পুরষ্কারও লুইজই হাতে উঠেছে।
ইমার্জিং খেলোয়াড়
আইপিএলে তরুণ প্রতিবাভান ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স অনুযায়ী ইমার্জিং খেলোয়াড়ের পুরষ্কার দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্য আসর শুরুর সময়ে ১৯৯৬ সালের ১ এপ্রিলের পর জন্ম নিতে হবে। জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি টেস্ট ও ২০টি ওয়ানডে বা তার কম খেলতে হবে এবং আইপিলের ২৫টি বা তার কম ম্যাচ খেলতে হবে।
এবারের আইপিএলে জোরে বল করে সবার নজর কেঁড়েছেন হায়দরাবাদের কাশ্মিরী পেসার উমরান মালিক। ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেক ম্যাচেই তার হাত থেকে গোলার মতো গতিতে বল ছুটেছে ব্যাটারের দিকে। শুধু জোরে বল করেছেন এমন নয়, আসরে ২২টি উইকেটও শিকার করেছেন তরুণ এ পেসার। এসবের ফলস্বরুপ আইপিএল কর্তৃপক্ষ আসরের সেরা তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে তাকেই বেঁছে নিয়েছে।
সুপার স্ট্রাইকার অফ দ্য সিজন
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএলের এবারের আসরে ভারতীয় ব্যাটার দীনেশ কার্তিক যা করেছেন তা অবিশ্বাস্য! ডেথ ওভারে কার্তিকের ব্যাট কচুকাটা করেছে প্রতিপক্ষের বোলারদের এবং সেটাও আবার ধারাবাহিকভাবে।
এবারের আসরে ৩৬ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটার ১৬ ম্যাচে ৩৩০ রান করেছেন। অধিকাংশ ম্যাচেই ব্যাট করতে নেমেছেন ১৫তম ওভার বা তারও পরে। নেমেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলে আরসিবিকে পৌঁছে দিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
১৮৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করার কার্তিককের হাতে স্বাভাবিকভাবেেউঠেছে মৌসুমের সুপার স্ট্রাইকার পুরষ্কার।
ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড
আইপিএলের প্রত্যেক ম্যাচেই প্রতি দলকে ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডের পয়েন্ট দেওয়া হয়। ফাইনাল শেষে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া দল ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড জিতে।
এবার আসরে এ তালিকায় ১৭০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিল রানার্সআপ হওয়া রাজস্থান রয়্যালস। ফলে ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডের পুরষ্কারটি সঞ্জু স্যামসনের দলই জিতেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়া গুজরাটের সংগ্রহ ছিল ১৬৬ পয়েন্ট।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি/আরএস