ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ১৫তম আসর দেখলো রোমাঞ্চে ভরা সাতটি দিন। এই সাত দিনে বিদেশী তারকাদের চেয়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররাই প্রভাব বিস্তার করেছেন বেশি। আইপিএলের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, এই আসরের মাধ্যমে প্রতিবারই ভারত থেকে অনেক প্রতিভাবান উঠে আসে।
এই প্রতিভাবানরাই পরবর্তীতে বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করে। এবারের আসরের এমন পাঁচজন তরুণের দিকে আলো ফেলা যাক। যারা সবাই পেসার। একবার অনুভব করা যাক যাক তাদের আলোকছটার স্পর্শ।
আরশদ্বীপ সিং (পাঞ্জাব কিংস)
২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার আরশদ্বীপ সিং। গত তিন বছর ধরেই পাঞ্জাব কিংসের হয়ে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী পারফর্ম্যান্স করে যাচ্ছেন এই তরুণ। পরিপক্কতা এবং দক্ষতা দিয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। ভারতের হয়ে ২০১৮ যুব বিশ্বকাপজয়ী আরশদীপ গত মৌসুমে পাঞ্জাবের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেন।
যদিও এখনো ভারতের ক্যাপ মাথায় ওঠেনি আরশদীপের। তবে গত কয়েক বছরে এই টুর্নামেন্টের অন্যতম আবিষ্কার এই তরুণ। এবারের আসরে পাঞ্জাব যে কয়জন খেলোয়াড় ধরে রাখে তাদের একজন এই তরুণ। অন্যজন পাঞ্জাবের অধিনায়ক মায়াঙ্ক আগরওয়াল।
আরশদীপ এখন পর্যন্ত ২৬টি আইপিএল ম্যাচ খেলেছেন। ততে উইকেট নিয়েছেন ৩২টি। এর মধ্যে একটি ফাইফারও রয়েছে তার। পাওয়ারপ্লে হোক আর ডেথ ওভার, আরশদীপ সমান কার্যকরী। এবারের আসরেও দুর্দান্ত বোলিং করে যাচ্ছেন এই পেসার। তার উপরই ভরসা করে আছে শিরোপা প্রত্যাশী পাঞ্জাব কিংস।
বৈভব অরোরা (পাঞ্জাব কিংস)
চেন্নাই কিংসের মতো দলের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচেই চোখ ধাধানো বোলিং করেছেন পাঞ্জাবের এক তরুণ। বোলিং স্পেল ৪-০-২১-২! হয়ে উঠেছিলেন পাঞ্জাবের জয়ের নায়ক। ছেলেটার নাম বৈভব অরোরা। এবারের আসরে যাকে ২০ লাখ রূপিতে কিনেছিল পাঞ্জাব।।
ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন বৈভব। তার সবচেয়ে বড় গুণ বলকে দুই দিকেই সুইং করাতে পারেন। নতুন বলে বোলিং করে ব্যাটারদের ভালোই সমস্যায় ফেলার ক্ষমতা রাখেন বৈভব। এবারের আসরে বন্ধু আরেক পেসার আরশদীপ সিং এর সঙ্গে জুটি বেঁধে ভালোই ভোগাচ্ছেন ব্যাটারদের।
উমরান মালিক (সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ)
উমরান মালিকের নামটা নতুন নয়। ঘন্টায় ১৫০ কিউলোমিটার বেগে বল করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীর থেকে উঠে আসা এই দীর্ঘদেহী তরুণ। আইপিএলের ১৪তম আসরে ২০২১ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে পরপর পাঁচটি বল করেছিলেন উমরান।
আগের আসরের তার দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ তাকে এই আসরেও ৪ কোটি মূল্য দিয়ে ধরে রেখেছে। গত বছর ঝলক দেখানোর পর উমরানকে নেট বোলার হিসাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিয়ে গিয়েছিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজের জন্য ভারত ‘এ’ দলেও ডাক পেয়েছিলেন তিনি।
ভারতের সীমান্তবর্তী প্রদেশ জম্মু-কাশ্মীর থেকে আইপিএলে খেলা চতুর্থ খেলোয়াড় উমরান। ভারতীয় হিসেবে আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম (১৫২.৫৯) ডেলিভারির রেকর্ড তার। এবারের আসরেও দুর্দান্ত বোলিং করে যাচ্ছে উমরান। এরপরই হয়তো তার গায়ে দেখা দিতে পারে তেরঙ্গাখচিত জার্সি।
আকাশ দ্বীপ (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু)
বিহারের ২৫ বছরের তরুণ আকাশ দ্বীপ। দলের মূল বোলারদের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়েছিলেন শুরুর দু ম্যাচে। তাতে চার উইকেট নিয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। প্রথম ম্যাচে তেমন ভালো না হলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই কলকাতার বিপক্ষে তিন উইকেট নিয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন আকাশ।
বল হাতে দারুণ আকাশ ব্যাট হাতেও কার্যকরী। তবে এখনো ব্যাটিং দক্ষতা দেখানোর সুযোগ হয়নি তার। ব্যাঙ্গালুরুর বড় তারকারা দলে ফিরে এলে আকাশ জায়গা ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যে ঝলক দুই ম্যাচে দেখালেন তাতে তাকে রাখার পক্ষে জোরালো একটা দাবি তুলে গেলেন।
তুষার দেশপান্ডে (চেন্নাই সুপার কিংস)
মুম্বাইতে জন্মগ্রহণকারী তুষার দেশপান্ডকে দুর্ভাগা বলতেই হয়। কেননা দিল্লি ক্যাপিটালসের ডাগআউটেই কাটিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর। এবার শেষ নিলামে তাকে কিনে ভাগ্য খুলে দেয় চেন্নাই সুপার কিংস।
তেমন আহামরি কিছ না হলেও পাওয়ারপ্লে এবং ডেথ ওভার উভয় ক্ষেত্রেই বেশ কার্যকর দেশপান্ডে। এবারের আসরে একটি মাত্র ম্যাচে সুযোগ পেয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সেটা। অভিজ্ঞ চেন্নাই ম্যানেজমেন্ট আগামী ম্যাচগুলোতে তাকে কিভাবের ব্যবহার করে সেটাই এখন দেখার বিষয় হয় দাঁড়াবে।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি